বাংলায় বিক্ষোভের মুখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রী কপিল মোটেশ্বর পাটিলকে কালো পতাকা দেখিয়ে গো-ব্ল্যাক স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখালেন ভুতনি থানার উত্তর চণ্ডিপুর গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা। বুধবার দুপুরে উত্তর চন্ডিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা সহ পঞ্চায়েত স্তরের বিভিন্ন কাজের তদারকিতে যান কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কপিল মোটেশ্বর পাতিল ।
এদিন গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে যেতেই মন্ত্রীর সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, গঙ্গা ভাঙনের জেরে উদ্বাস্তু হয়েছে কয়েকশো পরিবার। তাদের অধিকাংশই আবাস যোজনার সুযোগ পায়নি। এদিন বলা হয়েছিল মন্ত্রী নাকি গ্রামবাসীদের কথা শুনবেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পৌঁছাতেই কাউকে ধারে কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের বক্তব্য, 'মন্ত্রীর সামনে নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারলাম না। তাহলে মন্ত্রীর এখানে এসে কাজ কী।'
নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা এবং পুলিশের সামনেই গ্রামবাসীরা কালো পতাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখান। এমনকী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কনভয়ের সামনে কালো পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা। দীর্ঘচেষ্টার পর ভুতনি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উত্তেজিত জনতার রাস দেখে অবশেষে মন্ত্রী কোনও কথা না বলেই ওই এলাকা ছেড়ে কনভয় নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।
মঙ্গলবার সকালে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনে করে দুই দিনের সফরে মালদায় পৌঁছান কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কপিল মোটেশ্বর পাটিল। মঙ্গলবার দিন বিজেপির মালদা জেলা কার্যালয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। এরপরে ওই দিনই প্রশাসনিক স্তরে বৈঠক করার কথা থাকলেও সেটি বাতিল হয়ে যায়। এরপরই বুধবার দুপুরে পঞ্চায়েত স্তরের কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে মানিকচক বিধানসভা কেন্দ্রের ভুতনি থানার অন্তর্গত উত্তর চন্ডিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইংরেজবাজার বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী, মানিকচকের বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌড় চন্দ্র মণ্ডল সহ অন্যান্যরা।
আরও পড়ুন- ‘এজলাসের সামনে আর বিক্ষোভ নয়’, আশ্বাস শুনে পাল্টা কী বললেন বিচারপতি মান্থা?
স্থানীয় গ্রামবাসীদের বক্তব্য, 'এলাকায় পৌঁছিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সম্বর্ধনা নিতেই ব্যস্ত। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কোনও রকমভাবে তিনি কথা বলেননি । কারো সমস্যার বিষয়ে এতটুকুও জানতেও চাননি। এতেই ক্ষোভ ছড়াতে শুরু করে। নিজের মতো মন্ত্রী এসে পঞ্চায়েত অফিসে দু-একজন বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেই বেরিয়ে চলে যান। তখনই বিক্ষোভের আঁচ মন্ত্রীর সামনে উপচে পড়ে।
বিক্ষোভকারী গ্রামবাসী সাইদুল শেখ, একরামুল শেখদের বক্তব্য, আজকে আমরা গঙ্গার ভাঙ্গনে উদ্বাস্তু। কেন্দ্র সরকারের অন্তর্গত ফারাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জেরে গঙ্গার ভাঙ্গন বিগত দিনে রোধ করা যায়নি । ফলে ভিটেমাটি হারিয়ে বহু পরিবার যে যার মত আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েত স্তরে আবাস যোজনায় আমাদের ঘর পাওয়ার কথা। কিন্তু তা এখনো পায়নি। এই কথায় আমরা মন্ত্রীকে বলতে এসেছিলাম। কিন্তু উনি আমাদের কথাই শুনতে চাননি । নিজের মত পঞ্চায়েত অফিসে এসে গুটি কয়েক সমবর্ধনা নিয়ে বেরিয়ে যান। তাহলে সকাল থেকে আমাদের এই পঞ্চায়েত অফিসে বসিয়ে রাখা হল কেন? তা নিয়েই মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। আমরা চাই না এরকম কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। তার জন্যই মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে কালো পতাকা দেখিয়ে গো-ব্যাক স্লোগান শুনিয়েছে।'
যদিও পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কিছু মানুষের হাত থেকে আবাস যোজনা আবেদন পত্র মন্ত্রী নিজেই তড়িঘড়ি নিয়ে কনভয়ে করে বেরিয়ে পড়েন।
বিজেপির জেলার সাধারণ সম্পাদক তথা মানিকচক বিধানসভা সাংগঠনিক নেতা গৌড় চন্দ্র মণ্ডল জানিয়েছেন , বিক্ষোভ নয় , এখানে মানুষের কথা শুনতে মন্ত্রী এসেছিলেন । কিন্তু তৃণমূলের চক্রান্তে হঠাৎ করে একটা উত্তেজনা পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। মন্ত্রী সকলের কথা শুনেছেন।
মানিকচকের তৃণমূল দলের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র বলেন, 'রাজ্য সরকারের উন্নয়নের জেরেই আজ ভুতনির সেতু তৈরি হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হয়েছে। মানুষ ঘর পাচ্ছে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিজেপির অযথা এলাকায় উত্তেজনা তৈরি এই পরিকল্পনা করেছিল। মানুষ উন্নয়নের পক্ষে আছে বলেই তারা তাদের মতামত পেশ করেছে।'