শ্রীরামপুরে ছুটে চলেছে বন্দে ভারত! হ্যাঁ এমনই এক কাণ্ডে রীতিমত শোরগোল পড়ে গিয়েছে রথের শহরে। শহরেরই এক পুরোহিত বানিয়ে ফেলেছেন হুবহু বন্দে ভারত ট্রেনের মডেল। তা দেখতে উপচে পড়ছে ভিড়। নিজের এমন কৃতিত্বকে খুবই সাধারণ ভাবেই দেখছেন পেশায় পুরোহিত প্রভাস আচার্য।
ছোট থেকে ভাল লাগত ট্রেনের গতি। লাইনের ওপর দিয়ে কীভাবে ছুটে চলে আস্ত ট্রেন তা ভাবাত প্রভাসবাবুকে। সেই থেকে নিজের হাতে তৈরি ট্রেন ছোটানোর ইচ্ছে। সেই ইচ্ছে থেকে গত বছর প্রভাসবাবু তৈরি করে ফেলেন এক আস্ত লোকাল ট্রেনের মডেল। যা দিব্যি লাইনে ছুটে বেড়াচ্ছে। সেই থেকেই সংবাদ শিরোনামে আসেন ৬০ ঊর্ধ্ব এই বৃদ্ধ পুরোহিত। প্রভাস বাবু বলেন, 'সেই লোকাল ট্রেনের মডেল বানিয়ে এত সাড়া পেয়েছি যা আমাকে বিশেষ বন্দে-ভারত ট্রেন বানাতে অনেকটাই উদ্ধুব্ধ করেছে' ।
শ্রীরামপুরের ঝাউতলায় একচিলতে ঘর। সেখানেই 'রেলের কারখানা' গড়েছেন তিনি। বাড়িতে ঢুকতেই নজরে পড়ল একের পর এক রেলের কামরা ছড়ানো ছেটানো। লাইনে কাজ চলছে। প্রতিদিনের পুজো সেরে হাত একটু খালি হতেই চলে ট্রেন বানানোর যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা। প্রভাসবাবুর এমন কৃতিত্ব উচ্ছ্বসিত স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূ।
দীর্ঘ আটমাসের চেষ্টায় ১৩ হাজার টাকা খরচে তৈরি করেছেন এই বন্দে ভারত ট্রেন। লাইনে ঝড়ের বেগে ছুটে চলেছে এই ট্রেন। পাশাপাশি ট্র্যাক চেঞ্জ করতেও দেখা যাচ্ছে এই বন্দে ভারত মডেলকে। তাঁর এই বন্দে ভারত ট্রেন দেখতে সকাল থেকে দূরদূরান্তের মানুষ বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। হাসি মুখেই তাঁদের সকলকে ট্রেনের খুঁটিনাটি বোঝাচ্ছেন প্রভাসবাবু।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে একান্তে কথা বলার সময় প্রভাসবাবু বলেন, "ছোট থেকে রেলের প্রতি আমার অগাধ ভালবাসা। ছোটবেলায় লাইনের ধারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে ভাবতাম কীভাবে আস্ত একটা ট্রেন লাইনে ছুটে চলেছে। সেই থেকেই নিজের হাতে ডেমো ট্রেনের মডেল বানানোর ইচ্ছা ছিল। সামান্য একজন পুরোহিত হয়ে সংসার চালিয়ে হাতখরচ বাঁচিয়ে আমি প্রথম তৈরি করি লোকাল ট্রেনের মডেল। যা অনেকেই অবাক করে। এরপর বন্দে ভারত আমার দ্বিতীয় প্রয়াস। আমার মাথার আরও নানান প্ল্যানিং রয়েছে। তবে অর্থাভাবে এগোতে পারি না। তবে ভবিষ্যতে আমি স্টিম ইঞ্জিন বানানোর বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ"।
তিনি আরও বলেন, "আমি কর্মাসের ছাত্র হয়েও এই ধরণের কাজ করছি। যারা সায়েন্সের ছাত্র আমি চাই আমার এই কাজ দেখে তারাও নতুন নতুন কিছু তৈরি করুক। নিজের হাতের তৈরি কাজের মধ্যে যে তৃপ্তি রয়েছে তার স্বাদ পাক তরুণ প্রজন্ম। পাশাপাশি রেলের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ আমার তৈরি এই মডেল যদি রেল মিউজিয়ামে জায়গা পায় তাহলে আমি রেলের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো। যাতে আগামী প্রজন্ম আমার এই হাতের কাজের সাক্ষী হয়ে থাকতে পারে"।