Advertisment

মানুষ, আর মানুষ, ভ্যানিস সামাজিক দূরত্ব

রাজ্যে সব থেকে বেশি সংক্রমণ কলকাতায় ও তারপরে হাওড়ায়। তাছাড়া রাজ্যের সমস্ত জেলাতেই করোনা থাবা বসিয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
unlock 1

ফের লোকারণ্য কলকাতা। ‘আনলক ১’-এর প্রথম দিন কলকাতার রাস্তার চিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেল। সোমবার সপ্তাহ ও মাসের প্রথম দিন। সাধারণ সময়ে এই ব্যস্ততা থাকে চরমে। কিন্তু দীর্ঘ লকডাউনে সেসব অতীত হয়ে গেল, আজকে আবার তা ফিরে এল। পথে বেরিয়ে মনে হচ্ছে, যেন একেবারে লকডাউন পূর্ব কলকাতার স্বাভাবিক চিত্র। রাস্তায় বেসরকারি বাস না থাকলেও প্রাইভেট গাড়িতে ছয়লাপ। কোনও কোনও সরকারি বাসস্ট্যান্ডে সকালে থেকে দীর্ঘ লাইন চোখে পড়েছে। অনেক রাস্তায় এদিন যানজটও দেখা যায়। এদিন ফেরি সার্ভিসও চালু হয়ে গিয়েছে। যাত্রী সংখ্যার নিয়ম মেনে কদিন আগেই শুরু হয়েছে অটো পরিষেবা। সরকারি ও বেসরকারি দফতর অনেকাংশেই খুলে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বেলা গড়াতেই ভিড় বেড়েছে রাস্তায়। দমদমে নেতাজি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর চত্বরেও এদিন ভিড় ছিল অন্য় দিনের তুলনায় অনেকটাই বেশি। বেশিরভাগ উড়ান সংস্থাই তাদের অফিস খুলে দিয়েছে। টিকিট কাউন্টারে বা চেকিং কাউন্টারেও যথেষ্ট ভিড় লক্ষ্য় করা গিয়েছে। কলকাতা থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানের সংখ্য়াও অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। সোমবার হাওড়া স্টেশন চত্বরেও সামাজিক দূরত্ব মানার কোনও চিত্র দেখা যায়নি।

Advertisment

unlock 1 সোমবার কলকাতার রাস্তায় বাসের লাইনে যাত্রীরা। ছবি- অরুনিমা কর্মকার

বলে রাখা যাক, পঞ্চম দফার লকডাউনে নানা ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংক্রমণ হয়েছে রাজ্যে। ৩৭১ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। রাজ্যে সব থেকে বেশি সংক্রমণ কলকাতায় ও তারপরে হাওড়ায়। তাছাড়া রাজ্যের সমস্ত জেলাতেই করোনা থাবা বসিয়েছে।

এদিন মহানগরে মানুষজন পরিহবণের জন্য় চার চাকার ওপর বেশি নির্ভর করেছে। ধর্মতলা থেকে সেন্ট্রাল অ্য়াভেনিউর দিকে হুহু করে গাড়ি চলেছে। তবে ধর্মতলা চত্বরে বড় দোকান বা ফুটপাতের অনেক দোকান এখনও বন্ধ রয়েছে। সোমবারই কিছু ফুটপাতের দোকান খুলেছে।

unlock dharmatala সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিন ধর্মতলা চত্বর। ছবি- রাজিত দাস

এদিন কলকাতার রাস্তা, বাজার-হাটের চিত্র থেকে স্পষ্ট যে অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক দূরত্ব থাকছে না ছিটোফোঁটাও। যেভাবে এদিন বাড়ির বাইরে মানুষ বেরিয়েছে তাতে সামাজিক দূরত্ব রাখা কতটা সম্ভব সেই প্রশ্নও সঙ্গত।

unlock 1 রাস্তায় ছিল দুচাকার গাড়ির দাপটও। ছবি- অরুনিমা কর্মকার

আমফানের তান্ডব লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল শহর কলকাতাকে। ঝড়ে পাঁচ হাজারের বেশি গাছ পড়ে কলকাতাবাসীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। কলকাতা কর্পোরেশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খোদ তৃণমূলের মন্ত্রী। যা নিয়ে তোলপাড় হয়ে যায় রাজনৈতিক মহল। এখনও অনেক জায়গায় ভেঙে পড়া গাছ কাটার কাজ চলছে।

unlock kolkata tree এখনও গাছ কেটে সরানোর কাজ চলছে। ছবি- রাজিত দাস

কলেজস্ট্রিটের বই পাড়ায় এখনও এদিন অনেক দোকান বন্ধ ছিল। কয়েকটি দোকান খুললেই দোকানীরা হা-পিত্য়েস করে বসেছিল। দীর্ঘ লকডাউন ও আমফানের ঝড়ের ফলে প্রভূত ক্ষতির মুখে পড়তে হয়ে এখানকার ব্য়বসায়ীদের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই চত্বর এখনও অনেকটাই শুনশান।

unlock kolkata colleg street কলেজস্ট্রিটে খুলেছে বইয়ের দোকান। নেই বই কেনার লোক। ছবি- রাজিত দাস

এদিকে এদিন বেসরকারি বাস ও মিনিবাস রাস্তায় নামেনি। বাস মালিক সংগঠনগুলি বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাসের ভাড়া বৃদ্ধি এবং সরকারি আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানিয়েছে তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘স্ট্যান্ডিং যাত্রী’ ছাড়া বাসে লাভ হবে না। সে ক্ষেত্রে সরকারকে বাসের ভাড়া বাড়াতে হবে। মঙ্গলবার তাঁরা কসবার পরিবহণ দফতরে দাবি-দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি জমা দেবেন। বাসের ভাড়া কত হতে পারে সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন বাস মালিক সংগঠনের কর্তারা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দোকান-পাটও খোলা হয়েছে। সোমবার কলকাতার বিভিন্ন মার্কেট চত্বরও খুলে গিয়েছে। এদিন শহরতলিতেও রাস্তা, বাজারে ভিড় লক্ষ্য করা গিয়েছে।

unlock barasat বারাসাতে বেসরকারি বাসে উপছে পড়া ভিড়। ছবি- শশী ঘোষ

শহরতলিতেও এদিন রাস্তাঘাটে ভিড়ের চিত্র ছিল অন্য় দিনের তুলনায় পৃথক। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতে অল্প সংখ্য়ক বেসরকারি বাস এদিন পথে নমেছে। বাসের চালক ও কন্ডাক্টরদের কথায়, সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। বাস না চললে খাবার জুটবে কী করে?

barasat unlock pic kali temple মায়ের কাছে প্রার্থনা ভক্তের। ছবি- শশী ঘোষ

এদিন থেকে মন্দির, মসজিদ খোলা যাবে বলে সরকারি ঘোষণা করেছে। কলকাতার বেশ কিছু মন্দির খুলেছে। আবার কিছু মন্দির এদিনও বন্ধ রাখা হয়েছে। খুলে যাওয়া মন্দিরে সামাজিক দূরত্ব বিধি বাজায় রেখে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।

unlock barasat দোকান খুলেছে। কিন্তু খরিদ্দার নেই। ছবি- শশী ঘোষ

দীর্ঘ দিন দোকান খোলা না থাকায় পকেটে টান পড়েছে ছোটখাটো ব্য়বসায়ীদের। টান পড়েছে পেটেও। এদিন বারাসাতে অনেক জায়গায় ফুটপাতের পোষাক-পরিচ্ছদের দোকান খুলেছে। তবে দোকান খুললেও খরিদ্দারের দেখা নেই বললেই চলে।

Lockdown corona
Advertisment