সাধারণ মানুষ নিখরচায় যাতে চিকিৎসা পরিষেবা পান তার জন্য ’স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই ’স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড নিয়ে নজিরবিহীন জালিয়াতির ঘটনা ঘটলো পূর্ব বর্ধমানে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা পরিবারের কারুর অসুস্থ হয়ে পড়া বা অস্ত্রপচারের ঘটনা না ঘটলেও তাঁদের ’স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে মোটা টাকা।
জালিয়াতি চক্রের পাণ্ডা সালেহার বিবি ও তাঁর সহযোগী মুন্সি নূর আলমকেকে সোমবারই গ্রেফতার করেছে কাটোয়া থানার পুলিশ। মুন্সি নূর আলম সম্পর্কে সাহেলার জামাই। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই পুলিশ এদিন বিকালে শহর বর্ধমানের খোসবাগানের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে তল্লাশী চালায়। তল্লাশিতে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু উপভোক্তার নামে থাকা স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড। এই ঘটনা জেলা প্রশাসনিক মহলেও শোরগোল পড়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে ,ধৃত সালেহার বিবির বাড়ি কাটোয়া ১ ব্লকের আলমপুর পঞ্চায়েতের গাঁফুলিয়া গ্রামে। অপর ধৃত মুন্সি নূর আলম সম্পর্কে সালেহারের জামাই। পুলিশ বর্ধমানের ওই নার্সিংহোম থেকে নূর আলমকে এদিন গ্রেফতার করে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ধ্রুব দাস বলেছেন, 'গাঁফুলিয়া গ্রামের বেশকিছু গরিব পরিবারের মহিলার কাছ থেকে তাঁদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড সালেহার নিজের কাছে নিয়ে রাখেন। পরে সালেহার ও তাঁর সহযোগী মিলে জালিয়াতি করে ওইসব মহিলাদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে অনুদানের মোটা টাকা তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশ তদন্তে নামার পর অভিযোগের সত্যতা ধরা পড়লে সালেহা বিবিকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতার করা হয় এই জালিয়াতি কাণ্ডে জড়িত সালেহারের জামাই নূর আলমকেও। জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন জানিয়েছেন , 'এটা বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা। এর তথ্য প্রমাণ আসার পর ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনায় জড়িত কাউকেই ছাড়া হবে না।'
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গাঁফুলিয়া গ্রামে থাকা সালেহার বিবির বাড়ি এদিন ঘেরাও করেন এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা । তা নিয়ে উত্তেজনা চরমে ওঠে । খবর পেয়ে কাটোয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে জানায়, গত দেড়মাস ধরে সালেহার বিবি এলাকার মহিলা ও পুরুষের বলে চলেন
স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তাঁকে জমা দিয়ে বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে গিয়ে চেকআপ করালেই মিলবে ১০ হাজার টাকা । লোভে পড়ে গাঁফুলিয়ার বেশকিছু মহিলা তাদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড সালেহার কাছে জমা দেন।
মেনকা বিবি নামে এক গ্রামবাসী বলেন, 'সালেহা বিবি বলেছিল তাঁর জামাই বর্ধমানের খোসবাগানের একটি নার্সিংহোমে কাজ করে। সেখানে একবার গেলেই হবে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে ১২ হাজার উঠবে। তা থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে যাঁর নামে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তাঁকে।' সালেহারের কথামত মেনকা বিবি সপ্তাহ দুয়েক আগে বর্ধমানের ওই নার্সিংহোমে যান। পরে মেনকা বিবি জানতে পারেন তার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে ৬১,৬০০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। একইভাবে রিজিয়া বিবি নামে এলাকার অপর মহিলা জানতে পারেন তাঁর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে ৭৫,৬০০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার বিষয়টি মেনকা বিবি ও রিজিয়া স্থানীয় পঞ্চায়েতে গিয়ে জানান। পঞ্চায়েতের এক কর্মী ওই দুই মহিলার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড খতিয়ে দেখেন। অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ মেলে। পঞ্চায়েত কর্মী এমনটা জানিয়ে দেওয়ার পর এদিন এলাকার লোকজন টাকা ফেরতের দাবিতে সালেহা বিবির বাড়িতে চড়াও হন । ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে , ১০ হাজার টাকার টোপ দিয়ে সালেহার বিবি ও তাঁর জামাই নূর আলম ৩৫ থেকে ৪০ জনের কাছ থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা জালিয়াতি করেছে ।
জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন , 'আমরাও প্রশাসনিক ভাবে এই ঘটনা বিষয়ে তদন্ত করবো।' অন্যদিকে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন , 'ঘটনার কথা শুনেছি । এই বিষয়ে সবিস্তার খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।'