কালীঘাট-হাজরার আন্দোলন তখন ছত্রভঙ্গ। কিন্তু রণে ভঙ্গ দিতে নারাজ ২০১৪ সালের উচ্চপ্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। বেলা ২.১৫ নাগাদ চাকরিপ্রার্থী আন্দোলনকারীদের কয়েকজন নিয়োগের দাবিতে পৌঁছে যান হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রিটে। এই রাস্তা ধরে কিছুটা এগোলেই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি। আন্দোলনকারীদের দেখেই তৎপরতার সঙ্গে সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু, ফের একবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি চারপাশের সুরক্ষা িয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। কীভাবে নিরাপত্তাবেষ্টনী আতিক্রম করে বিক্ষোভকারীরা হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রিটে পৌঁছে গেল তা নিয়েই প্রশ্ন লালবাজারের।
এর আগে চাকরির দাবিতে ফের উত্তপ্ত হয় কলকাতার রাজপথ। এবার নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভে ২০১৪ সালের উচ্চপ্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। কালীঘাট, হাজরা চত্বরে বুধবার দুপুরে আন্দোলন, বিক্ষোভ শুরু করেন চাকরিপ্রার্থীরা। কালীঘাট মেট্রো স্টেশনের দিক থেকে হাজরার দিকে আন্দোলনকারীরা ছুটতে শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। তখনই উত্তেজনা ছড়ায়।
'হয় চাকরি দাও নাহলে রাস্তায় বসতে দাও' স্লোগান তুলে উচ্চপ্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা কালীঘাট, হাজরা এলাকায় পথে বসে পড়েন। কেউ কেউ শুয়েও পড়েন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের তোলার চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তি বাধে। পুলিশ চ্যাংদোলা করে প্রিজন ভ্যানে তোলে বিক্ষোভকারীদের। ঘটনাস্থলে ছিলেন ডিসি সাউথ আকাশ মাঘেরিয়া। তাঁর নির্দেশে পুলিশ বহু আন্দোলনকারীকে বাস, ট্যাক্সিতে তুলে নিয়ে যায়।
চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, সাদা খাতা জমা দিয়ে অযোগ্যরা অর্থের বিনিময়ে চাকরি পেয়েছেন। গত আট বছর ধরে তাঁরা যোগ্য পরীক্ষার্থী হয়েও নিয়োগ পাচ্ছেন না। তাঁদের জীবন থেকে আট বছর চলে গিয়েছে। ধৈর্যচ্যূতি ঘটছে। ফলে বাধ্য হয়েই এবার পথে নেমে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন তাঁরা। আন্দোলন রোধে পুলিশের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের অভিযোগ তোলেন চাকরি প্রার্থীরা।
পুলিশের বিরুদ্ধে এক মহিলা চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগ, 'পুলিশ আমার জামা ছিঁড়েছে, কাপড় তুলে দিচ্ছে। চিমটি, আঁচড় দিয়েছে। চুলের মুঠি ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উপর পুলিশ অত্যাচার করছে। আমরা শিক্ষিকার চাকরির দাবিদার, আর ওরা আমাদের সঙ্গে কি ব্যবহার করছেন দেখুন। আর কত অপমান করবে ওরা?'
এই বিক্ষোভের জেরে দুপুরে রাসবিহারী অ্যাভিনিউতে প্রবল যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় মিনিট পঞ্চাশ এই অবস্থা হয়েছিল। দুপুপ পৌনে দুটো নাগাদ পুলিশ প্রায় সব উচ্চপ্রাথমিকের বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে, দক্ষিণ কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ সব মোড়ে বাহিনী বৃদ্ধি করে পুলিশ।
নিয়োগের দাবিতে পুজোর পর থেকেই প্রায়ই পথে নেমে আন্দোলন করছেন প্রথমিক, উচ্চপ্রাথমিক, এসএসসির চাকরিপ্রার্থীরা। কখনও সল্টলেক, কখনও ধর্মতলা বা দক্ষিণ কলকাতার এক্সাইড মোড়, ক্যামাক স্ট্রিট, হাজরা, কালীঘাট চত্বরে হঠাৎ হঠাৎই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। প্রতিবারই পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের লুকোচুরি চলে। এ দিনও দুপুরে তার অন্যথা হয়নি।
জানা গিয়েছে, এ দিন বিক্ষোভের সম্ভাবনার কথা ভেবেই কালীঘাট মেট্রো স্টেশনের ১ নং দরজার দিকে পুলিশের বাড়তি বাহিনী মোতায়েন ছিল। কিন্তু সেই খবর আগাম পেয়ে যান উচ্চপ্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। ফলে মেট্রোর অন্যান্য গেট থেকে বেরিয়েই তারা কালীঘাটের দিক থেকে রাসবিহীরী অ্যাভিনিউ ধরে হাজরার দিকে ছুটতে শুরু করে। যা থামেতে পুলিশ শুরুতে হিমশিম খেয়ে যায়। ততক্ষণে রাস্তায় বলে, শুয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। পুলিশ তুলতে এলে উত্তেজনা ছড়ায়। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রে আনে।