মাধ্যমিক উত্তীর্ণ এক কিশোরী পরীক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধারকে ঘিরে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া। সকাল থেকেই চোপড়ার ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে স্থানীয় বাসিন্দারা। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে অবরোধ শুরু হয়। অবরোধকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে। একদিকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকটি সরকারি বাস আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। টিয়ার গ্যাসের শেলও নিক্ষেপ করে। এর ফলে গোটা এলাকায় চরম উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিজেপিও অন্যত্র পথ অবরোধ করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাধ্যমিক উত্তীর্ণ কিশোরীর দেহ রবিবার সকালে বাড়ির কিছুটা দূরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এদিন সকাল থেকে মেয়ের কোনও খোঁজ না পাওয়ায় থানায় যাওয়ার উদ্যোগ নেয় পরিবারের সদস্যরা। তখনই খবর আসে রাস্তার পাশে একটি মেয়ের দেহ পাওয়া গিয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, কিশোরীকে গণধর্ষণ করে বিষ খাইয়েই খুন করা হয়েছে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে পথ অবরোধ শুরু হয়। সরকারি বাস, পুলিশ ভ্যানে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। এলাকায় বিশাল পুলিশবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। তবে স্থানীয়রা দাবি করতে থাকে যতক্ষণ না দোষী গ্রেফতার হবে তাদের বিক্ষোভ অবরোধ চলবে। যেখানে মেয়েটির মৃতদেহ পাওয়া যায় সেখানে সাইকেল, মোবাইল ফোন, ছাতা মিলেছে বলে সূত্রের খবর। দফায় দফায় চলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ।
এদিকে জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ঘুমন্ত অবস্থায় ওই কিশোরীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাকে ধর্ষণ করে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনার পিছনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা রয়েছে। এদিকে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, এটা একটা প্রেমঘটিত ঘটনা। কাল রাতে বিষ খেয়েছে। ঘটনার পর থেকে ওই ছেলেটিকে পাওয়া যাচ্ছে না। তদন্ত করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ইসলামপুরে অবস্থানে রাজ্য বিজেপির সহসভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়।
ঘটনার পর চোপড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন রাজ্য বিজেপির সহসভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। চোপড়ায় পুলিশ-জনতা খন্ডযুদ্ধের ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। তাই ফিরে ইসলামপুরে অবস্থানে বসে প্রতিবাদ জানান রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "একজন রাজবংশী ছাত্রীকে নৃশংস ভাবে ধর্ষণ করে হত্যা করা হল। পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। জাতীয় মহিলা কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী মহিলারাই বেশি নির্যাতিত এই রাজ্যে। এতবড় ঘটনার তদন্তের কোনও নির্দেশ দেওয়া হল না। আমরা কিশোরী খুনের সিবিআই তদন্ত চাইছি। আমরা চাই আসামীকে গ্রেফতার করে ফাঁসি দেওয়া হোক। বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজবংশীদের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন