বাংলায় কাজ নেই, তাই বাধ্য হয়ে বাইরে কাজ করতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই ছেলের উদ্ধারের খবর পেয়েছেন লক্ষ্মী পাখিরা। পুরশুড়ার হরিনাখালি গ্রামে সৌভিকের বাড়িতে তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস। বুক থেকে পাথর নেমেছে মায়ের। কিন্তু সেই সঙ্গে আক্ষেপ ঝরে পড়ল তাঁর গলায়। এমন বহু যুবক-যুবতীর মায়ের একই কথা। বাংলায় কাজের অভাবের জন্যই ছেলে-মেয়েকে ভিনরাজ্যে কাজে যেতে হচ্ছে। ঝুঁকির জীবনে বড়ই বেদনা।
Advertisment
মঙ্গলবার উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধারের পরই বাড়িতে ফোন করে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন সৌভিক পাখিরা। তারপর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে মা লক্ষ্মী বললেন, 'আমি বললাম বাবা কেমন আছিস রে…বলল, আমি ঠিক আছি, ১৭ দিন যে টানেলে ছিলাম তার কোনও কিছু নেই। ছেলের হাসিমুখ দেখতে পাচ্ছি, বুক থেকে পাথর নেমে গেল।' এরপরই তাঁর গলায় ঝরে পড়ে আক্ষেপ। বললেন, 'বাংলায় কাজ নেই, তাই বাধ্য হয়ে বাইরে কাজ করতে হচ্ছে। ছেলে ইলেকট্রিক্যাল ডিপ্লোমা করেছে, চাষ করে কি আর সংসার চলে, তাই যেতে হচ্ছে। মা হিসেবে চাই ছেলে এখানেই থাকুক।'
সরকারের কাছে সৌভিকের মায়ের আবেদন, ছেলের যেন এখানেই কাজ পায়। ছেলের হাসি মুখ দেখার পরই, পাড়ার শিব মন্দিরে গিয়ে পুজো দিলেন সৌভিকের মা। ১৭ দিন পর বন্দিদশা কেটেছে কোচবিহারের তুফানগঞ্জের মানিক তালুকদারেরও। মঙ্গলবার সকাল থেকেই পরিবারের চোখ ছিল টিভির পর্দায়। উৎকণ্ঠা, চিন্তায় কাটছিল সময়। খবর আসছিল, সাফল্যের দোরগোড়ায় উদ্ধারকারী দল। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবে সুখবর।
অবশেষে সন্ধেয় উদ্ধারের পর শঙ্খ বাজিয়ে, উলুধ্বনিতে আনন্দ উদযাপন করা হয়। উদ্ধার হওয়ার পর, ভিডিও কলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সুস্থ থাকার কথা জানান মানিক। আর মানিকের ছেলের গলাতেও সেই আক্ষেপ। ''রাজ্যে যদি কাজ থাকত বাইরে কেউ যেত না''। তিনি বললেন, "আমি চাই রাজ্যে শিল্প হোক। শিল্প উন্নত হলে তবেই তো রাজ্য উন্নত হবে।"
মঙ্গলবার সন্ধেয় দীর্ঘ ১৭ দিনের চেষ্টায় আসে সাফল্য। সুড়ঙ্গ থেকে একে একে উদ্ধার করা হয বাংলার ৩ শ্রমিক-সহ ৪১ জনকে। উদ্ধার হওয়ার পর ফোনে কথা বলেন তাঁরা পরিবারের সঙ্গে। কারও তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস, কারও গলায় আক্ষেপ। যদি রাজ্যে কাজ থাকত তাহলে এই প্রাণের ঝুঁকি নিতে হত না।