Advertisment

চূড়ান্ত উদ্যোগী মুখ্যমন্ত্রী! ঢেলে সাজানোর তাকলাগানো ভাবনা বাংলার এই 'বৈষ্ণবতীর্থ'কে

ইতিমধ্যেই এব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।

IE Bangla Web Desk এবং Nilotpal Sil
New Update
Vaishnav Tirtha kulingram of Jamalpur is going to be recognized one of the tourist spots in bengal

ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা বাংলার এই বৈষ্ণতীর্থকে।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে 'শ্রীকৃষ্ণবিজয়' কাব্যের রচয়িতা মালাধর বসুর নাম। শ্রীচৈতন্য দেবের আবির্ভাবের কিছু কাল আগে পূর্ব বর্ধমানের কুলীন গ্রামের ভূমি পুত্র মালাধর বসু এই কাব্য রচনা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে স্বয়ং শ্রীচৈতন্য দেব কুলীনগ্রামে এসে তিন দিন থাকেন বলে উল্লিখিত রয়েছে চৈতন্যমঙ্গল কাব্যে। তাই কুলীনগ্রাম শ্রীচৈতন্য দেবের পদধূলি ধন্য বৈষ্ণব তীর্থস্থান হিসেবেই দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে। এই কুলীনগ্রামই এবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিতে চলেছে। রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ রবিবার কুলীনগ্রামের বিভিন্ন মন্দির ও বৈষ্ণব মঠ ঘুরে দেখার পর সেকথাই জানিয়েছেন। মন্ত্রীর ঘোষণায় খুশি কুলীনগ্রামের বাসিন্দারা।

Advertisment

কুলীনগ্রাম, পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের আবুজহাটী ২ নম্বর পঞ্চায়েতের একটি প্রাচীন জনপদ। পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে এই গ্রামেই মালাধর বসুর জন্ম হয়। তাঁর পৌত্র রমানন্দ বসু ছিলেন চৈতন্যদের খুবই অন্তরঙ্গ। বসু পরিবারের আমন্ত্রণেই চৈতণ্যদেব কুলীনগ্রামে এসেছিলেন বলে শোনা যায়। বসু পরিবারের কৃষ্ণ ভক্তি দেখে খুশি হয়ে চৈতণ্যদেব পুরীর রথের জন্য কুলীনগ্রাম রেশমের পট্টডোরী পাঠানোর দায়িত্ব বসু পরিবারকে দেন।

এই পট্টডোরী অর্থাৎ কাছি দিয়ে পুরীর রথের সঙ্গে বাঁধা হতো জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। এমনকী ওই পট্টডোরী মালার মতো করে এই তিন দেবতার গলায় পরানো হতো। এখন যদিও এই প্রথা থমকে রয়েছে। তবে বহুকাল আগে বসু পরিবার কুলীন গ্রামে যে রথরাত্রা উৎসবের সূচনা করেছিলেন সেই রথযাত্রা উৎসব পালনে কোনও ছেদ পড়েনি।

publive-image
কুলীনগ্রাম পরিদর্শনে রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।

শুধু জগন্নাথ দেবের পুজো-পাঠই নয়, কুলীন গ্রামে আরও অনেক দেব-দেবীর মূর্তি ও মন্দির রয়েছে । তার মধ্যে অন্যতম হল রাজা বল্লাল সেনের আমলে তৈরি গোপাল মন্দির। গোপাল মন্দিরের সামনে রয়েছে একটি বড় জলাশয় যা গোপাল দিঘী নামে পরিচিত। এই দিঘীতে স্নান গঙ্গা স্নানের সমতুল্য বলে ভক্তরা মনে করেন। এছাড়াও কুলীন গ্রামের বিভিন্ন মন্দিরে শিবাণী, মদনগোপাল, গোপেশ্বর, ভুবনেশ্বরী, রঘুনাথ, কৃষ্ণরায়, গোপীনাথ, কালুরায় এবং হরিদাসের আরাধ্য দেবতা গৌরাঙ্গর পুজোপাঠ হয়। প্রতিবছর রথযাত্রা এবং জন্মাষ্টমী তিথিতে ভক্তের ঢল নামে কুলীন গ্রামে। ওই দিনগুলিতে এরাজ্য ছাড়াও দেশ ও বিদেশের বহু ভক্ত কুলীন গ্রামে সমবেত হন।

publive-image

বৈষ্ণব তীর্থ স্থান কুলীন গ্রামকে পর্যটন স্থান হিসেবে মান্যতা দেওয়া হোক, এই দাবি অনেকদিন ধরেই করে আসছেন এলাকাবাসী। বিষয়টি নিয়ে এবার রাজ্যের পর্যটন দফতরও উৎসাহ দেখিয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ কুলীন গ্রামে পৌছোঁন। জামালপুরের প্রাক্তন বাম বিধায়ক সমর হাজরা, বর্তমান বিধায়ক অলোক মাজি, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মেহেমুদ খানকে সঙ্গে নিয়ে মন্ত্রী কুলীন গ্রামের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেছেন।

পরে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “কুলীন গ্রাম বড় বৈষ্ণব তীর্থ ক্ষেত্র। কুলীন গ্রামকে পর্যটন স্থান হিসাবে মান্যতা দিতে বহুবার বিধানসভায় সোচ্চার হয়েছেন জামালপুরের প্রাক্তন বিধায়ক সমর হাজরা এবং বর্তমান বিধায়ক অলোক মাজি। এই সংক্রান্ত নথিপত্র তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী গ্রামীণ ট্যুরিজম সেন্টার গড়তে চান। সরকারের আর্থিক সংকট থাকলেও কুলীন গ্রামকে পর্যটন স্থান হিসাবে গড়ে তোলার যাবতীর কাজের প্ল্যান- এস্টিমেট হয়ে গেছে। পর্যটন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন আমি এবং অলোক মাজি বিষয়টি দেখছি। রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে খুব শীঘ্র কুলীন গ্রাম জায়গা করে নিতে চলেছে।" এবার কুলীন গ্রাম রাজ্যের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসাবে মান্যতা পাবে বলে আশাবাদী প্রাক্তন বিধায়ক সমর হাজরা এবং বর্তমান বিধায়ক অলক মাজি দু’জনেই।

Mamata Banerjee West Bengal East Burdwan Purba Bardhaman Kulingram Village Vaishnav Tirtha Sree Chaitanya
Advertisment