চলতি মাসেই দেশের সপ্তম এবং বাংলায় প্রথম 'বন্দে ভারত এক্সপ্রেস' ট্রেন চালু হতে চলেছে। আগামী শুক্রবার অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরেই সূচনা হতে চলেছে দেশের সপ্তম এবং বাংলার প্রথম বন্দে-ভারত এক্সপ্রেস। পূর্ব ভারতের প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন হাওড়া (HWH) থেকে নিউ জলপাইগুড়ি (NJP) এর মধ্যে চলবে। রেলের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বন্দে-ভারত ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে ইস্টার্ন রেলওয়ে। হাওড়া ডিভিশনের কারশেডে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে বলেও জানা গিয়েছে।
হাওড়া থেকে সকালে ট্রেন ছাড়বে
রেলের এক ঊর্ধ্বতন আধিকারিক জানিয়েছেন যে এই ট্রেনটি সকালে হাওড়া থেকে ছেড়ে বিকেলে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছবে। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর ট্রেন আবার হাওড়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে, রাতেই ট্রেনটি হাওড়ায় এসে পৌঁছাবে। হাওড়া ও নিউ জলপাইগুড়ির রুটে অনেক সুপারফাস্ট ও এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে। ইতিমধ্যেই এই রুটে একটি শতাব্দী এক্সপ্রেস চলছে। নিউ জলপাইগুড়িই একমাত্র স্টেশন যেখান থেকে পর্যটকরা দার্জিলিং ট্যুরে যান। সিকিম এবং ভুটানে যাওয়ার জন্যও পর্যটকরা এই রুটেই যাতায়াত করেন।
দেশে এখন পর্যন্ত ছয়টি বন্দে ভারত চলছে
দেশের প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেস নতুন দিল্লি এবং বারাণসীর মধ্যে শুরু হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯-এ প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রথম বন্দে ভারত ট্রেনে সূচনা করান। দ্বিতীয় বন্দে ভারত মাতা বৈষ্ণো দেবী কাটরা থেকে নয়াদিল্লির মধ্যে শুরু হয়। তৃতীয় বন্দে ভারত মুম্বই এবং আহমেদাবাদের মধ্যে চালু হয়। চতুর্থ বন্দে ভারত চলছে নয়াদিল্লি এবং হিমাচল প্রদেশের আম্ব ইন্দোরার মধ্যে। পঞ্চম বন্দে ভারত ট্রেনটি ১১ 'ফ্ল্যাগ অফ' করা হয়েছিল। এটি মহীশূর এবং চেন্নাইয়ের মধ্যে চলে। ১১ ডিসেম্বর ষষ্ঠ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু হয়। এটি মহারাষ্ট্রের নাগপুর থেকে ছত্তিশগড়ের বিলাসপুর পর্যন্ত চলে।
মোট ৭৫টি বন্দে ভারত চালানোর পরিকল্পনা
চলছে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব। এই উপলক্ষে, রেলওয়ে মোট ৭৫টি বন্দে ভারত ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করেছে। উৎসবটি ১৫ আগস্ট, ২০২৩-এ শেষ হবে। আশা করা হচ্ছে ততদিনে সারা দেশে ৭৫টি বন্দে ভারত ট্রেন চালু করা হবে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, চলতি আর্থিক বছরের জন্য বন্দে ভারত উৎপাদন কর্মসূচিতে অন্তত ৩৫টি বন্দে ভারত রেক অনুমোদিত হয়েছে। আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) জন্য আরও ৬৭ টি রেক অনুমোদন করা হয়েছে।
অটোমেটিক ট্রেন প্রোটেকশন সিস্টেম বসানো হয়েছে নতুন এই ট্রেনে। যাত্রী রক্ষীদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ভয়েস রেকর্ডিং সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। ট্রেনে আধুনিক ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেম বসানো হয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি ছাড়াও যাত্রীরা ট্রেনের ভিতরে বাতাস বিশুদ্ধিকণের বিশেষ সুবিধাও পাবেন। এর জন্য একটি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সিস্টেম বসানো হয়েছে।
এই বৈশিষ্ট্যগুলি ছাড়াও, বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের অন্যান্য শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এই ট্রেনটিকে সবচেয়ে আধুনিক ট্রেনগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে। এর দুর্দান্ত বৈশিষ্ট্য হল এই ট্রেনটি মাত্র ১২৯ সেকেন্ডে শূন্য থেকে ১৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে যাত্রা করতে সক্ষম। বন্দে ভারত-এর প্রথম সংস্করণে এই সময় ছিল ১৪৫ সেকেন্ড। অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে আরও ভাল ফ্লোর প্রুফিংয়ের সঙ্গে এয়ার কন্ডিশনার প্রযুক্তিও উন্নত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-এর ভিশনকে মাথায় রেখে, ট্রেনের সিস্টেমগুলি ভারতে ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে। ২০২৩ সালের আগস্টের মধ্যে সারা দেশে ৭৫ টি বন্দে ভারত ট্রেন চালানোর লক্ষ্য রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালের আগস্টের মধ্যে সারা দেশে ৭৫ টি বন্দে ভারত ট্রেন চালানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।
এই ট্রেনটি মাত্র ৫২ সেকেন্ডে বুলেট ট্রেনের চেয়ে দ্রুত গতিতে অর্থাৎ ০-১০০ কিমি গতিতে ছুটতে পারে। বুলেট ট্রেন ০-১০০ কিমি গতিতে পৌঁছতে ৫৫ সেকেন্ড সময় নেয়। বন্দে ভারত এক্সপ্রেস সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিমি। আসনগুলো আগের তুলনায় আরও আরামদায়ক ও নরম করা হয়েছে। নতুন বন্দে ভারতে ১১২৮ টি আসন রয়েছে যেখানে ২টি কোচে এক্সিকিউটিভ চেয়ার কার রয়েছে। নতুন বন্দে ভারতে আর্মার সিস্টেম কাজ করবে, যেখানে দুটি ট্রেন একটি ট্র্যাকে আসার সঙ্গে সঙ্গেই অটোমেটিক ব্রেকিং সিস্টেম কাজ করা শুরু করবে।
নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে প্রতিটি কোচে দুটি ইমারজেন্সি এক্সিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি কোচে ৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আগুন লাগার ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম বসানো হয়েছে নতুন এই ট্রেনে। ড্রাইভার কেবিনে হাই-টেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেখানে ড্রাইভার ডিজিটাল মোডে সব ধরণের তথ্য পাবেন। টক ব্যাক ডিভাইসের মাধ্যমে চালক যাত্রী এবং যাত্রী চালকের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন।