ঝিঙে, বিনস, পটল বেগুন প্রত্যেকটা সবজির দামই আকাশছোঁয়া। কয়েক সপ্তাহ ধরেই হেঁশেল টানতে নাজেহাল অবস্থা আমবাঙালির। গৃহস্থের বাজার বাজেটে রীতমতো ত্রাহি রব। মনে করা হচ্ছে, দেশ জুড়ে চলা আর্থিক মন্দার আঁচেই গৃহস্তের হেঁশেলের এই করুণ ছবি।
বাজারে গেলেই মালুম হচ্ছে, প্রায় সব সবজির দামই কিলো প্রতি পঞ্চাশ টাকার বেশি। পুজোর আগে সবজির বাজারে এমন অস্বাভাবিক দামে সংসার টানতে হিমসিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে রাজ্যের বাজারদর সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের এক সদস্য বলেন, "টাস্কফোর্সের মিটিং স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নিজে ঠিক করে থাকেন। প্রায় ছয় মাস কেটে গিয়েছে, কিন্তু এখনও বাজার দর নিয়ে কোনও মিটিং হয়নি। বাজার দর খুব বেড়ে গেলে মূলত রাজ্যের তরফেই জনস্বার্থে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। তিনি যতক্ষণ না মিটিং ডাকছেন ততক্ষণ তো কোনও সিদ্ধান্তে নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে এখন আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। মুখ্যমন্ত্রী সময় দিতে পারছেন না।
আরও পড়ুন: কলকাতা পুলিশে ফিরলেন দময়ন্তী সেন, রাজ্য পুলিশ পেল নতুন টাস্ক ফোর্স
এর আগে যখন রাজ্যে আলুর দাম ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছিল, সে সময় রাজ্যের তরফে কম দামে আলু বিক্রি করার নজিরও দেখা গিয়েছিল। টাস্কফোর্সের ওই সদস্য বলেন, "রাজ্যে শাক সবজির দাম বাড়লে একটা বিকল্প পথ খুঁজে বার করা হয়। রাজ্য সরকারের তরফে এখনও কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে কিছু গাড়ির বন্দোবস্ত করা হয়। সেই গাড়িগুলি হাতিবাগান ও ভিআইপি মার্কেট-সহ আরও একাধিক বাজার ঘুরে কম দামে সবজি বিক্রি করে। এই ধরনের পদক্ষেপ শিথিল হয়ে গিয়েছে রাজ্যে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না বিগত বেশ কিছু মাস ধরে। মুখ্যমন্ত্রী না ডাকলে এর সমাধান হবেও না"।
আরও পড়ুন: ‘হৃৎপিন্ড বেচে কিনতে হবে আইফোন ১১’, বলছে সোশাল মিডিয়া
এদিকে, কেজি প্রতি আদা-রসুনের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। বেগুন, উচ্ছে, ঝিঙে, সবেরই পাইকারি দাম কিলো প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। লঙ্কার দাম প্রায় ১০০ টাকা প্রতি কেজি। জানা যাচ্ছে, পেঁয়াজের জোগানে ঘাটতি হয়নি। বরং সম্প্রতি প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানি করা হচ্ছে। সে কারণে সামান্য কমেছে পেঁয়াজের দাম। তবে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম এখনও কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৩২ টাকা। যদিও খুচরো বাজারে তার দাম গিয়ে দাড়িয়েছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা। অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে ধনে পাতার, প্রায় ৩০০ টাকা কেজি। আলুর (জ্যোতি ও চন্দ্রমুখী) দাম হয়েছে ১৬ ও ১৮ টাকা কিলো।
বাজার দর কেন এত বৃদ্ধি পেল হঠাৎ?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টাস্কফোর্সের সদস্য বলেন, "বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই বেড়ে চলছে বাজারের দাম। মূলত বর্ষাকালে শাক-সবজির দাম অনেকটাই বেড়ে থাকে। এর মূল কারণ, বর্ষাকালে দেশের বহু জায়গায় বন্যা দেখা দেয়। ফলে পচন ধরে ফসলে। তবে আলুর দাম মোটামুটি ঠিক আছে। পেঁয়াজের দামে খুব বাড়াবাড়ি দেখা দিয়েছিল, তবে এখন অনেকটা কমেছে। এই মরশুমে তুলনায় রসুন ও আদার দাম অস্বাভাবিক, তাও আগের থেকে একটু কমেছে"। তিনি আরও বলেন, "বৃষ্টি হয়নি ঠিকই, কিন্তু ফসল হওয়ার জন্য যতটা বৃষ্টির প্রয়োজন হয় তা হয়েছে। আবার কিছু জায়গায় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাতও হয়েছে। এর ফলে ক্ষতি হয়েছে ফসলের। সে কারণেই মূলত এই দাম বৃদ্ধি। তবে পুজোর আগে মনে হচ্ছে বাজার দর একটু হলেও কমবে।"