বাজেটে বাড়িয়ে কেন্দ্রের অধীনস্থ ড্রেজিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়াকে দিয়ে মুড়িগঙ্গায় কাটা হয়েছে চ্যানেল, তার পরেও থমকাল ভেসেল, কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রইল তীর্থযাত্রীদের পারাপার। বলা চলে নদীতে চড়া অর্থাৎ ভাটার সময় ছ-সাত ঘণ্টা পারাপার বন্ধ রইল। বিগত কয়েক বছরেও এই দুর্ভোগ কাটল না মুড়িগঙ্গা নদীতে। অথচ এই নদী পেরিয়েই গঙ্গাসাগরে যেতে হয়। লট ৮ থেকে নামখানা লাখো লাখো পুণ্যার্থী ঠায় দাঁড়িয়ে ভেসেলের অপেক্ষায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকে বলা হচ্ছে, কেউ ধৈর্য্যচ্যুত হবেন না। ভেসেল চলাচল স্বাভাবিক হবে সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে। সেই মতন মুড়িগঙ্গায় জলস্তর বাড়তেই সোয়া বারোটা থেকে শুরু হল ভেসেল ও লঞ্চ চলাচল।
জবুথবু ঠান্ডায় গভীর রাত থেকে ভেসেলের অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাজারে হাজারে পুণ্যার্থী, মাথায় ভারী ভারী লোটাকম্বল নিয়ে। কলকাতা থেকে সাগর মেলা দেখতে আসা দুই বৃদ্ধ দম্পতি কাকদ্বীপের লট ৮ ঘাটে দাঁড়িয়েছিলেন ভেসেলের অপেক্ষায়। সকালের হিমেল হাওয়ায় যথেষ্ট কাতর তাঁরা। কিন্তু ভেসেলের খোঁজ করতে গিয়ে মাথায় হাত পড়ল তাঁদের।
কেন এই দুর্ভোগ? কারণ গঙ্গাসাগর যাওয়ার পথে সকলকেই মুড়িগঙ্গা নদী পেরোতে হয়। পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ভেসেল।সোমবার সকাল ৬ টার পর থেকে নদীতে ভাঁটা পড়ে যাওয়ায় জেটি ঘাটে জেগে ওঠে চড়া। বিগত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবছর সেচ দফতর মুড়িগঙ্গায় স্থায়ীভাবে চ্যানেল কাটার জন্য বাজেট বাড়িয়ে ড্রেজিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়কে বরাত দেওয়া হয়। তার পরেও ভেসেল থমকে যাওয়ায় প্রশাসনিক আধিকারিকদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। অতএব গঙ্গাসাগর মেলায় আসা হাজার হাজার পুণ্যার্থী আটকে পড়ছেন কাকদ্বীপ সহ নামখানায়।
আরও পড়ুন: গঙ্গাসাগরকে কুম্ভমেলার চেয়ে এগিয়ে রাখলেন মমতা
প্রশাসনের আশ্বাস অনুযায়ী বেলা সোয়া বারোটা থেকে জোয়ার এলে ফের ভেসেল চলাচল শুরু হয়। কিন্তু তীর্থযাত্রীদের মনে আক্ষেপ, "মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান শুরু হয়ে গিয়েছে আর আমরা নদীর এপারে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। জানি না এতদুর এসেও গঙ্গাসাগরে পুন্যস্নান সহ পুজো দিতে পারব কি না।"
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাগর মেলার পাশাপাশি সারা বছর যাতে ভেসেল পরিষেবা ব্যাহত না হয়, সেই লক্ষে ড্রেজিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়াকে দিয়ে কাকদ্বীপ ৮ নম্বর লট থেকে কচুবেড়িয়া পর্যন্ত মুড়িগঙ্গায় চ্যানেল কাটা হয়েছে। আটটি যন্ত্র দিন রাত পলি কাটার কাজ করেছে। তার পরেও ভাঁটার সময়ে নদীতে চড়া দেখা দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জি। উল্লেখ্য, এই লট নং ৮ এর তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন রাজীববাবু সহ সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা।
প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সাগর মেলার জন্য ভূতল পরিবহণ ও হুগলি জলপথ পরিবহণ দফতর থেকে আনা ৩০ টি ভেসেল লট ৮ থেকে মুড়িগঙ্গা নদী ও সাগর দ্বীপের কচুবেড়িয়া ঘাট পর্যন্ত পারাপার করছে। এর পাশাপাশি নামখানা থেকে বেণুবন ঘাটে ১০০ টি লঞ্চ চলাচল করছে। ওই লঞ্চে করে একশো জন যাত্রী পারাপার করছেন। কাকদ্বীপ হারউড পয়েন্ট থেকে বজরায় করে ৩,০০০ যাত্রী পারাপার করছেন। এদিন সকালে কাকদ্বীপ পৌঁছে যাত্রী পারাপারের বিষয়ে তদারকি শুরু করে দিয়েছেন কলকাতার মেয়র তথা পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।