বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেখা করতে গেলে প্রথমে বাধা, তারপর দেহরক্ষীকে পড়ুয়াদের উপর গুলি চালানোর নির্দেশ উপাচার্যের। শুধু তাতেই না থেমে, পেটোয়া গুণ্ডাদের ডেকে পড়ুয়াদের উপর আক্রমণ চালাতেও বলেছেন উপাচার্য। অভিযোগ আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের। উপাচার্যের ভয়ঙ্কার নির্দেশের পরই ধ্বস্তা ধ্বস্তিতে দক্ষযজ্ঞ অবস্থা হয় বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবনে। ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এবং কর্মসচিব অশোক মাহাতো সহ অন্যান্য আধিকারিকদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঘেরাও করে উপাচার্যর পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর অভিযোগ, তাকে হেনস্তা করা হয়েছে, মারধর করা হয়েছে। এতে তিনি দু:খিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মভূমিতে তাঁকে বাপ মা তুলে আন্দোলনকারীরা গালি গালাজ করেছে বলেও দাবি উপাচার্যের। এর পিছনে কিছু শিক্ষকের ইন্ধন আছে বলে মনে করেন বিপ্লববাবু। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী রাজীব ঝাঁ উদ্ধত অবস্থায় ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। তাঁর দাবি, ' উপাচার্যের গায়ে হাত দেয়া হয়েছে। তাঁকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে। উপাচার্যকে ডাক্তার দেখতে আসতে চাইলে ছাত্র-ছাত্রীরা ডাক্তারকে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে।'
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে অনড় আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা বলেন, 'দাবি না মিটলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্বভারতী উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে ঘেরাও চলবে।' তাদের অভিযোগ, ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যারাই যুক্ত হবে তাদের হয় বহিষ্কার করা হচ্ছে, না হয় সাসপেন্ড করা হচ্ছে। রেজাল্ট আঁটকানো হচ্ছে। পিএইচডি আঁটকানো হচ্ছে। দীর্ঘ চার বছর ধরে কুকর্ম করে চলেছেন উপাচার্য। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আশ্রমে এমন উপাচার্যের পদত্যাগ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
জানা গেছে, ছাত্র স্বার্থ জড়িত একাধিক ইস্যুতে এদিন বিকেলে প্রায় আশি জন পড়ুয়া উপাচার্য সহ অন্যান্যদের ঘেরাও করেন। উল্লেখ্য, বিএ প্রথম সেমিস্টার এবং এম-এর প্রথম সেমিস্টারের ফল প্রকাশে বিলম্ব করায় পড়ুয়ারা পরবর্তী পঠন পাঠন ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারছেন না। এই সপ্তাহেই এব্যাপারের একদল ছাত্র প্রতিনিধি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেয়। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও বিশ্বভারতী ছাত্র সোমনাথ সাউয়ের অর্থনীতিতে এমএ এডমিশন আটকে রাখা হয়েছে। আটকে দেওয়া হচ্ছে ছাত্রী মীণাক্ষী ভট্টাচার্যের গবেষণাও।
বিশ্বভারতী টিএমসিপি ইউনিটের সভাপতি মীণাক্ষী ভট্টাচার্য বলেন, 'আমার ছয় বছরের রিসার্চ নষ্ট করার জন্য উনি উঠে পড়ে লেগেছেন। উচ্চ শিক্ষায় মহিলাদের জন্য কিছু সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করলে, আটকে দেওয়া হচ্ছে। এরকম ধরণের মানসিকতা উপাচার্যর। হয় ওনাকে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে হবে। না হলে ঘৃণ্য চক্রান্তকারী উপাচার্য আমরা চাই না।' অভিযোগ, উপাচার্য একের পর এক আশ্রমিক, অধ্যাপক থেকে পড়ুয়া সকলের বিরুদ্ধে যে অন্যায় করছেন, তার বিরুদ্ধে সরব হলেই, বিভিন্ন আক্রমণ চালাচ্ছেন।