পশ্চিম মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কলেজগুলির তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার দিনক্ষণ নিয়ে সোমবার সকাল এগারোটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশদ্বার সহ মোট তিনটি প্রবেশপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী। অধ্যাপক, ছাত্রছাত্রী, অফিসকর্মী, কাউকেই বের হতে দেননি অবরোধকারীরা। অবরোধ চলাকালীন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামলাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শচীন মক্কারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় আসে, নামে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র্যাফ) এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, যতক্ষণ না তাঁদের দাবি গ্রাহ্য হচ্ছে ততক্ষণ অবরোধ চলবে।
আন্দোলনের সূত্রপাত একটি বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে। গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়, কলেজগুলির তৃতীয় বর্ষের লিখিত পরীক্ষা হবে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ, এবং প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা শুরু হবে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। হাতে খুব অল্প সময় থাকায়, এবং এই সময়ের মধ্যে সিলেবাস অসম্পূর্ণ থাকার আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন তৃতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা। সাধারণত তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা প্রতি বছর এপ্রিল মাস নাগাদ হয়ে থাকে। এবারও এপ্রিল মাসেই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে পরীক্ষা প্রায় দেড় মাস এগিয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চলছে আন্দোলন
আন্দোলনকারীদের মধ্যে পাঁশকুড়া কলেজের রবিন ভৌমিক বলেন, "বহু কলেজে এখনো সিলেবাস কমপ্লিট হয়নি, এর মধ্যে কীভাবে পরীক্ষা সম্ভব?" ছাত্রী পূজা পট্টনায়ক বলেন, "হঠাৎ করে পরীক্ষা এগিয়ে এসেছে অথচ আমরা পরীক্ষার জন্য সেরকমভাবে প্রস্তুত হইনি, এই অবস্থায় কীভাবে পরীক্ষা দেব?"
পরীক্ষা এপ্রিল মাসেই করতে হবে এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে যে বিজ্ঞপ্তি রয়েছে তাও প্রত্যাহার করতে হবে, এই দাবি নিয়ে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী সোমবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট অবরুদ্ধ করে রাখেন। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি হয়ে গেলেও কোন অধ্যাপক, অফিসকর্মী বা ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। এরই মাঝে দুপুর দুটো নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সদস্যরা জোর করে আন্দোলনকারীদের হঠাতে গেলে তাঁদের সঙ্গে একপ্রস্থ হাতাহাতি হয়। আন্দোলনকারী মহিলাদের শ্লীলতাহানি করা হয় বলেও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে আন্দোলনকারী এবং ছাত্র সংসদের সদস্যদের আলাদা করে দেয়।
অভিযোগ, পুলিশের মদত পাচ্ছেন ছাত্র সংসদের সদস্যরা
আন্দোলনকারীদের আরও অভিযোগ, পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ মদতে ছাত্র সংসদের সদস্যরা তাঁদের মারধর করেছেন এবং ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করেছেন। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন না উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী। দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসু বলেন, "পরীক্ষা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি ওয়েবসাইট থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে এবং ইসি মিটিং ডেকে পরবর্তী পরীক্ষার দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে।" যদিও আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, ওয়েবসাইট থেকে পরীক্ষার দিনক্ষণ প্রত্যাহার হলেও নতুন দিনক্ষণ না জানানো হলে তাঁদের আন্দোলন চলবে ।