করোনা টিকা না নেওয়ায় 'একঘরে' শিক্ষক, বাড়ির গেটে তালা ঝোলাল গ্রামবাসীরা

স্থানীয় পঞ্চায়েতের তরফেও বারবার ওই শিক্ষককে করোনার প্রতিষেধক নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তাতেও কর্ণপাত করেননি শিক্ষক।

স্থানীয় পঞ্চায়েতের তরফেও বারবার ওই শিক্ষককে করোনার প্রতিষেধক নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তাতেও কর্ণপাত করেননি শিক্ষক।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Villagers lock the gate of teacher's house in coochbehars Bakshirhat for not getting corona vaccine

করোনার টিকা না নেওয়ায় শিক্ষকের বাড়ির গেটে তালা ঝোলাচ্ছেন গ্রামের মহিলারা। ছবি : সন্দীপ সরকার

করোনার টিকা না নেওয়ায় এক শিক্ষকের বাড়ির গেটে তালা ঝোলালেন গ্রামের মহিলারা। মঙ্গলবার এই ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহারের বক্সিরহাট থানার অন্তর্গত মহিষকুচি এলাকায়। অভিযোগ, পঞ্চায়েতের তরফে বারবার শিক্ষককে করোনার প্রতিষেধক নেওয়ার আবেদন জানানো স্বত্বেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি। সেই কারণেই এবার শিক্ষকের বাড়ির গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা।

Advertisment

দেশজুড়ে করোনা দাবানলের মতো ছড়াচ্ছে। এরাজ্যেও ব্যাপক হারে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। দেশজুড়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের সংক্রমণ পরিস্থিতি রীতিমতো বিপজ্জনক জায়গায় রয়েছে। করোনা এড়াতে টিকার দুটি ডোজই নেওয়ার জন্য বারবার আবেদন করা হচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় দেওয়া শুরু হয়েছে বুস্টার ডোজও। দেশের অধিকাংশ মানুষ টিকা নিলেও এখনও টিকায় অনীহা বহু মানুষের।

তাঁদেরই একজন কোচবিহারের এই শিক্ষক। বারবার সরকারের তরফে টিকা নেওয়ার আবেদন জানালেও প্রতিষেধক নিতে চান না তিনি। তাতেই ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। আজ গ্রামের মহিলারা শিক্ষকের বাড়ির গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

কোচবিহারের বক্সিরহাটের মহিষকুচির বাসিন্দা সুবোধ কর ও তাঁর স্ত্রী এখনও নেননি করোনা প্রতিষেধক। সুবোধবাবু পেশায় বক্সিরহাট বাঁশরাজা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। করোনার টিকাকরণের জন্য তাঁর বড়িতে ১১ বার যান আশাকর্মীরা। তবুও তিনি টিকা নেবেন না বলে আশাকর্মীদের ফিরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। এরপর স্বাস্থ্যকর্মীরা বিষয়টি জানান বক্সিরহাট থানার অন্তর্গত মহিষকুচি ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুমন বর্মনকে। সরকারী নির্দেশিকার পাশাপাশি স্বস্থ্যকর্মী ও পঞ্চায়েতের তরফে বারংবার অনুরোধ করা স্বত্বেও শিক্ষক টিকা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা।

Advertisment

এদিন মহিষকুচি গ্রামের মহিলারা একত্রিত হয়ে শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে ফের করোনা টিকা নেওয়ার আবেদন করেন। এদিনও শিক্ষক গ্রামবাসীদের কাছে টিকা নেওয়ার নির্দেশিকা আছে কিনা তা জানতে চান। এরপরেই ক্ষেপে গিয়ে গ্রামের মহিলারা শিক্ষক সুবোধ করের বাড়ির গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন।

গ্রামের এক মহিলা নিলিমা সরকার বলেন, ''মহিষকুচি গ্রামের সবাই করোনার টিকা নিয়েছেন। শুধু টিকা নেননি শিক্ষক ও তাঁর পরিবার। তাই নিজেদের সুরক্ষার কথা ভেবেই এটা করা হয়েছে।'' ওই শিক্ষক ও তাঁর পরিবারের লোকেরা যাতে যত্রতত্র ঘুরতে না পারেন, সেই কারণেই বাড়ির গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। ওই মহিলা জানিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা করোনার টিকা না নেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত খোলা হবে না গেটের তালা।

আরও পড়ুন- সংক্রমণ-শঙ্কা চরমে, সাগরমেলার আয়োজন নিয়ে রাজ্যের সমালোচনায় বিজেপি

এদিকে, মহিষকুচি ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুমন বর্মন জানান, পঞ্চায়েতের তরফে করোনা টিকা নেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়েছে সুবোধ করকে। তবুও তিনি টিকা নেননি। এদিন গ্রামের মহিলা সমিতি সদস্যরা একত্রিত হয়ে শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে টিকা নেওয়ার দাবি জানান। তাতেও সেই পরিবারের লোকজন টিকা নিতে অস্বীকার করেন। তাঁরা একত্রিত হয়ে শিক্ষকের গেটে তালা ঝুলিয়েছেন। এবিষয়ে কিছু বলার নেই। শিক্ষকের উচিত ছিল সময়মতো পরিবারের সকলে মিলে টিকা নেওয়া।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সুবোধ করের দাবি, করোনার টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। ওই শিক্ষক জানিয়েছেন, তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা টিকা নেননি। যদি টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক হয় এবং যদি তেমন কোনও নির্দেশিকা সরকারিভাবে দেখানো হয়, তাহলে অবশ্যই তিনিও করোনার টিকা নেবেন।

West Bengal coronavirus Cooch Behar Corona Vaccination