মঙ্গলবার দুই কিশোরের খুনের ঘটনা সামনে আসতেই ধুন্ধুমার বাগুইআটি। পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন এলাকাবাসী। দফায় দফায় চলে বিক্ষোভ আন্দোলন। প্রধান অভিযুক্তের বাড়িও ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা।
উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে উদ্ধার বাগুইআটি থেকে নিখোঁজ দুই ছাত্রের মৃতদেহ। মৃত দুই ছাত্রের নাম অতনু দে ও অভিষেক নস্কর। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান অপহরণ করে খুন করা হয়েছে দুই ছাত্রকে। দুই কিশোরই ২২শে আগস্ট থেকে নিখোঁজ ছিল বলে জানায় তাদের পরিবার। এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতিরও অভিযোগ আনা হয়েছে পরিবারের তরফে। পরিবারের কাছে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এরপর নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অপহরণের অভিযোগও দায়ের করা হয়। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাগুইআটি থানার পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া আসামীদের নাম অভিজিৎ বোস, শামীম আলী, শাহিল মোল্লা ও দীপেন্দু দাস। এদিকে দুই ছাত্রের মরদেহ উদ্ধারের পর এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এবং মৃতদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, দুই কিশোরের মধ্যে একজনের বয়স ১৫ বছর এবং অন্যজনের বয়স ১৬ বছর। মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাড়োয়া ও বাসন্তী হাইওয়ের ধারে নয়ানজুলি থেকে দেহদুটি উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান চলন্ত গাড়িতেই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে দুই ছাত্রকে। এর পর তাদের দেহ গাড়ি থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়।
অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ
ওই ঘটনায় সোমবার অভিজিৎ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও তিনজনের সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, অভিজিৎ এর কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। দুই কিশোরই গত ২২ আগস্ট নিখোঁজ হয়। মোটরসাইকেল কেনার অজুহাতে সত্যেন্দ্র নামে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর রাজারহাটের একটি বাইকের দোকানে যান তিনি। সেখান থেকে বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়েতে যান। অভিজিৎ জানান, দুই ছাত্রকে গাড়িতেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
ছাত্রদের অপহরণ, এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়
দুই পরিবারের অভিযোগ, বার বার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও গুরুত্ব দেয়নি পুলিশ। মর্গে দীর্ঘদিন দেহ পড়ে থাকলেও, পুলিশ খবরই রাখেনি বলেও অভিযোগ উঠছে। বাড়িতে ফোন করে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয় বলেও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। ফোন নম্বর নিয়ে তাদের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। প্রথমে পুলিশ ভেবেছিল তারা বেড়াতে কোথাও বেড়াতে গিয়েছে। এই ভেবেই বিশেষ আমল দেয়নি ঘটনার । পরিবারের কথায় ১০-১২ দিন পর আমার ছেলের মোবাইল উদ্ধার করা হয়। এক কোটি টাকা অপহরণের বিষয়ে আমরা ফোনে মেসেজ পেয়েছি। তারপরই পুলিশ সেভাবে তৎপর হয়নি। গোটা ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধেই সরব হয়েছে দুই ছাত্রের পরিবার ।
আরও পড়ুন: < ফেলে দেওয়া সামগ্রী দিয়েই গড়লেন দুর্গাপ্রতিমা, বিক্রির টাকায় অসহায় মানুষের পাশে ‘ভাগাড়ের মা’! >
বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক সিনিয়ার আধিকারিক জানিয়েছেন যে অভিযুক্তদের একজন অভিজিৎ বোস স্বীকার করেছেন যে পড়ুয়াদের একটি গাড়ির মধ্যেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল এবং মৃতদেহগুলি বাসন্তী হাইওয়ের ধারে খালে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ জানায়, মামলার প্রধান আসামি সত্যেন্দ্র চৌধুরী, দুই পরিবারের পরিচিত। তিনি এখনও পলাতক। তাকে ধরতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, "২২ তরিখ সত্যেন্দ্র অতনুকে ডাকে, বলে বাইক কিনতে যাব। অতনু এসে অভিষেককেও ডেকে নেয়। দু’জনকে গাড়িতে তুলে নেয় সত্যেন্দ্র। সেই গাড়িতে ৩-৪ জন আগে থেকেই ছিল।" গাড়ির মধ্যেই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় দুই কিশোরকে। প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটসের সদস্যরা ইতিমধ্যেই তাঁদের বাড়ি ঘুরে গেছেন। এই ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, বিরোধীরা। রাজনৈতিক দলগুলি এই ঘটনায় রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছে।