ভদ্রেশ্বরে ওসি বদল, তেলেনিপাড়ার ঘটনায় উত্তপ্ত রাজনীতি

তেলেনিপাড়ার ঘটনায় ১১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

তেলেনিপাড়ার ঘটনায় ১১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

কৌশিক ব্যানার্জি ও নন্দন পানিগ্রাহী।

তেলেনিপাড়ায় উত্তেজনার মধ্যেই সরানো হল ভদ্রেশ্বর থানার ওসি নন্দন পানিগ্রাহীকে। উল্লেখ্য, এই ভদ্রেশ্বর থানার আওতাতেই পড়ে তেলেনিপাড়া এলাকা। নন্দন পানিগ্রাহীর স্থলাভিষিক্ত হলেন পূর্ব মেদিনীপুর সাইবার ক্রাইম থানার ইন্সপেক্টর ইন চার্জ কৌশিক ব্যানার্জি।

Advertisment

কিছুদিন আগে পর্যন্ত হুগলি জেলা অরেঞ্জ জোনভূক্ত থাকলেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় অনেকটাই এগিয়ে যাওয়ায় এখন তা রেড জোন। এরইমধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে উত্তপ্ত হয়েছে ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়া। দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে তিন দিন ধরে এলাকা অশান্ত রয়েছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বন্ধ রাখতে হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। শুধু চন্দননগর ও শ্রীরামপুরে নয়, গঙ্গার ওপারে উত্তর ২৪ পরগণার ভাটপাড়া-জগদ্দল এলাকাতেও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এডিজি সিআইডি সিদ্ধিনাথ গুপ্তা, পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।

বুধবার চুঁচুড়ায় জেলাশাসকের দফতরে দেখা করতে গিয়েছিলেন হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ও ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং। কিন্তু তাঁরা জেলাশাসকের দেখা পাননি। তারপর সেখানে তাঁরা রাস্তাতেই বসে পড়েন। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক অবস্থানে বসেছিলেন। তারপর তাঁরা পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে রওনা দেন। পথে চন্দননগরের জ্যোতি মোড়ে বিজেপি সাংসদদের আটকান চন্দননগরের এসিপি (ওয়ান) হেডকোয়ার্টার গোলাম সারওয়ার। সেখানে বিজেপির দুই সাংসদের সঙ্গে পুলিশকর্তা কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। বস্তুত, এদিন জেলাশাসক বা পুলিশ কমিশনার কারও সঙ্গে সাক্ষাত্ হয়নি বিজেপির এই দুই সাংসদের।

Advertisment

গঙ্গার ওপারেই ব্যারাকপুরের ভাটপাড়া-জগদ্দল এলাকা। এদিন হুগলির সাংসদের সঙ্গী ছিলেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। অর্জুন বলেন, "জেলাশাসক জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করবেন না। অতিরিক্ত জেলাশাসকের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। জেলাশাসকের বিরুদ্ধে লোকসভায় প্রিভিলেজ আনা হবে। একজন জেলাশাসক এমপির সঙ্গে দেখা করবেন না এটা হতে পারে না।" তাঁর দাবি, "বাড়ি লুঠ হচ্ছে, অশান্তি চলছে। আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।" লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "জেলাশসক ও পুলিশ কমিশনারকে ফোন করেছি, ধরেননি। সিপি তেলেনিপাড়ায় ক্যাম্প করে বসে আছেন। আমদের সঙ্গে দেখা করেননি। তবু কেন অশান্তি বন্ধ হচ্ছে না?" তেলেনিপাড়ার ঘটনায় প্রশাসনের ইন্ধন আছে বলে অভিযোগ করেছেন লকেট। পুলিশ কমিশনার ও ভদ্রেশ্বর থানার ওসিকে তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন লকেট। তিনি বলেন, "পুলিশ রাস্তা আটকাচ্ছে। আমি সাংসদ, আমাকেই লুকিয়ে লুকিয়ে ঢুকতে হচ্ছে।"

publive-image চুঁচুড়ায় জেলাশাসকের দপ্তর এর সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ অবস্থানে সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ও অর্জুন সিং। ছবি- উত্তম দত্ত

এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি বিজেপি সাংসদরা অশান্তি বাড়াতে চাইছেন। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, "লকেট গঙ্গার ওপার থেকে সঙ্গী নিয়ে এসেছেন। লকেটকে আমাদের এই অঞ্চলের লোক নিঁখোজ বলে জানে। এমনিতে তিনি নাটুকে আরও নাটক করার চেষ্টা করছেন। লকেট ও অর্জুন সিং উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছেন। সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ার জন্য ওই দুই সাংসদকে গ্রেফতার করা উচিত।"

এদিকে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "কোভিড-১৯ লড়াইতে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে দেখা যায়নি। লাফ দিয়ে এসে উস্কানি দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চাইছেন। গত দুমাস তাঁকে এলাকায় লোক দেখতে পায়নি। এখন অশান্তি পাকাতে চাইছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুধু চন্দননগর নয় শ্রীরামপুর মহকুমার ইন্টারেনেট পরিষেবা বন্ধ রাখতে হয়েছে প্রশাসনকে।"

এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তেলেনিপাড়ার ঘটনায় ৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন