পূর্ব নির্ধারিত পথেই চলবে বিজেপি-র গণতন্ত্র বাঁচাও তথা রথযাত্রা। শুধুমাত্র তারিখের পরিবর্তন হবে। লালবাজারের বৈঠকে বৃহস্পতিবার এমনটাই জানিয়েছে বিজেপি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বৈঠক থেকে বেরিয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, প্রশাসন যেদিন বলবে সেদিনই হবে বিজেপির এই কর্মসূচি। তিনি আরও জানিয়েছেন, গেরুয়া শিবিরের এই বক্তব্য শুনেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং পুলিশের ডিজি। রাজ্য প্রশাসন সঠিক সময়ে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেবে বলে জানা যাচ্ছে। এদিন দিলীপ ঘোষ বলেন, রাজ্য প্রশাসন গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার অনুমতি (দিন উল্লেখ করে) দিলেই, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। উল্লেখ্য, শনিবারের মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টকে এদিনের বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা জানাতে হবে রাজ্যকে।
আরও পড়ুন- হেরে গিয়ে গীতা ছেড়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অমিত শাহ
লালবাজারের বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগেই বিজেপির অন্দরে পারদ ওঠানামা শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ঠিক ছিল, বিজেপির হয়ে এই বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করবেন মুকুল রায়, জয়প্রকাশ মজুমদার এবং প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে খোদ অমিত শাহের নির্দেশে প্রতিনিধি দলে বদল হয়। জয়প্রকাশ মজুমদার এবং প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গায় স্থান পান বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাশ বিজয় বর্গীয়। বৈঠক শুরু হওয়ার আগে এদিন দিলীপ ঘোষ বলেন, 'সর্বোচ্চ পর্যায়ের' প্রতিনিধি দলকেই রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে বলেছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহ। আর তারপরই এই রদবদল। শীর্ষ নেতৃত্বের বার্তা পেয়েই এদিন দিল্লি থেকে কলকাতায় এসেছেন বিজয়বর্গীয়।
উল্লেখ্য, তিন রাজ্যে ক্ক্ষমতা হারানোর পর। দেশের সব রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন রাজ্যের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে নিয়ে অকস্মাৎ বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বিশেষ বৈঠক ডেকেছেন অমিত শাহ। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে রথ বৈঠকের কথা মাথায় রেখে, ছাড় দেওয়া হয়েছে দিলীপ ঘোষকে, তাঁর পরিবর্তে রাজ্য থেকে দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে অন্য দুই নেতাকে। লালবাজারের বৈঠকে যোগ দিতে কলকাতায় হয়েছে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়কেও। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হিসাবে তাঁরও এদিন দিল্লির বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। এই মুহূর্তে রাজ্যে বিজেপির রথযাত্রা কর্মসূচিকেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে তা এই সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
প্রসঙ্গত, বিজেপির তিন প্রাথমিক প্রতিনিধির মধ্যে দুই প্রতিনিধিকে নিয়ে আপত্তি ছিল সরকারের তরফে। সোমবার আদালতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান, মুকুল রায় ও জয়প্রকাশ মজুমদারের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা রয়েছে। তাই রাজ্য সরকার তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় না। কিন্তু সোমবার রাজ্যের আবেদন গ্রহণ করলেও আদালত জানিয়ে দিয়েছিল, রাজ্যের উচ্চপদস্থ আমলাদের বিরুদ্ধেও অনেক মামলা রয়েছে, তাতে কিছু প্রমাণ হয় না।
আরও পড়ুন-পুলিশের পিঠের চামড়া খুলে নেওয়ার হুমকি বিজেপি রাজ্য সভাপতির
এরপর মঙ্গলবার শুনানির দিন ধার্য করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ, এবং এদিন রাজ্যের আপত্তি খারিজ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বৈঠকের দিন ও আদালতে আলোচনার বিষয়বস্তু জানানোর দিনও এক দিন করে বাড়িয়ে দেন বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ও বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
উল্লেখ্য, বিজেপির গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা হাইকোর্টের রায়ের ফলে স্থগিত রাখতে হয়েছে। এর আগে আদালত নির্দেশ দেয়, বিজেপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রাজ্য সরকারকে আলোচনায় বসতে হবে। রাজ্য সরকারের পক্ষে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলের। আলোচনার মাধ্যমে গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার কর্মসূচি নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত, যাতে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা জনিত কোনও সমস্যা না হয়।
আরও পড়ুন-একাই লড়ব, হুঙ্কার উজ্জীবিত রাজ্য কংগ্রেসের
তবে মঙ্গলবার পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলের পর অনেকটাই মনমরা রাজ্য বিজেপি। সেক্ষেত্রে গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা সফল করতে মরিয়া হয়ে উঠতে বাধ্য গেরুয়া শিবির। কোচবিহারে ৭ ডিসেম্বর গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার সমস্ত প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে ফেলেছিল বিজেপি। হাজির ছিলেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু আদালতের রায়ের ফলে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর সভা ও যাত্রার সূচনা কর্মসূচি বাতিল করতে হয়েছিল বিজেপিকে। এবার তাই অত্যন্ত সাবধানে পা ফেলতে চায় পদ্ম শিবির।