ফি বারের চেনা ছবির পুনরাবৃত্তি। আবারও 'দুয়ারে সরকার' শিবির চালু হতেই ফর্ম নিয়ে কালোবাজারি। এবার ঘটনাস্থল পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট। তবে অভিযোগ পেয়েই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রশাসনের। অভিযোগ কানে যেতেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি খোদ রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রীরও।
রাজ্যজুড়ে ফের এক দফায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের উদ্যোগ 'দুয়ারে সরকার' শিবির চালু হয়েছে। জেলায়-জেলায় চলছে 'দুয়ারে সরকার' শিবির। রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্প সম্পর্কে খোঁজ-খবর মেলে এই শিবিরে। একইসঙ্গে রাজ্যের সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধা পেতে ফর্ম মেলে এই শিবিরগুলি থেকেই। তবে 'দুয়ারে সরকার' শিবির শুরু হতেই ফের একবার ফায়দা লোটার ফাঁদ পেতেছে অসাধু ব্যক্তিদের একটি চক্র।
আপাতত পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থেকে এই ধরনের অভিযোগ সামনে এসেছে। মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতের পিণ্ডিরা স্কুলে 'দুয়ারে সরকার' শিবির বসে। সেই শিবিরের লাগোয়া মুদিখানা দোকান থেকেই বিক্রি হচ্ছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ফর্ম, এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে বিষয়টি প্রশাসনের কর্তাদের নজরে আসতেই নড়াচড়া শুরু। খোদ রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রীও এই অভিযোগ কানে শুনেছেন। সব মিলিয়ে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করছে বলে জানা গিয়েছে।
মঙ্গলকোটের বিডিও জগদীশ বারুই বলেন, “দুয়ারে সরকারের শিবিরে বিভিন্ন প্রকল্পের পর্যাপ্ত পরিমাণে ফর্ম রয়েছে। টাকার বিনিময়ে ওই ফর্ম কেউ বিক্রি করতে পারেন না। ফর্ম বিক্রির যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কেউ সরকারি প্রকল্পের ফর্ম বিক্রি করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি দফতরের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।''
উল্লেখ্য, রাজ্যজুড়ে ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে 'দুয়ারে সরকার' শিবির। ব্লক প্রশাসনের নির্দিষ্ট করে দেওয়া দিনে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় হচ্ছে এই শিবির। সেই মতো সোমবার মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতের পিণ্ডিরা স্কুলে দুয়ারে সরকারের শিবির বসে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার ফর্ম তোলা ও জমা দেওয়ার জন্য সেই শিবিরে নজরকাড়া ভিড় ছিল মহিলাদের। পিন্ডিরা স্কুলে দুয়ারে সরকারের শিবিরে আসা অনেকে অভিযোগ করেন, কোনও এক অজ্ঞাত কারণে পঞ্চায়েত কর্মীরা তাঁদের ব্যাগে ভরে রাখেন বিভিন্ন প্রকল্পের ফর্ম। সেই ফর্ম চাইতে গেলে পঞ্চায়েত দফতরের কর্মীরাই উপভোক্তাদের ফিরিয়ে দেন বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন- ২০১৪-এর প্রাইমারি টেট উত্তীর্ণদের নিয়োগে জট আরও গভীরে, কী পদক্ষেপ করল পর্ষদ?
উপভোক্তাদের আরও অভিযোগ, নিখরচায় ফর্ম না পেয়ে তাঁদের ৫-১০ টাকা খরচ করে শিবিরের উল্টোদিকের মুদিখানা দোকান থেকে ফর্ম কিনতে হয়েছে। ওই মুদিখানা দোকানে সার দিয়ে সাজানো আছে স্বাস্থ্যসাথী, রেশন কার্ড সংশোধন, মানবিক ভাতা, বিধবা ভাতা সহ সরকারি ২৮ টি প্রকল্পের ফর্ম। যার যা ফর্ম দরকার, মুদিখানা দোকানদারকে বললেই তিনি ৫-১০ টাকার বিনিময়ে তা দিয়ে দিচ্ছেন। ওই ব্যবসায়ী অন্য সব প্রকল্পের ফর্মের দাম ৫ টাকা নিলেও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ও স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের ফর্মের দাম ১০ টাকা নিয়েছেন। কি করে সরকারি প্রকল্পের ফর্ম মুদি দোকান মালিকের কাছে পৌঁছোলো? সেই প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষুব্ধ উপভোক্তারা।
আরও পড়ুন- মমতা সরকারেই আস্থা ২০০৯-এর প্রাথমিকে উত্তীর্ণদের, শেষ পর্যন্ত ধর্মতলা থেকে ধরনা প্রত্যাহার
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোকান মালিকের বক্তব্য, ''এই প্রথম আমি সরকারি প্রকল্পের ফর্ম বিক্রি করলাম, এমনটা নয়। দুয়ারে সরকারের শিবির শুরু হওয়া থেকেই আমি ফর্ম বিক্রি করছি।'' যদিও শিবিরের দায়িত্বে থাকা পঞ্চায়েত কর্মী আবদুল আজিম এই সব
অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, '' লাইনে দাঁড়াতে হবে বলে কেউ যদি বাইরে থেকে ফর্ম কেনেন আমাদের আর কি করার
আছে।''
এদিকে, দুয়ারে সরকার শিবিরের ফর্ম অন্যত্র বিক্রির অভিযোগ কানে পৌঁছেছে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের। এই বিষয়ে মঙ্গলবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে তিনি বলেন, “কোথাও যদি কোনও ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে সরকারি প্রকল্পের ফর্ম বিক্রি করেন তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা প্রশাসনকে বলব। তবে একথাও ঠিক, লাইনে একটু দাঁড়াতে হবে বলে যাঁরা টাকা দিয়ে ফর্ম কিনছেন তাঁরা আখেরে ওই অসাধু ব্যক্তিদেরই মদত জোগাচ্ছেন। যে কোনও সরকারি প্রকল্পে আবেদন করার ফর্ম রাজ্য সরকার বিনামূল্যে দেয়। কোনও অসাধু ব্যক্তি সরকারি প্রকল্পের ফর্ম বিক্রি করলে তখনই প্রশাসনকে জানানো প্রয়োজন।''