২০১৭ সালের অক্টোবরেই ছেলেকে হারিয়েছিলেন। অভিযোগ, উত্তপ্ত দার্জিলিংকে শান্ত করতে গিয়ে গুরং বাহিনীর গুলি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এসআই অমিতাভ মালিকের বুকে বিঁধেছিল। তারপরই পাহাড় থেকে ফেরার হয়ে যান গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুং-রোশন গিরিরা। এরপর গুরুংদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের হয়েছে। রয়েছে রাষ্ট্রদোহিতার মত অভিযোগও। মমতা সরকারের পক্ষে ছিল অমিতাভর খুনিদের ধরে শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও। ভরসা করেছিলেন নিহত অমিতাভর বাবা সৌমেন মালিকও। কিন্তু, গত বুধবারের পর সব যেন এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। তাহলে কি গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার তাঁর ছেলে? এই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে নিহত পুলিশ অফিসারের বাবা সোমেন মালিককে।
প্রায় তিন বছর পর ফের প্রকাশ্যে বিমল গুরুং-রোশন গিরিরা। গত বুধবার বিকেলের এই ঘটনায় প্রবল আলোড়ন ছড়ায়। যা আরও তীব্র করে স্মিত হাসি মুখে গুরুংয়ের ঘোষণা। বিমল গুরুং বলেছন, 'বিগত তিন বছরে দাবি পূরণে কোনও পদক্ষেপ করেনি বিজেপি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা বলবৎ করেছেন। তাই বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়তে চাই।'
গোটা রাজ্যবাসীর সঙ্গে সেই ঘোষণা শুনেছেন মালিক পরিবারও। এক কথায় তাঁরা তাজ্জব। যাঁদের বিরুদ্ধে এত মামলা, যাঁদের ধরতে এত অভিযান- তাঁরাই কিনা খোদ কোলকাতায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়েলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সঙ্গে গাঁটছড়ার কথা বললেন। কিছুই যেন বোধগম্য হচ্ছিল না অমিতাভ মালিকের বাবার। ঘোর অবশ্য কেটেছে মুহূর্তেই। দাঁতে দাঁত চিপে লড়াইয়ের সংকল্প নিয়েছেন।
সৌমেন মালিক বলেছেন, 'মমতার প্রতিশ্রুতি ছিল গুরুংদের ধরবেন। এখন দেখছি জোটের প্রস্তাব দিচ্ছে ওরা। এটা কী ধরণের রাজনীতি। আমার ছেলের আসল খুনি কে? গোটা ঘটনা সিবিআই তদন্তের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসুক।'
নিজের ছেলে পুলিশ ছিলেন। রাজ কর্তব্য পালন করতে গিয়েই তাঁর প্রাণ গিয়েছে। কিন্তু, বুধবারের ঘটনার পর পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি সৌমেন মালিক। তাঁর কথায়, 'গুরুংদের এনকাউন্টার করে মারা উচিত ছিল। যদিও সেটা হল না। পুলিশের মেরুদণ্ড নেই। এখন দেখছি আমার ছেলের (অমিতাভ মালিক) মেরুদণ্ডটাই শুধু ভেঙে দেওয়া হয়েছে।'
অমিতাভর খুনিদের শাস্তির জন্য যে মমতা সরকারকে ভরসা করেছিলেন তিনি সেই সরকারের উপর থেকে আস্থা উঠেছে সৌমেনের। রাজ্য সরকার তাঁর সঙ্গে 'প্রতারণা' করেছে বলে মনে করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সৌমেন মালিক বলেছেন, 'খুনিরাতো প্রকাশ্যে ঘরছে। অথচ তাদের ধরা হল না। হত্যাকারীদের ধরার থেকে রাজনীতিইটাই বড় হল। রাজ্য সরকার আমাদের সঙ্গে প্রতরণা করল।'
এরপর মালিক পরিবারকে হুমকির মুখে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দার্জিলিংয়ে নিহত এসআই অমিতাভ মালিকের বাবা সৌমেন মালিক। তিনি জানিয়েছেন, 'হয়তো প্রচুর হুমকি আসবে। কিন্তু আমাদের আর হারানোর কিছু নেই। আমরা পিছিয়ে আসব না। সিবিআই তদন্ত হোক। ছেলের আসল খুনি কারা- তাদের জানতে চাই।'
তবে, গুরুং বাহিনীর জোটের প্রস্তাবে কী সায় রয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের। এই বিষয়ে এখনও জোড়া-ফুল শিবিরের তরফে কেউ মুখ খোলেননি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন