Advertisment

বায়রন হতে চান না মিনতি মাণ্ডি, তৃণমূলের হুমকি উড়িয়ে কংগ্রেসেই থাকতে চান জয়ী প্রার্থী

মিনতি যে আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে গিয়েছেন সেটিই ’ঘটনাচক্রে’ প্রধান পদের জন্য সংরক্ষিত আসন।

IE Bangla Web Desk এবং Subhamay Mandal
New Update
Congress tribal candidate fears TMC pressure

কংগ্রেসের জয়ী সদস্য মিনতি মাণ্ডি। ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে বিজেপি বিরোধিতায় এককাট্টা হয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএম। এই তিন দল-সহ ছাব্বিশটি দল মিলে তৈরি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ জোট মঙ্গলবারই আত্মপ্রকাশ করছে।

Advertisment

কিন্তু তাতে বাংলায় কী যায় আসে! এখানে তো দোস্তির বদলে অব্যাহত রয়েছে কুস্তি। কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে পঞ্চায়েত ভোটে জয়ী হয়েও স্বস্তিতে নেই পূর্ব বর্ধমানের রায়না ১ ব্লকের নাড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের কুলিয়া গ্রামের জনজাতি পরিবারের মহিলা মিনতি মাণ্ডি। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস দলে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে এখন হুমকি হজম করতে হচ্ছে। তবে হুমকি শাসানি যাই মিলুক না কেন মিনতি মাণ্ডির সাফ কথা, তিনি বায়রন বিশ্বাসের মতো বিশ্বাসঘাতকতা কংগ্রেস দলের সঙ্গে করতে পারবেন না।

নাড়ু গ্রাম পঞ্চায়েতের ২২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ১৮টি আসনে জিতেছে। বাকি আসনগুলির মধ্যে তিনটিতে সিপিএম এবং জনজাতি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতেছেন মিনতি মাণ্ডি। আর তাতেই বেকায়দায় পড়ে গিয়ৈছে তৃণমূল। কারণ, মিনতি যে আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে গিয়েছেন সেটিই ’ঘটনাচক্রে’ প্রধান পদের জন্য সংরক্ষিত আসন। তাই প্রধান পদটি মিনতি মাণ্ডির জন্য পাকা হয়ে গিয়েছে।

তাই যে কোনও প্রকারে মিনতিকে এখন নিজেদের দিকে টানটে মরিয়া শাসক দল। মিনতির অভিযোগ, ভোটে জিতেও তিনি শান্তিতে নেই। তৃণমূল কংগ্রেস দলে যোগ দিতে হবে বলে তাঁকে 'হুমকি' দিচ্ছে। ২০১৩ সালে কংগ্রেসের হয়ে নাড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের কুলিয়া গ্রাম থেকে জেতার পর তাঁকে এখনকার মতই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল।

publive-image
পরিজন থেকে দলের কর্মীরা এখন সর্বক্ষণ মিনতির বাড়ির চারপাশে পাহারা দিয়ে রাখছেন।

তখন প্রায় চারবছর বাড়ি ছাড়া ছিলেন বলে মিনতি জানান। তবে এবার আর তাঁকে যাতে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে না হয়, তাই পরিজন থেকে দলের কর্মীরা এখন সর্বক্ষণ মিনতির বাড়ির চারপাশে পাহারা দিয়ে রাখছেন। যদিও পঞ্চায়েত সদস্য মিনতির অভিযোগকে কোনও গুরুত্ব দিতে চাইছেন না তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব।

কুলিয়া গ্রামের মুখেই রেয়েছে মিনতির একতলা পাকা বাড়ি। বাড়ির দরজা-জানলা নেই। বাড়ির ভিতরে ছোট ধানের গোলা ও গোয়াল ঘর আছে। মিনতি ও তাঁর স্বামী বাবলু দু'জনেই খেতমজুরের কাজ করেন। মিনতির অভিযোগ, তিনি পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর থেকেই অশান্তি হয়। ভোট গণনার দিনেও চুলের মুঠি ধরে তাঁকে মারধর করা হয়। তবু তিনি গণনাকেন্দ্র ছাড়েননি। জয়ের শংসাপত্র নিয়েই গণনাকেন্দ্র থেকে বেরিয়েছেন। কিন্তু জিতেও শান্তিতে থাকতে পারছেন না। কারণ, সংরক্ষিত আসনে তাঁর প্রধান হওয়া নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। সেই জন্যেই নানাভাবে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। একা বাড়ি থেকে তিনি বেরুতেও পারছেন না। মিনতিদেবীর স্বামী বাবলু মাণ্ডি বলেন,“ভোটের আগে আমাকে শাবল দিয়ে মেরেছিল। এখন আমার স্ত্রী জিতে যাবার পর ফের অশান্তির পাকাচ্ছে তৃণমূল।"

মিনতির প্রতিবেশী রামেশ্বর মাণ্ডি ও সুভাষ মাণ্ডি বলেন, "এলাকার ত্ণমূলের কয়েকজন সবসময় হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। পাড়ার মুদির দোকানে গেলেও হুমকি দিচ্ছে। সে জন্যে আমরা মিনতির বাড়ি পাহারা দিচ্ছি। আশেপাশের পাড়াও সতর্ক থাকছে।" মিনতির বাড়িতে হাজির থাকা বাবলু মাণ্ডি নামে এক বৃদ্ধ বলেন, মিনতি ভোটে জিতলেও আমরা শান্তিতে নেই। হামলার আতঙ্ক আমাদের তাড়া করে বেরাচ্ছে’।

গ্রামের তৃণমূলের নেতা শেখ কুতুবউদ্দিন (টম্বল) বলেন, "প্রথমে ছিল বুথ দখলের জন্যে অত্যাচার। এখন তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্যে হুমকি চলছে। ২০১৩ সালেও মিনতিকে তৃণমূলে যোগ দেওয়াতে পারেনি। আর এখন তো গোটা গ্রাম মিনতিকে আগলে রেখেছে। প্রধান হওয়ার জন্যে মিনতি মাণ্ডি নীতিকে বিসর্জন দেবে বলে মনে হয় না“। আর রায়না ১ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি বামদেব মণ্ডল বলেন, "নিরপেক্ষ গণনা হয়েছে। সিপিএমও পঞ্চায়েত পেয়েছে। হুমকি-অশান্তি ছাড়াই কী ভাবে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করতে হবে তা আমি জানি। কংগ্রেসের সদস্যের করা অভিযোগ ঠিক নয়। উনি অকারণে ভয় পাচ্ছেন“।

tmc CONGRESS panchayat election West Bengal panchayat election 2023
Advertisment