বাংলার পাটকলের শ্রমিকেরা 'লক আউট' শব্দের সঙ্গে পরিচিত গত কয়েকযুগ ধরে। কিন্তু 'লকডাউন'? এ জীবনে এই প্রথম। করোনাভাইরাসের দাপটে লকডাউন হয়েছে গোটা দেশ। সেই আবহে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলছেন বাংলার শ্রমিকেরা। তাঁরা জানতেন পাটকল লকআউট হলে কোথাও না কোথাও কাজ জুটিয়ে নিতে পারতেন তাঁরা। কিন্তু এ যে লকডাউন! দেশ বন্ধ, রাজ্য বন্ধ, বন্ধ দোকানপাট-বাজার। কিন্তু পেট?
আরও পড়ুন: ঘরবন্দি বাংলায় করোনায় আক্রান্ত ১০, বন্ধ হল মসজিদ, ভেন্টিলেশনে আক্রান্ত বৃদ্ধ
কবে রেহাই মিলবে এই ঘরবন্দী দশা জানা নেই হুকুমচাঁদ মিলে কাজ করা রবি রাহার। লকডাউনের সঙ্গে সঙ্গে আশার শেষ আলোটুকুও নিভে গিয়েছে। দীর্ঘনি:শ্বাস ফেলে রবি বলেন, "আমরা সবসময় লক আউট পরিস্থিতিকে ভয় করতাম। কারণ এর অর্থ হল আমরা কাজের বাইরে থাকব। কিন্তু অন্য জায়গায় কাজের আশা থাকত। কিন্তু লকডাউনের পর উপার্জনের আর কোনও বিকল্প রাস্তা থাকল না।" প্রসঙ্গত, এ রাজ্যে হুগলি নদীর পূর্ব পাশে মোট ৫২টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে খোলা রয়েছে ৪৬টি। তবে ২২ মার্চ রাজ্যে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর সব পাটকল একসঙ্গে বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: বাবা আর নেই, জানতেই লকডাউনে কলকাতা আসার ছাড়পত্র ছেলেকে
আর সেই সিদ্ধান্তেই বন্ধ হল রাজ্যের প্রায় ২ লক্ষ শ্রমিকের রুটি-রোজগার। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েই রবি রাহা বলেন, "আমরা প্রতিদিনের মজুরি উপার্জনকারী। দিন চালানোর জন্য চাল, ডাল ও অন্যান্য জিনিষ কেনার টাকা এই মুহুর্তে হাতে নেই। আমাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের থেকে কিছু টাকা লোন দিলে খাবার কিনতে পারতাম। নয়তো খুব কঠিন সংকটে পড়ব।" অন্যদিকে, কামারহাটি জুট মিলের শ্রমিক শাহাজাদা খান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাড়িতে থাকতে বলেছেন। আমরা তা মানছি। তবে এখন এক পরিস্থিতি যখন আমরা করোনার হাত থেকে বাঁচতে পারলেও খিদের জ্বালা থেকে বাঁচতে পারব না। এখন তো এই পরিস্থিতিতে আমরা রিকশা চালকের কাজও করতে পারছি না।"
সিপিএমের ট্রেড ইউনিয়ন ফ্রন্ট সিটিইউর নেতা গার্গী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শ্রমিকরা মারাত্মক সংকটে রয়েছে। তাঁরা মারাত্মক আতঙ্কেও রয়েছে। প্রথমত, এখন কী করা উচিত তা তাঁরা জানেন না এবং দ্বিতীয়ত, তাঁরা এও জানেন না যে এই শিল্পের ভাগ্য কী হবে পরবর্তীতে। কারণ, অনেকগুলি পাটকল এখন এত দুর্বল, এই করোনাভাইরাস শেষে এই শিল্পগুলি বন্ধও হয়ে যেতে পারে।"
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন