কংক্রিটের ইমারতে সবুজের ধ্বংসের পালা! বিপন্ন মানব সভ্যতা। প্রকৃতির কোল থেকে যেন হারিয়ে যেতে বসেছে গাছপালা। অন্তত শহুরে জীবন তারই প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ে প্রতি মুহূর্তেই। প্রকৃতি বাঁচানোর অঙ্গীকার নিয়েই ওয়েলিংটন নাগরিক কল্যান সমিতির এবারের পুজোর থিম ‘মূল্যবোধ’।
গত ২ বছর ধরেই অতিমারীর দাপট মানুষের জীবনকে একেবারেই অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সেই অতিমারীর দাপট কমতেই এবারের পুজো ঘিরে মানুষের মধ্যে চূড়ান্ত উদ্দীপনা। উৎসবের আনন্দের জোয়ারে গা ভাসাতে প্রস্তুত সকলেই। হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন। আর তারপরেই বাঙালির ‘প্রাণের পুজো’ দুর্গাপুজো। শহর থেকে জেলার পুজো মণ্ডপে থিমের রমরমা। পুজো যতই এগোচ্ছে শিল্পীদের মধ্যে বেড়েছে ব্যস্ততা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সেরারা সেরা জাহির করার পালা।
ইউনেস্কোর হেরিটেজ সম্মান পেয়েছে বাংলার দুর্গাপুজো৷ তাই চলতি বছরের দুর্গাপুজোকে ঘিরে আগ্রহ গোটা বিশ্ব জুড়ে। এ বারের পুজোয় তাই তাক লাগাতে প্রস্তুত হচ্ছে ওয়েলিংটন নাগরিক কল্যান সমিতি। থিম ভাবনায় রয়েছে অভিনবত্ব।
ইতিহাস বলছে আনুমানিক ৫৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লৌহ যুগের সমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু আদৈও কী আমরা সেই যুগ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি? সবুজকে ধ্বংস করে ইমারত নির্মাণের নেশায় মরিয়া আমরা। কতটা খেয়াল রাখি আমরা আমাদের এই প্রকৃতির! সবুজের ধ্বংস মানেই প্রাণের অবলুপ্তি। আর তাই জীবনকে বাঁচানোর তাগিদে সবুজকে রক্ষা করা একান্তভাবেই প্রয়োজন। শুধুমাত্র বিলাসবহুল আবাসনের এক কোনে মানিপ্ল্যান্ট রোপণ নয়, প্রকৃতি বাঁচানোর অঙ্গীকারকে সামনে রেখেই বিশেষ বার্তা দিতে চলেছে ওয়েলিংটন নাগরিক কল্যান সমিতির এবারের পুজো।
আরও পড়ুন: < সমাজসেবী পাপিয়া করের কর্মকাণ্ডকে কুর্নিশ! দুর্গাপুজোর থিম এবার ‘ভাগাড়ের মা’! >
পুজোর পরিকল্পনায় রয়েছেন অনির্বান দাস। প্রতিমা নির্মাণ করছেন নব কুমার পাল। পুজো কমিটির এক কর্মকর্তা সুস্মিত বড়ুয়া এবারের পুজো নিয়ে জানালেন, “ আজকে বিপন্ন প্রকৃতি। বিপন্ন মানব সভ্যতা, আমরা সবুজকে ধ্বংস করে কংক্রিটের ইমারত গড়ার নেশায় মজেছি। নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মানব সভ্যতা বিপন্ন হতে বাধ্য”।
তিনি বলেন, “আমদের থিমের মাধ্যমে প্রকৃতি তথা সবুজকে বাঁচানোর বিশেষ বার্তা দেওয়া হচ্ছে। আজ সবুজের কোলাজ কেবলই বিলাসিতার প্রতীক মাত্র । প্রকৃতিকে বাঁচানোর অঙ্গীকার আমাদেরকেই নিতে হবে। ঘরের ছোট্ট কোণে মানিপ্ল্যান্ট রোপণ শুধু নয়। সবুজকে ধ্বংসের বিরুদ্ধে আমাদের গর্জে উঠতে হবে। তথাকথিত আধুনিক শ্রেণী কঙ্কালসার লোহার খাঁচাতেই কী হারাতে বসেছে তাদের মূল্যবোধ? সকল সচেতন মানুষের কাছে এটাই আমাদের প্রশ্ন”।