অনিস মৃত্যুকাণ্ডে নয়া মোড়। উলুবেড়িয়া কোর্টের নিয়ে যাওয়ার সময় চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন আনিসকাণ্ডে ধৃত দুই পুলিশ কর্মী কাশীনাথ বেরা ও প্রতীম ভট্টাচার্য। এদিন ধৃতরা বলেন, 'আমরা নির্দোষ। আমরা ওসি-র নির্দেশে গেছিলাম। আমাদের বলির পাঁঠা করা হয়েছে। আমরা কিছু জানি না।'
বুধবারই আনিসকাণ্ডে আমতা থানায় ওইরাতে কর্তব্যরত হোমগার্ড কাশীনাথ বেরা ও সিভিক ভলান্টিয়ার প্রীতম ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর চলে জিজ্ঞাসাবাদ। জানা গিয়েছে, সেই জেরায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার আমতা থানার ওসি দেবব্রত চক্রবর্তীকে ভবানী ভবনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যদিও ধৃতরা প্রকাশ্যে জানাননি যে, যাঁর কাছ থেকে নির্দেশ এসেছিল তিনি আমতা থানারই ওসি।
ধৃত দুই পুলিশকর্মী হোমগার্ড কাশীনাথ বেরা ও সিভিক ভলান্টিয়ার প্রীতম ভট্টাচার্যকে উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালত ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। শুক্রবারই হতে পারে টিআই প্যারেড।
বাড়িতে পুলিশের পোশাকে তিন জন ঢুকে জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আনিস খানকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে খুন করেছে। গত শুক্রবারই ঘটনার পর এই অভিযোগ করেছিলেন তাঁর বাবা সালেম খান। তাঁর নিশানায় ছিল পুলিশ। যদিও প্রথমে হাওড়ার (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তা অস্বীকার করেন। দাবি করেন যে, ওই রাতে কোনও পুলিশকর্মী আনিস খান নামে কোনও ব্যক্তির বাড়িতে যাননি ও যাওয়ার নির্দেশও ছিল না। কিন্তু, পুলিশের পোশাকে তিনজনের বাড়িতে ঢোকার বিষয়টিতে অনড় থাকেন মৃত ছাত্র নেতার পরিবার।
আরও পড়ুন- পুলিশি পদক্ষেপেও খুশি নয় আনিসের পরিবার, এবার কোর্ট নজরে CBI তদন্তের দাবি বাবার
এরপরই উত্তাল হয় রাজ্য। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে আনিসের গ্রাম। পুলিশকে প্রবেশে বাঁধা দেওয়া হয়। ক্রমেই তাঁর জের ছড়ায় কলকাতা সহ রাজ্যজুড়ে। ঘটনা ও অভিযোগের ব্যপকতা আঁচ করে আনিসকাণ্ডের তদন্তে সিট গঠন করে রাজ্য পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী নিজে সেই কথা ঘোষণা করেন। নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাসও দেওয়া হয়। যদিও আনিসের বাবা সালেম খান ও দাদা সাবির ঘটনায় রহস্য উদঘাটনে সিবিআই তদন্তের দাবি করেছেন। পরিবারের যুক্তি, যে পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ, তারা কীভাবে তদন্ত করবে?
যদিও সিট তদন্ত শুরু করেছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আমতা থানার ওসি থেকে নীচুস্তরের পুলিশ কর্মীদেরও। মঙ্গলবার ওই থানার এক এএসআই সহ তিন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়। বুধবার গ্রেফতার করা হয় সাপেন্ডেড হোমগার্ড কাশীনাথ বেরা ও সিভিক ভলান্টিয়ার প্রতীম ভট্টাচার্যকে। বৃহস্পতিবার ধৃতদের তোলা হয়েছে উলুবেড়িয়া আদালতে। আদালতে যাওয়ার সময় মুখ ঢাকা অবস্থায় ধৃতারা দাবি করেন যে, 'আমরা নির্দোষ। আমরা ওসি-র নির্দেশে গেছিলাম। আমাদের বলির পাঁঠা করা হয়েছে। আমরা কিছু জানি না।'
গ্রেফতার হওয়া দু'জন কী ঘটনার দিন রাতে আনিস খানের বাড়িতে গিয়েছিলেন? তা তদন্তসাপেক্ষ বলে জানিয়েছেন ডিজি মনোজ মালব্য। কিন্তু, ধৃতদের বয়ানে কার্যত সাফ হয়ে গেল যে, ওই দু'জন গত শুক্রবার রাতে আনিস খানের বাড়িতে গিয়েছিলেন।