বাজিশিল্পে তাঁর বিরাট নামডাক। রঙিন তুবড়ি, গাছবোমা, ছুঁচোবাজি হোক বা রংমশাল, হাওয়াইয়ের প্রতিযোগিতায় তাঁর বাজি সবসময় সেরার সেরা। বিভিন্ন প্রদর্শনীতে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছিল কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানুর বাজির কেরামতি। বাংলা ছাড়িয়ে সুখ্যাতি পড়শি রাজ্য ওড়িশাতেও ছড়িয়েছে। গত তিন দশক ধরে বহু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। অন্যদের ঈর্ষার কারণও হয়ে ওঠেন। এগরার সেই বাজিসম্রাট ভানু বাগই এখন বিতর্কের কেন্দ্রে।
Advertisment
মঙ্গলবার বেলায় এগরা ১ ব্লকের সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের খাদিকুল গ্রামে তাঁর বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। বাজি বানাতে গিয়ে প্রাণ হারালেন ৯ জন। যাঁদের অধিকাংশই মহিলা। এই মর্মান্তিক ঘটনার জেরে ফের শিরোনামে ভানু বাগ। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর মুখে তাঁর নাম। আগেও গ্রেফতার হয়েছেন নাকি। কে এই ভানু বাগ, কীভাবে বাজিসম্রাট হলেন তিনি, কেন পুলিশ তাঁর বাজি কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয়দের মুখ থেকে জানা যায়, তিন দশক ধরে বাজিশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ভানু। তাঁর বাজির বিরাট নামডাক। ধীরে ধীরে এলাকার বড় ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে শাসকদলের নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা বাড়ে ভানুর। কিন্তু সরাসরি রাজনীতিতে ছিলেন না তিনি। ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। গ্রামের বাড়িতে তাঁর কারখানা ছিল। সেখানেও কয়েকবার দুর্ঘটনা ঘটে।
পাঁচ বছর আগে গ্রামের বাড়ির কারখানায় বিস্ফোরণে তাঁর ভাই এবং স্ত্রীর মৃত্যু হয়। সেবার বিস্ফোরণের পর কিছুদিন নিরুদ্দেশ ছিলেন তিনি। পরে আবার ফিরে আসেন। ফিরে এসে আবার কারখানা তৈরি করেন। ২৫-৩০ জন শ্রমিক দিয়ে শুরু হয় কাজ। বছর দুই আগে অবৈধ বাজি উদ্ধারে নেমে এগরা থানার পুলিশ হানা দেয় তাঁর কারখানায়। বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ বাজি এবং মশলা বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। গ্রেফতান হন ভানু। কিন্তু বেশিদিন জেলে থাকতে হয়নি। বেরিয়ে এসে আবার ব্যবসায় নেমে পড়েন ভানু।
স্থানীয়দের দাবি, মাথায় শাসকদলের হাত থাকায় ভানুর ব্যবসায় রমরমিয়ে চলছিল। পুলিশও আর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। মাসে মাসে টাকা পেত পুলিশ। বার বার বলা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনার পর স্থানীয়রা ফুঁসছে ভানুর বিরুদ্ধে। যদিও বিস্ফোরণে তাঁরও হাতে চোট লেগেছে বলে খবর। কিন্তু সপরিবারে বেপাত্তা বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ তাঁকে খুঁজছে।