Advertisment

বেহালা থেকে বীরভূম, পেনশনের জ্বালায় মরেও শান্তি নেই

উপায় না দেখে একজন দিনমজুরকে ডেকে আনেন লক্ষ্মীপ্রিয়া। তাঁকে বলা হয়, বাড়িতে জলের প্রয়োজনে এক মানুষের বেশি গভীর গর্ত করতে হবে। ৫০০ টাকার বিনিময়ে ঐ দিনমজুর গর্ত করেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পেনশনের টাকা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাতেই এ কাজ করেছেন মৃতার মেয়ে

কলকাতার পর এবার বীরভূম। মহকুমা শহর সিউড়ির চাঁদনীপাড়ার সরকারী পেনশন ভোক্তা নারায়ণী দাস নিশ্চয়ই ভাবতেও পারেন নি, মৃত্যুর পর তাঁর এই পেনশনের জন্যই তাঁর শবদেহ চিতায় না তুলে গর্তে চাপা দিয়ে দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, এবছরের এপ্রিল মাসে আবিষ্কার করা হয় যে কলকাতার বেহালায় ৮৪ বছরের বীণা মজুমদারের কপালেও জোটেনি অন্ত্যেষ্টি, তাঁর দেহ রাখা হয়েছিল এক বৃহৎ ফ্রিজারে। কী উদ্দেশ্যে? সেখানেই আশ্চর্য মিল।

Advertisment

গত ৯ ডিসেম্বর দীর্ঘদিন হৃদরোগে আক্রান্ত নারায়ণী দেবী মারা যান নিজের বাড়িতেই, যেখানে তাঁর সঙ্গে থাকতেন তাঁর মেয়ে লক্ষ্মীপ্রিয়া এবং ছেলে সেবাপ্রিয়, যিনি আংশিকভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন। দুজনের কেউই মায়ের মৃত্যুর পর হাসপাতাল বা চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নি, এমনকি পাড়া প্রতিবেশীদেরও জানান নি। কেন? কারণ মায়ের মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে সরকারি পেনশন বন্ধ হয়ে যাবে, এই নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন লক্ষ্মীপ্রিয়া।

আরও পড়ুন: চিতার হানায় শিশুমৃত্যু, সেমসাইড গুলিতে আহত বনকর্মী

কিন্তু দুদিন মৃতদেহ বাড়িতে রাখার পর পচনের গন্ধ বেরোতে শুরু করে। উপায় না দেখে একজন দিনমজুরকে ডেকে আনেন লক্ষ্মীপ্রিয়া। তাঁকে বলা হয়, বাড়িতে জলের প্রয়োজনে এক মানুষের বেশি গভীর গর্ত করতে হবে। ৫০০ টাকার বিনিময়ে ঐ দিনমজুর গর্ত করেন। এরপর সেই গর্তেই নিজের মাকে পুঁতে ফেলেন লক্ষ্মীপ্রিয়া। গর্তের ওপরে সিমেন্টের ছোট্ট বেদীও নিখুঁতভাবে বানানো হয়। ঠিক একইভাবে বেহালার বীণা দেবীর পুত্র শুভব্রতও মায়ের দেহ সংরক্ষণ করেছিলেন, তবে মাটির নিচে নয়, ফ্রিজারে। সেখানেও ভয় একই। পেনশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার।

বৃহস্পতিবার সিউড়িতে এলাকাবাসীদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশের জেরার মুখে লক্ষ্মীপ্রিয়া স্বীকার করেন, তাঁর মাকে তিনি "সমাধি" দিয়েছেন। কিন্তু মৃতদেহ শ্মশানে দাহ না করে কেন এমন কাজ করলেন? তাঁর জবাব, সরকার তার মায়ের পেনশনটা বন্ধ করে দিলে, কিভাবে অসুস্থ দাদার চিকিৎসা করাতেন, আর তাঁদের চলতই বা কি করে?

নিজের মায়ের মৃত্যু সংবাদ চাপা দিয়ে নিজেদের বাঁচানোর জন্যই এমন পথ নিয়েছিলেন লক্ষ্মীপ্রিয়া, এমনটাই ধরে নিতে হবে। তবে পুলিশ এত সহজে ছাড়ছে না। তারা জেরা চালাচ্ছে, কারণ তাদের বক্তব্য, একজনের পক্ষে একটি দেহ সমাধিস্থ করা কঠিন। কাজেই লক্ষ্মীপ্রিয়ার সঙ্গে আর কেউ ছিল কী না, জানার চেষ্টা চলছে।

Birbhum
Advertisment