পশ্চিমবঙ্গের করোনা পরিস্থিতি এবং আইনশৃঙ্খলা প্রেক্ষাপটে আট দফার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু যে হারে কোভিড এবং রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা সামনে আসছে তা এবার বাড়তি চিন্তা বাড়িয়ে তুলছে রাজ্যে। এবার অবশ্য বঙ্গবাসীকে সতর্ক করতে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা মাঠে নামলেন।
আগামী দিনে বাংলার পরিস্থিতি কতটা খারাপ হতে চলেছে তা নিয়ে সোমবার রীতিমতো হুঁশিয়ারি দেন চিকিৎসকদের একাংশ। করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের দাপটে রাজ্যের অবস্থা আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলেই জানান হয়েছে। এর মধ্যেই মজুত ভ্যাকসিনের সংখ্যাও শেষ। কোথাও কোথাও ভ্যাকসিন ঘাটতিও দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে চলছে নির্বাচনী প্রচার-সভা।
পরিসংখ্যান বলছে গত তিন দিনে রাজ্যে ১২,৯৯২ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। সোমবার বাংলায় একদিনে ৪,৫১১ জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছে। বাংলায় বর্তমানে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ২৬ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। সংক্রমণের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে পাল্লা দিয়ে। অন্যদিকে কমেছে সুস্থতার হার।
সম্প্রতি রাজ্যের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে করোনা টিকার ঘাটতি দেখা যায়। তা নিয়ে কেন্দ্রকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। এরপরই প্রায় চার লক্ষ ডোজ পাঠানো হয় রাজ্যে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ লক্ষ করোনা টিকা দেওয়া উচিত। কিন্তু সেখানে দেওয়া হয় মাত্র দু'লক্ষ। সোমবার টিকা দেওয়া হয়েছে ২ লক্ষ ৩২ হাজার জনকে।
করোনা প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ চিকিৎসক প্রশ্ন তোলেন যে কেন এই আবহেও এখনও নির্বাচন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে? রাজ্যের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কুণাল সরকার বলেন, "বাংলা জানতে চায় যে কেন আট দফায় জনসমাগম করে নির্বাচন করা হচ্ছে? বাংলায় ক্রমশ বাড়ছে করোনা। বেশিরভাগ হাসপাতালে কোনও বেড খালি নেই!"
সে প্রসঙ্গে ইতিহাসের প্রেক্ষিতকেও তুলে ধরেন চিকিৎসক। ডাঃ কুণাল সরকারের কথায়, "নির্বাচনের পরে বাংলার পরিস্থিতি কলিঙ্গ যুদ্ধের মত না হয়ে পড়ে। এমন না হয় যে লক্ষ লক্ষ মৃতদেহের বিনিময়ে করোনা জয় হয়। আমি ভাবছি বাংলার ভবিষ্যতের মুখ্যমন্ত্রীর নিয়তি যেন এমন না হয়।"
চিকিৎসকের মতে প্রথম পর্যায়ের করোনা লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের মাধ্যমে রাজ্যে বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল করোনার। এবার পরিযায়ী রাজনীতিবিদদের জন্য বাড়ছে কোভিড। এই পরিস্থিতিতে লকডাউনের কথা ভাবার চেয়ে হাওড়া ব্রিজ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া আরও ভাল। বর্তমানে সংক্রমণের হার প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। এদিকে, নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলিকে জনসভা ও সমাবেশে কোভিড নিয়ম মেনে করতে বলেছিল। কিন্তু চিকিৎসক মহল সাফ জানিয়েছে প্রতিটি দলই সুরক্ষা ব্যবস্থা উড়িয়ে নির্বাচন চালাচ্ছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন