Advertisment

রাজ্যে শীর্ষ স্বাস্থ্য আধিকারিক করোনা আক্রান্ত, স্বাস্থ্য সচিবকে কোয়ারান্টাইনে পাঠানোর ভাবনা

শীর্ষ আধিকারিকের সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে রাজ্য সরকারকে। তাঁর অন্তত ১৮ জন সহকর্মী, পরিবারের সদস্য, এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসককে কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
coronavirus meeting nabanna

১৬ এপ্রিল নবান্ন সভাঘরে করোনাভাইরাস নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মন্ত্রীগোষ্ঠী। নিজস্ব চিত্র

শনিবার রাজ্যে যে ২৩ জনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতরের ৫২ বছর বয়সী এক শীর্ষ আধিকারিক, এবং একটি ২১ মাসের শিশু। এই নিয়ে রাজ্যে সক্রিয় করোনাভাইরাস কেসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৮; মৃতের তালিকায় সংযোজন হয়েছে আরও দু'জনের, ফলে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে মৃত ১২ জন।

Advertisment

নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের মুখ্য সচিব রাজীব সিনহা বলেন, "গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ জন নতুন COVID-19 পজিটিভ রোগীর খবর পাওয়া গিয়েছে, এবং রোগমুক্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন সাতজন। বর্তমানে রাজ্যে সক্রিয় কেসের সংখ্যা ১৭৮, সেরে উঠেছেন মোট ৬২ জন।" সক্রিয় কেস-এর হিসেব করা হচ্ছে রোগমুক্ত এবং মৃতদের বাদ দিয়ে। তবে নতুন করে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে জেলাওয়ারি হিসেব এখনও দেয় নি রাজ্য।

আরও পড়ুন: কেরালায় বাংলার শ্রমিকদের করোনার কবল থেকে বাঁচাতে এল ‘বন্ধু’

ওই শীর্ষ আধিকারিকের সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে রাজ্য সরকারকে। তাঁর অন্তত ১৮ জন সহকর্মী, পরিবারের সদস্য, এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসককে কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে তাঁদের লালারসের নমুনা করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই আধিকারিক আপাতত বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

এক সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য সচিব, ডিরেক্টর অফ মেডিক্যাল এডুকেশন, এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ আমলার সঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনে একাধিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ওই আধিকারিক। তাঁদের কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হবে কিনা, সে সম্পর্কে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, রাজ্যে চিকিৎসা সরঞ্জাম বণ্টনের ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা ছিল সংক্রমিত ওই আধিকারিকের।

শনিবার নভেল করোনাভাইরাসের কবলে পড়ে কলকাতার গার্ডেন রিচ জেনারেল হাসপাতালও। এক সাফাইকর্মী ও দুজন নার্সের সংক্রমিত হওয়ার খবর এসেচ্ছে সেখান থেকে। কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়েছে হাসপাতালের অন্তত ১৫ জন কর্মীকে। এর আগে হাসপাতাল সংলগ্ন গার্ডেন রিচ থানার এক পুলিশ আধিকারিকের আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়েছে থানার সমস্ত কর্মীকে।

স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, "এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জন ডাক্তার এবং ২৫ জন নার্স করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।"

আরও পড়ুন: করোনায় অতি স্পর্শকাতর হাওড়ায় সশস্ত্র পুলিশ নামানোর ভাবনা রণংদেহী মমতার

দফতরের আরেক আধিকারিক জানিয়েছেন, শনিবার যে ২১ মাসের শিশুটির দেহে করোনাভাইরাসের জীবাণু পাওয়া যায়, তার পরিবারের আর কারোর দেহে এখনও করোনার উপসর্গ পাওয়া যায় নি। দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা ওই শিশুটিকে ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, "শিশুটির বর্তমান অবস্থা স্থিতিশীল, তবে আমরা ওকে বিশেষ আইসোলেশন ওয়ার্ডে নজরদারিতে রেখেছি।"

শিশুটির পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে রাজারহাটের কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। এঁদের মধ্যে রয়েছে চারটি শিশু ও দুজন বয়স্ক সদস্য। শিশুটির মা তার সঙ্গে হাসপাতালেই আছেন, এবং তার বাবাকে রাজারহাটের কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে খবর। ওই দম্পতির দুই মেয়ের বয়স চার এবং ছয় বছর। শিশুটির বাবা গত ২৮ মার্চ ঝাড়খণ্ড যান, তাঁর দুর্ঘটনাগ্রস্ত ছোট ভাইকে কলকাতা নিয়ে আসতে, জানাচ্ছেন ওই আধিকারিক।

মুখ্য সচিব রাজীব সিনহার দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্যের অধিকাংশ করোনা সংক্রমণই এসেছে হাওড়া, উত্তর কলকাতা, এবং উত্তর ২৪ পরগণার কিছু অংশ থেকে।

তিনি জানান, হাওড়ায় ৫৮০ জনের করোনা পরীক্ষার পর ৬২ জনের দেহে মিলেছে সংক্রমণ। অর্থাৎ হাওড়ায় ১০ শতাংশের বেশি 'পজিটিভিটি রেট' বা শতকরা সংক্রমণের হার রাষ্ট্রীয় গড়ের প্রায় দ্বিগুণ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ৩০০ টি নমুনার মধ্যে ১৮ টি পজিটিভ, অর্থাৎ সংক্রমণের হার ৬ শতাংশ।

আরও পড়ুন: করোনার দাপটে কোণঠাসা কলকাতার দুর্গাপুজো, কী বলছেন উদ্যোক্তারা?

রাজ্যে যথেষ্ট পরিমাণ পরীক্ষা হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ তুলেছে বিরোধী দলগুলি, এবং NICED-এর অধিকর্তা স্বয়ং, তা খণ্ডন করে সিনহা বলেন, "আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে পরীক্ষা করছি। কিছু ল্যাবরেটরি দাবি করছে যে তারা দিনে ২৫০-র বেশি পরীক্ষা করতে পারে, যা সত্যি নয়। কিছু ক্ষেত্রে ল্যাবে নমুনা পৌঁছতে বিলম্ব হয়েছে। এই সমস্যার সমাধান করতে আমরাও চাই যে রাজ্যে আরও টেস্টিং ল্যাবরেটরি খোলা হোক। সেক্ষেত্রে পরীক্ষার পরিমাণও বাড়ানো যাবে।" তবে তিনি এও বলেন যে পরীক্ষার পরিমাণ বাড়ানোর পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কর্মীর অভাব।

মুখ্য সচিবের দাবি, করোনা মোকাবিলায় কজে কোনোরকম চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত রাজ্য। তিনি বলেন, "আমাদের কাছে ৬৬টি COVID-19 হাসপাতালে ১,৫০০ ভেন্টিলেটর এবং ৭,৯৬৯ টি বেড রয়েছে। এখন পর্যন্ত স্রেফ ১৭৮ টি বেড-এ রোগী রয়েছেন। সুতরাং যে কোনও পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত।"

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে ৩.৭৫ লক্ষ পিপিই (personal protective equipment বা PPE) কিট, ২.৩৮ লক্ষ N95 মাস্ক, ১৬.৪ লক্ষ সাধারণ মাস্ক, ৭.৪২ লক্ষ গ্লাভস এবং ৭৯ হাজার লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হয়েছে।

সিনহার দাবি, রাজ্য র‍্যাপিড টেস্টিং-এর জন্য প্রস্তুত, কিন্তু এখনও কোনও কিট আসে নি। "র‍্যাপিড টেস্ট কিট পেলেই আমরা কন্টেইনমেন্ট এলাকাগুলিতে নজর দেব। হাওড়া, উত্তর কলকাতা, এবং উত্তর ২৪ পরগণার বহু এলাকায় আমরা জরুরি সামগ্রীর বাড়ি বাড়ি ডেলিভারি করানোর চেষ্টা করছি। এর পর আমরা স্বাস্থ্য, সিভিল, এবং পুলিশ কর্মীদের নিয়ে একটি যৌথ দল গঠন করব, যাঁরা এইসব এলাকায় গিয়ে যথেচ্ছ চেকিং করবেন।"

সিনহা এও বলেন যে কোনও বেসরকারি হাসপাতালকেই করোনাভাইরাস রোগী ভর্তি করতে বারণ করা হয়নি, তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বিধি মানা আবশ্যক। তাঁর কথায়, "আমরা সমাজের সমস্ত স্তরের কাছ থেকে সমর্থন পাচ্ছি। বহু বেসরকারি হাসপাতাল COVID-19 রোগী ভর্তি করার অনুমতি চেয়েছে। আমরা কোনও হাসপাতালকে নিষেধ করি নি, হাসপাতাল বন্ধ করতেও বলি নি। তারা পরিষেবা দিতেই পারে, তবে চিকিৎসা বিধি এবং সামাজিক দূরত্ব-বিধি মেনে।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Advertisment