স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া করোনা পরিসংখ্যান দেখে খুশি হওয়ার কথা রাজ্যবাসীর। রবিবার রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্তর সংখ্যা ৮৩৫। আর সুস্থতার সংখ্যা ২,০৮৩। কিন্তু, মৃত্যুর সংখ্যাটা কেন যেন কিছুতেই কমছে না। রবিবারও রাজ্যে করোনায় নতুন করে ৩৪ জনের মৃত্যু হল। আর তাতে রাজ্যে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২০,৮২৩ হয়ে গেল। স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব অনুযায়ী, মৃত্যুর হার ১.০৪ শতাংশ।
এর মধ্যে আবার উদ্বেগজনক হল যে রাজ্যে রবিবার করোনার স্যাম্পেল পরীক্ষার সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। মাত্র ২৫ হাজার স্যাম্পেল টেস্ট হয়েছে। আর, তাতেই নতুন করে সংক্রমিত ৮৩৫। তাই, সরকারি পরিসংখ্যান একটু খতিয়ে দেখলে অনেকেই স্বস্তি পাচ্ছেন না। বরং উদ্বেগ থাকছে এই কারণে যে একদিনের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। শনিবার রাজ্যে করোনায় মৃত্যু হয়েছিল ৩১ জনের। রবিবার সংখ্যাটা তো কমেইনি। বরং, অতিরিক্ত আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা, স্যাম্পেল পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে, কীভাবে যে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে, তা যেন শনিবারই প্রমাণ করে দিয়েছে। শনিবার রাজ্যে করোনার স্যাম্পেল পরীক্ষা হয়েছিল ৩৬,৭৭২ জনের। তাতে নতুন করে ১,৩৪৫ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। মৃত্যুহার কমেনি। শনিবারও এই হার ছিল ১.০৪ শতাশ।
এবার যদি তার আগের দিন, অর্থাৎ শুক্রবার ৪ ফেব্রুয়ারির কথায় আসি, তবে যেন আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে যে স্যাম্পেল টেস্ট বাড়লে করোনা সংক্রমণও বেশি করে ধরা পড়ছে। শুক্রবার রাজ্যে করোনার স্যাম্পেল পরীক্ষা হয়েছিল ৪৯,১৫২ জনের। নতুন সংক্রমিতর সংখ্যাও ছিল রবিবার এমনকী, শনিবারের চেয়েও বেশি ১,৫২৩ জন। শুক্রবার আবার করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৫ জন। মৃত্যুর হার সেই শনি ও রবিবারের মতোই ১.০৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন কমলেও বাংলায় করোনায় দৈনিক মৃত্যু ৩০-র উপরেই, আরও নিম্নমুখী আক্রান্তের সংখ্যা
এর মধ্যে আবার শনিবার সরস্বতী পুজো উপলক্ষে উৎসবের আনন্দে ভেসেছে রাজ্যের পড়ুয়া সমাজের একাংশ। বাগদেবীর আরাধনার পাশাপাশি বাঙালির ভ্যালেন্টাইনস ডে বসন্ত পঞ্চমী। তাই মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশিকায় নিজেরাই ছাড় নিয়ে নিয়েছিলেন অনেক পড়ুয়াই। তাতে সংক্রমণ কতটা ছড়িয়েছে, তা জানার সুযোগ ছিল রবিবার স্যাম্পেল টেস্ট বাড়লে। কিন্তু, সেটা না-হওয়ায় তথ্যটা কার্যত স্বাস্থ্য দফতরের নাগালেই এল না। এমনটাই মনে করছেন চিকিৎসক মহলের একাংশ।
সবচেয়ে বড় বিষয় হল, রাজ্যের পড়ুয়াদের অনেকেরই এখনও দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় করোনা সংক্রমিত হলে, তাদের সুরক্ষাও কম। পাশাপাশি, রাজ্যবাসীর সামনে আরও একটা বড় ইভেন্ট রয়েছে- পুরভোট। তার টিকিট না-পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ থেকে শুরু করে প্রচারে করোনা নির্দেশিকাকে থোড়াই কেয়ারের মনোভাব। সব মিলিয়ে অতিমারির সামনে কর্ণের কবচের মতো অনেকেই নিজের সুরক্ষা নিজেই নষ্ট করছেন। স্যাম্পেল টেস্ট বাড়লেই যেন সেসব প্রকাশ পেয়ে যাবে। এমনই আশঙ্কা রয়েছে এরাজ্যের বহু নাগরিকেরই।