/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2021/12/Untitled-design-2021-12-31T195407.615.jpg)
কাল থেকেই রাজ্যে জারি বিধিনিষেধ, এই নিয়ম কী পারবে সংক্রমণ ঠেকাতে! ছবি- শশী ঘোষ
গত চারদিনে রাজ্যে বিদ্যুৎ গতিতে বেড়েছে সংক্রমণ। পরিণাম বাড়তে থাকা করোনা গ্রাফ। বেড়ে চলা সংক্রমণে লাগাম টানতে আগামীকাল থেকেই জারি করা হচ্ছে একগুচ্ছ বিধিনিষেধ। আজ নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে একথা জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব।
কিন্তু কেন মানুষের এই বেপরোয়া মনোভাব? জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে দেশের চিকিৎসকরা বারবার সতর্ক করলেও তাঁদের সাবধানবাণীকে উপেক্ষা করে একশ্রেনীর মানুষ মেতেছে উৎসবের আলো আধারির খেলায়। সাবধানবানী তো ছিলই। তাহলে? সকলে ভেবেছিল টিকার একটা ডোজ তো হয়ে গেছে, কারও বা দুটো। আর কতদিন এভাবে ঘরবন্দী থাকা যায়! বারণ সত্ত্বেও হাফিয়ে ওঠা ঘরবন্দী মানুষের উৎসবের আনন্দের জোয়ারে গা ভাসানোর পরিণতি ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন তাবড় চিকিৎসকরা। বাস্তবে হয়েছেও তাই। রাজ্যে ঝড়ের গতিতে বেড়েছে সংক্রমণ। রাজ্যে জারি নয়া এই বিধিনিষেধ কী পারবে ওমিক্রন-ডেল্টার দাপট আটকাতে কী বলছেন চিকিৎসকরা।
বিশিষ্ট চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, ‘আমাদের রাজ্যে দৈনিক টেস্টের সংখ্যা কম। টেস্টের সংখ্যা বাড়ালে আক্রান্তের সঠিক সংখ্যাটাও সামনে আসবে’। অন্যদিকে তিনি এই নয়া বিধিনিষেধ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘বাস্তবে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা একাবারেই অবৈজ্ঞানিক। তাঁর মতে যেখানে ভিড় এড়িয়ে চলার কথা বলা হচ্ছে তা না করে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে আরও বেশি করে ভিড় হয়’। ট্রেনের সংখ্যা কমালে মানুষ বাসে ভিড় করবে আর তা থেকে বাড়বে সংক্রমণ। এই বিধিনিষেধ কতটা করোনার প্রকোপ কমাতে পারবে জানিনা তবে এর ফলে সাধারণ মানুষের হয়রানি বাড়বে অনেকাংশেই’।
এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অনেক আগে থেকেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যা বারবার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে সাবধান করলেও সরকার কার্যত উৎসবের দিনগুলিতে কোনরকম ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফল আজ আমদের সকলকে ভুগতে হচ্ছে। অনেক আগে থেকেই বিধিনিষেধ জারি করা হলে আজ এই আতঙ্ক নিয়ে আমাদের বাঁচতে হত না । সেই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন’।
অন্যদিকে বিশিষ্ট চিকিৎসক সুমন পোদ্দারের গলায় আতঙ্কের সুর। তাঁর কথায়, ‘টিকা এবং মানুষের বেপরোয়া মনোভাবের মাঝে যে কোনও সময়েই উঁকি দিতে পারে বিপদ। তা জানা সত্ত্বেও কিছু সংখ্যক মানুষের বেপরোয়া মনোভাবে চিকিৎসক সমাজ শঙ্কিত। রাজ্যে জারি হওয়া নয়া এই নিয়মকানুন নিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনার যে চেইন বৃদ্ধি পেয়েছে তা যে কোন উপায়ে ভাঙতে হবে। তা না হলেই বিপদ’। মাত্র কয়েক দিনেই যে বিশেষ ফল হবে বলে মনে করছেন না তিনি। তার কথায় ‘এই চেইন ভাঙতে হলে একটানা কিছুদিন কোঠর বিধিনিষেধ প্রয়োজন’।
অন্যদিকে বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অমিতাভ নন্দী বলেন, ‘বিধিনিষেধ মানেই যে সব ভাইরাস মরে যাবে বিষয়টা এমন নয়। আমাদের বুঝতে হবে যে লকডাউন বা করোনাকালীন বিধিনিষেধ হচ্ছে চেয়ারের একটি পা–এর মতো। এর সঙ্গে আরও তিনটা পা থাকলেই চেয়ারটা দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে। লকডাউন বা করোনাকালীন বিধিনিষেধ একা একা কখনোই কাজ করে না—এর সঙ্গে আরও কিছু পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নিলেই ভাইরাস বা যেকোনো মহামারির বিরুদ্ধে একটি কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। কঠোর বিধিনিষেধ যা করে তা হচ্ছে সংক্রমণের হার বৃদ্ধিকে কমায়। সংক্রমণ বাড়ার কার্ভটিকে সোজা করে দেয়’।
এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন ‘যেমন ধরুন, কলকাতায় ১০ লাখ লোক একই সঙ্গে সংক্রমিত হল, তার ২০ শতাংশ মানে ২ লাখ মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করার এবং ৫০ হাজার মানুষকে আইসিইউতে ভর্তি করার প্রয়োজন দেখা দেবে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে যদি তা হয়, তবে কলকাতা কেন বিশ্বের কোনো শহরের চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থাই এর চাপ নিতে পারবে না। কারণ এত জরুরি রোগীর একসঙ্গে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা কার্যত অসম্ভব।
এমন কিছু যদি ঘটে তবে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটবে এবং তা ঠেকানো যাবে না। আর তা যাতে না ঘটে তার জন্যই করোনা বাড়ার যে চেইন তাকে ভেঙ্গে ফেলতেই বিধিনিষেধ অথবা লকডাউন করা হয়। এর সঙ্গে আমাদের পরীক্ষার সুযোগ বাড়ানো, হাসপাতালের শয্যা, আইসিইউর সংখ্যা বাড়ানো, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিন্ত করা, চিকিৎসক–নার্সদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া, তাঁদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পিপিই কিট নিশ্চিন্ত করতে হবে। করোনাকালীন বিধিনিষেধ চেয়ারের একটা পা হলে এই সক্ষমতা বৃদ্ধি, অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিন্ত করা, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রস্তুত করার বিষয়টি হচ্ছে বাকি তিনটি পা। এই চার পায়ে ভর করেই বেড়ে চলা এই সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। বাস্তবে এই বিধিনিষেধের ফল কতটা ফলপ্রসু তা জানতে আমাদের কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতেই হবে'।