রাজ্যের সরকারি ও সরকার অনুমোদিত স্কুলগুলিতে যৌন হেনস্থার অভিযোগ রুখতে ১০ পয়েন্টের নির্দেশিকা জারি করতে চলেছে স্কুলশিক্ষা দফতর। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, সরকারি স্কুলে ওই নির্দেশিকা বাধ্যতামূলক করা হবে। পাশাপাশি, বেসরকারি স্কুলগুলিতেও চিঠি দিয়ে নির্দেশিকার কপি পাঠানো হবে।
সম্প্রতি রাজ্যের একাধিক স্কুলে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। সে সবের প্রেক্ষিতেই নড়েচড়ে বসেছে বিকাশ ভবন। শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, সরকার ও সরকার অনুমোদিত স্কুলে এই নির্দেশিকা মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা হবে। বেসরকারি স্কুলগুলিকে সরকার এমন নির্দেশ দিতে পারে না, কিন্তু নির্দেশিকায় যা বলা হয়েছে, তা মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হবে।
দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, "এই ধরনের অভিযোগ সরকারি স্কুলের তুলনায় বেসরকারি স্কুলেই বেশি উঠেছে। কিন্তু সরকার তার দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। তাই এই নির্দেশিকার উদ্যোগ। কেবলমাত্র বিভাগীয় পরিসরে আটকে না রেখে স্কুলে যৌন হেনস্থা বন্ধে আমরা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকেও অর্ন্তভূক্ত করতে চাইছি। সরকারি এবং সরকার অনুমোদিত স্কুলে এই নির্দেশিকা মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা হবে। বেসরকারি স্কুলগুলিকে নির্দেশিকায় যা বলা হয়েছে, তা মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হবে।"
কী রয়েছে সরকারি নির্দেশিকায়?
বিকাশ ভবন জানিয়েছে, যদি কোনও স্কুলে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে, তাহলে সেই সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।
স্কুলে কর্মরত শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে বিকাশ ভবনে পাঠাতে হবে। যারা আংশিক সময়ের কর্মী, তাঁদের সম্পর্কেও একথা প্রযোজ্য।
অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখতে হবে। এই সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিটি স্কুলে রেজিস্টার রাখতে হবে।
আরও পড়ুন, অশান্ত মঙ্গলকোট, তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে গুলি-বোমাবাজি
প্রত্যেক অভিভাবককে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য কয়েকটি ফোন নম্বর দিতে হবে। এর মধ্যে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকা, পরিচালন সমিতির একজন প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ার ক্লাসটিচারের নম্বর থাকতে হবে।
স্থানীয় থানা, বিডিও এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে স্কুলকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
প্রতিটি স্কুলে অ্যান্টি হ্যারাসমেন্ট কমিটি বাধ্যতামূলকভাবে তৈরি করতে হবে।
অ্যান্টি হ্যারাসমেন্টের কমিটির বৈঠকের তথ্য নথিবদ্ধ করতে হবে। ওই নথি পাঠাতে হবে বিকাশ ভবনে।
অতিরিক্ত সময় স্কুল চললে সুপারভাইজারের উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক।
কোনও পড়ুয়ার মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ দেখলে অভিভাবকদের জানাতে হবে।
স্কুলে একাধিক কমপ্লেইন্ট বক্স রাখতে হবে। সেখানে জমা পড়া অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হবে অ্যান্টি হ্যারাসমেন্ট কমিটির বৈঠকে।
বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিটি স্কুলে সিসিটিভি বসাতে হবে।
অভিযোগ পাওয়ার পর স্কুলগুলির কী করণীয়?
বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তের পরিচয় কঠোরভাবে গোপন রাখতে হবে। কোনওভাবেই তথ্যপ্রমাণ (মাইনর ডিটেলস-সহ) নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। অভিযোগ পাওয়ার একদিনের মধ্যে স্থানীয় থানায় তা বাধ্যতামূলকভাবে জানাতে হবে। নিয়মিত যৌনশিক্ষার ক্লাস করাতে হবে। অভিযোগকারী পড়ুয়া অন্য স্কুলে ভর্তি হতে চাইলে সাহায্য করতে হবে।