মহার্ঘভাতা ঘোষণা হলেও থামল না বিতর্ক, বরং বেড়ে গেল আরও। ডিএ প্রশ্নে এই মুহূর্তে তোলপাড় সরকার ও কর্মচারী মহল। রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মেটানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৃহস্পতিবারের ঘোষণা কি 'প্রতারণা', উঠছে প্রশ্ন।
বৃহস্পতিবার বীরভূমের প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘভাতা (ডিএ) জানুয়ারিতেই মিটিয়ে দেওয়া হবে। জানা যাচ্ছে, মূল বেতনের ১২৫ শতাংশ ডিএ হিসাবে পাবেন কর্মীরা। বাড়তি ডিএ-র জন্য সরকারের বছরে খরচ হবে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। তবে বকেয়া মিটিয়েও কেন্দ্রের সঙ্গে ফারাক থাকবে ২৩ শতাংশ ডিএ।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় প্রাথমিকভাবে সরকারি কর্মীদের মুখে হাসি দেখা গেলেও অচিরেই বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করে। রাজ্যের একটি বাম ঘেঁষা সরকারি কর্মী সংগঠন মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের ঘোষণাকে প্রতারণামূলক বলে দাবি করেছে। তাদের দাবি, ৫-৬ মাস আগেই এই ঘোষণা করা হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া, এই ১২৫ শতাংশের মধ্যে আদপে ১৮ শতাংশ ডিএ, আর বাকিটা পে কমিশন যে ১০ শতাংশ ইন্টারিম রিলিফ দিয়েছিল, সেটিকে রূপান্তরিত (কনভার্ট) করে যোগ করা হয়েছে। সংগঠনটি ক্ষোভের সঙ্গে আরও জানায়, মোট ৫৬ শতাংশ বকেয়া থেকে যদি ২৫ শতাংশ সরকার দিয়েও দেয়, সে ক্ষেত্রেও ৩১ শতাংশ বাকি থাকছে এবং জানুয়ারি মাসে কেন্দ্র আরও ৭ শতাংশ ঘোষণা করার পর মোট ৩৮ শতাংশ মহার্ঘভাতা বকেয়া থেকে যাবে। পাশাপাশি, রাজ্য বেতন কমিশন গঠনের বিষয়টি ক্রমশ দীর্ঘায়িত করছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে সংগঠনের তরফে।
সরকারি কর্মীদের আরেকটি সংগঠনের মতে, গতবছর জুন মাসে জামাই ষষ্ঠীর দিন এই মহার্ঘভাতার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল এবং তা ১ জানুয়ারি, ২০১৯ থেকে কার্যকর হবে বলেও জানানোও হয়েছিল। ফলে এই বিষয়টি নতুন নয়, বরং সব সরকারি কর্মীই জানেন বলে দাবি। ডিএ নিয়ে আদালতে যে মামলা চলছে সেখানেও রাজ্যের তরফে এই ঘোষণার কথা আগাম জানানো হয়েছে বলে শোনা গিয়েছে। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, এই পরিমাণ মহার্ঘভাতা (১২৫ শতাংশ যা আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন) ০১/০১/২০১৬ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি, অন্যান্য রাজ্যের সরকারি কর্মীরা এবং ভিন রাজ্য কর্মরত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মীরাও পেয়ে আসছেন। এবার ১ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে তা পাবেন রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা।
এদিকে, কৃষক বিমার সম্পূর্ণ আর্থিক দায় মাথায় নেওয়ার পর লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে মহার্ঘভাতা প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন ঘোষণাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ডিএ ইস্যুতে বৃহস্পতিবার বাম ও বিজেপিকে একযোগে বিঁধেছেন মমতা। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বামেরা ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে কেন এই বকেয়া মেটায়নি? অন্যদিকে, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি-ও কিছুই দিচ্ছে না বরং 'কেড়ে নিচ্ছে' বলেও তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী।