সিঙ্গুরে স্মারক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনে 'শহিদদের স্মৃতিতে'ই এই সৌধটি তৈরি হবে। এই স্মারকটি তৈরি করতে খরচ হবে ৬কোটি টাকা। বুধবার নবান্ন থেকে এ বিষয়ে দরপত্র (টেন্ডার) চাওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ কাজটি হবে রাজ্য পূর্ত দফতরের তত্ত্বাবধানে। জানা যাচ্ছে, টেন্ডার প্রক্রিয়া মিটে যাওয়ার ৩০০ দিনের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। সূত্রের খবর, তিনটি মডেল আগেই পছন্দ করেছিলেন মমতা। এরমধ্যে একটি মডেল চূড়ান্ত হয়েছে।
কেন এমন সিদ্ধান্ত?
রাজনৈতিক মহলের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উত্থানে সিঙ্গুরের অবদান অনস্বীকার্য। সে জন্যই তাঁর সরকারের সিঙ্গুর স্মারক নির্মাণের পদক্ষেপ। কিন্তু, ক্ষমতায় আসার সাড়ে সাত বছর পর হঠাৎ কেন এই উদ্যোগ? ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, মূলত দুটি কারণে তৃণমূল পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার সিঙ্গুর স্মারক মির্মাণের পথে হাঁটছে। প্রথমত, বিজেপি মূর্তি গড়াকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছে। এবার সে পথে সওয়ার হলেন মমতাও। তবে, বিজেপি এ ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব বা পৌরাণিক চরিত্রের মূর্তি নির্মাণ করলেও মমতা সে পথে না হেঁটে 'শহিদদের স্মৃতিতে' স্মারক গড়ে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিশেষ বার্তা দিতে চাইছেন। উল্লেখ্য, এর আগে 'বিজেপির নেতা জয় শ্রীরাম হলে, আমাদের নেতা মা দুর্গা' বলতে শোনা গিয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে। দ্বিতীয়ত, বামেরা সম্প্রতি রাজ্যে কৃষক ও ক্ষেত মজুরদের পদযাত্রায় মানুষের ঢল নামিয়ে নজর কেড়েছে। জাতীয় স্তরেও বামেরা অনুরূপ কয়েকটি মিছিল ও জমায়েতের আয়োজন করে ভাল সাড়া পেয়েছে। 'পুরানো শত্রু' বামেদের এমন বাড়বাড়ন্ত মোটেই মেনে নিতে পারছেন না মমতা। তাই এমতাবস্থায় নিজের কৃষক দরদী ভাবমূর্তি তুলে ধরতে 'সিঙ্গুরের শহিদ'রাই মমতার কাছে শ্রেষ্ঠ বিকল্প।
আরও পড়ুন- বুলন্দশহর রামপুরহাট হবে না: মুকুল রায়
এক নজরে সিঙ্গুর আন্দোলন
সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনকেই রাজ্য রাজনীতিতে পালা বদলের প্রধান অনুঘটক বলে মনে করেন অধিকাংশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক। ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো গাড়ির কারখানার জন্য ৯৯৭ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল তৎকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকার। কিন্তু, বেশ কয়েকজন কৃষক জমি বাবদ ক্ষতিপূরণের চেক নিতে 'অনিচ্ছা' প্রকাশ করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, 'জোর করে জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে'। এরপরই 'অনিচ্ছুক কৃষক'দের পক্ষে আন্দোলনে নামেন তৎকালীন বিরোধীনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৬ সালের ৬ ডিসেম্বর এই ইস্যুতে কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে ২৬ দিনের অনশন করেন মমতা। এই আন্দোলন চরম আকার নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালে সিঙ্গুর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয় টাটা গোষ্ঠী। এরপর নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব-সহ একাধিক ইস্যুতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশেষে ২০১১ সালে দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজ্যের ক্ষমতায় আসে তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট সরকার। উল্লেখ্য, নির্বাচনের আগে মমতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় আসলে সিঙ্গুরের জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতার শপথ গ্রহণের পর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই সিঙ্গুরের অধিগ্রহণ করা জমি কৃষকদের ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু, নানা আইনি জটিলতায় তা সম্ভব না হলেও ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট বাম আমলের জমি অধিগ্রহণকে বেআইনি উল্লেখ করে এবং অধিগৃহীত জমি কৃষকদর ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়।