বীরভূমের রামপুরহাটে মহকুমা শাসক আইএএস অফিসার স্মৃতিরঞ্জন মোহান্তি এবং জেলার পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে তীব্র সংঘাতের জেরে কাল থেকে অশান্ত হয়ে আছে রামপুরহাট। পরিস্থিতি আপাতত সামাল দেওয়া হয়েছে, কিন্তু গোটা ঘটনায় যথেষ্ট বিব্রত রাজ্য প্রশাসন। সূত্রের খবর, ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এসডিও, এসডিপিও, রামপুরহাট থানার আইসি, এবং সিআইকে কম্পালসারি ওয়েটিং এ পাঠাতে চাইছে রাজ্য সরকার। বিষয়টি নবান্ন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, আপাতত জেলা স্তরে মুখ খোলা নিষেধ সমস্ত অফিসারের।
প্রাথমিকভাবে মোহান্তির অভিযোগ, কাজের সূত্রে রামপুরহাট থানায় গেলে তাঁর সঙ্গে চূড়ান্ত দুর্ব্যবহার করা হয়, এমনকী শারীরিক নিগ্ৰহও সহ্য করেন তিনি। ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যার মধ্যে একটিতে দেখা যাচ্ছে, থানার অধস্তন পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে উত্তেজিত বচসা চলছে মোহান্তির।
আরও পড়ুন, বিরোধীদের রাজনীতির একমাত্র হাতিয়ার ছিল সিবিআই, বললেন সুব্রত
পুলিশের পাল্টা অভিযোগ, মহকুমা শাসক তাঁর এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে লক আপে থাকা আসামীদের সঙ্গে জোর করে কথা বলতে চান, যাতে পুলিশ বাধা দিতে বাধ্য হয়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, কয়েদীদের সঙ্গে কথা বলার বা দেখা করার অনুমতি আছে একমাত্র উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদর, অথবা অতিরিক্ত প্রধান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের, তাও পরের জনের ক্ষেত্রে আগে থেকে খবর দিয়ে আসতে হবে। ঘটনার আরেকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মোহান্তি এবং এসডিপিও-র মধ্যে উত্তপ্ত বাদানুবাদ, যেখানে এসডিপিও বলছেন, কয়েদীদের সঙ্গে দেখা করার কিছু প্রক্রিয়া আছে, যা মানতে বাধ্য মোহান্তি।
পুলিশ বনাম প্রশাসন দ্বন্দ্বে বীরভূমের রামপুরহাট সরগরম, মহকুমাশাসকের অধিকার নিয়ে আঙুল উঁচিয়ে প্রশ্ন পুলিশের pic.twitter.com/Y9gUCZ5zds
— IE Bangla (@ieBangla) November 18, 2018
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকারি অফিসারদের সংগঠন কী পদক্ষেপ নিতে চলেছে, তা সোমবার জানা যাবে। শাসকদলের নেতারা ঘটনায় মুখ না খুললেও বিরোধীরা একযোগে বলছেন, একজন আইএএস অফিসার তাঁর "নিজের এলাকার" থানায় গিয়ে যে অভিজ্ঞতার শিকার হলেন, তাতে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
জেলাশাসকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় উদ্বিগ্ন বীরভূম জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন সমস্ত ঘটনার খোঁজ নিচ্ছে।
এর আগে এলাকায় বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছেন মোহান্তি। তাঁর বক্তব্য, এলাকায় নানারকম বেআইনি কার্যকলাপ আটকাতে পুলিশের সাহায্য চেয়েও পাননি তিনি। সূত্রের খবর, এদিন তিনি কিছু নাবালককে থানায় আটকে রাখা হয়েছে, এই খবর পেয়ে থানায় বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে যান, এবং বন্দীদের সঙ্গে কথা বলার দাবি জানান। সেখানে বাধাপ্রাপ্ত হয় ফিরে আসতে হয়েছে তাঁকে।
এদিকে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রামপুরহাটের পাথর শিল্প মালিকরা তাঁদের সমস্ত ইউনিট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। তোলাবাজি ও পুলিশের 'অত্যাচার' প্রসঙ্গে তাঁরা মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই মহুকুমা শাসকের আপাত 'নিগ্রহে' টানা বনধ চালানোর ঘোষণা করা হয়েছে পাথর শিল্প মালিকদের তরফ থেকে।