জগদ্ধাত্রী মানেই চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা। আলোকসজ্জা মানেই চন্দননগর। ফি বছর জগদ্ধাত্রী পুজোর আলোকসজ্জা দেখতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষের ঢল নামে প্রাণের শহর, আলোর শহর চন্দননগরে। সারারাত ঘরেই চলে প্রতিমাদর্শন। করোনা আবহে এবছর জগদ্ধাত্রী পুজোয় থাকছে প্রশাসনিক একাধিক বিধিনিষেধ। তারপরও কতটা ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের কাছে।
চন্দননগর এবং সংলগ্ন অঞ্চল মিলিয়ে পুজোর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। জগদ্ধাত্রী পুজোর খ্যাতি শহরের গণ্ডি অতিক্রম করে পাড়ি দিয়েছে দেশ-দেশান্তরে। জানা যায় চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রর্বত্যক ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরি। প্রায় ২৫০ বছর আগে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পুজো দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি চন্দননগরে চাউলপট্টিতে প্রথম পুজোর প্রচলন করেন।
লক্ষ্মীগঞ্জ প্রতিষ্ঠার কিছুকাল পরই সূচনা হয় এই পুজোর। এটিই চন্দননগরের আদি পুজো নামে পরিচিত। কথিত আছে, এই প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় প্রতিমা জলে পড়তেই দেখা মেলে শুশুক বা সাপের। স্থানীয় বিশ্বাসে, এই দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। উত্তর চন্দননগরের অন্যান্য বড় পুজো গুলির মধ্যে রয়েছে বাগবাজার, খলিসানি কলুপুকুরধার বউবাজার শীতলাতলা, খলিসানি বউবাজার, বিবিরহাট উত্তরাঞ্চল, বোড়ো কালীতলা, বোড়ো পঞ্চাননতলা, বোড়ো দিঘির ধার, বোড়ো তালডাঙা, হেলাপুকুরধার, নাড়ুয়া, বিদ্যালঙ্কার ইত্যাদি।
দক্ষিণ চন্দননগরের সেরা পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম মানকুণ্ডু সার্বজনীন, মানকুণ্ডু নতুনপাড়া, মানকুণ্ডু সার্কাস ময়দান, নিয়োগী বাগান, অম্বিকা অ্যাথলেটিক, অরবিন্দু সংঘ, বারাসাত গেট, লাল বাগান, পাদ্রিপাড়া ইত্যাদি। তবে এবারের বাড়তে থাকা করোনা পরিস্থিতির কারণে বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি থাকছে প্রশাসনের তরফে। জারী থাকছে নাইট কারফিউও। রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জারী থাকবে এই কারফিউ। এছাড়াও গতবছরের মত এবছরেও শোভাযাত্রায় জারী থাকছে নিষেধাজ্ঞা। তবে রাজ্য সরকারের জারি হওয়া এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে আগামী ১২ এবং ১৩ নভেম্বর প্রতিমা দেখার উদ্দেশ্যে শিথিল করা হচ্ছে নাইট কারফিউ। স্বভাবতই খুশির হাওয়া চন্দননগর বাসীদের।
এসবের মাঝে অন্যতম সেরা পুজো ভদ্রেশ্বর তেতুঁলতলা জগদ্ধাত্রী পুজো। সেখানের পুজোর সেরা চমক, বিদায় বেলায় প্রতিমাকে বরণ করেন সেখানকার পুরুষরা শাড়ি পরে। স্থানীয় মতে, তেঁতুলতলার মা জগদ্ধাত্রী খুবই জাগ্রত। তেঁতুলতলার পুজোয় রীতিমতো জাঁকজমক হয়। পুজোয় পুরোহিতই থাকেন প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন। ১৫০টির বেশি বেনারসি দিয়ে দেবীর বস্ত্র তৈরি হয়। দেবীর গায়ের রং এখানেও প্রভাতসূর্যের মতো। তেঁতুলতলার পুজোয় পুরুষরা দেবীকে বিদায়ের সময় বরণ করেন মহিলাদের মতো শাড়ি ও সিঁদুর পরে। কীভাবে এই অদ্ভুত প্রথার উদ্ভব, তা জানা যায় না।
কেউ কেউ বলেন, দাতারাম সুরের কন্যারা যে হেতু পুজো শুরু করেছিলেন, তাই তাঁদের স্মরণে পুজো বারোয়ারি হওয়ার পর থেকে এই ভাবে দেবীবরণ হয়। পুজোর প্রধান পুরোহিতের মতে, সেই সময় ফরাসিরা এবং পরবর্তী কালে ইংরেজরা এই পুজো দেখতে আসতেন। বাড়ির মেয়েরা তাঁদের সামনে বেরোবেন না বলে পুজোর যাবতীয় কাজ করতেন পুরুষরা। সেই থেকেই এই প্রথার জন্ম। তবে এখনও চাউলপট্টি বা তেঁতুলতলার মতো প্রাচীন জগদ্ধাত্রী পুজোগুলির আচার-অনুষ্ঠানে মেয়েরা ব্রাত্য। এই নিয়ে আপত্তিও কম ওঠেনি। তবে আজও বহাল রয়েছে সেই রীতি। এবছর বরণের সেই এক্সক্লুসিভ ভিডিও শুধুমাত্র ieBangla-এ। চোখ রাখুন ieBangla-তে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন