মনের অদম্য জেদ আর কঠোর ইচ্ছাশক্তি যে কোনও কিছুকেই দমিয়ে রাখতে পারে না, তা আরো একবার প্রমাণ করে দেখালেন পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির রঞ্জিত মাহাতো। বয়স ৫৫ ছুঁই ছুঁই। এই বয়সেও ২১ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিলেন এবং তৃতীয় স্থান দখল করলেন।
গত ৯ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রে আয়োজিত হয়েছিল এই প্রতিযোগিতা। রঞ্জিতবাবু প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তাঁর দৌড় শেষ করেন ১ ঘন্টা ২৬ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে।
রঞ্জিতবাবু এর আগেও ছোট বড় বহু প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সফল হয়েছেন
রঞ্জিতবাবুর বাড়ি শালবনির পচাকুয়াতে, পেশায় কৃষক। নিজের সামান্য জমিতে চাষবাস করেই তিনি সংসার চালান। দুই ছেলে, এক মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। একদিকে সাংসারিক কর্তব্য, অপরদিকে দৌড়ের প্রতি অদম্য ভালোবাসা, এই দুইকে সমান্তরালভাবে পাথেয় করে এগিয়ে চলেছেন এই প্রৌঢ়। সংসারের বিভিন্ন কাজ সামলে এখনো নিয়মিত খালি পায়ে সকাল বিকেল দৌড় অনুশীলন করেন।
আরও পড়ুন: মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নজির স্থাপন আলিপুরদুয়ার হাসপাতালের
মহারাষ্ট্র থেকে দৌড়ে সফল হওয়ার পর বৃহস্পতিবার তিনি বাড়ি ফিরেছেন। বিজয়ী দৌড়বীরকে শুভেচ্ছা জানাতে এবং তাঁকে দেখতে তাঁর ছোট্ট উঠোনে ভিড় জমান গ্রামবাসীরা। রঞ্জিতবাবু এর আগেও ছোট বড় বহু প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সফল হয়েছেন। তাঁর প্রতি যখন বয়ে যাচ্ছে শুভেচ্ছার বন্যা, তখন একপ্রকার উদাসীন রঞ্জিতবাবু বললেন, "আরও বড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চাই এবং সফল হতে চাই, দেশের মানুষকে জানাতে চাই, জঙ্গলমহলের মানুষ কোনও অংশে কম নয়।"
দেশের মানুষকে জানাতে চাই, "জঙ্গলমহলের মানুষ কোনও অংশে কম নয়।"
দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মঙ্গল সামান্য বেতনে শালবনী ট্যাঁকশালের অস্থায়ী কর্মী, ছোট ছেলে অমল কলেজ পড়ুয়া। স্ত্রী ভারতী মাহাতো গৃহবধূ। ভারতী দেবীর কথায়, "সত্যি স্বামীর জন্য আমার গর্ব হচ্ছে, অনেক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে উনি এই জায়গায় এসেছেন, অনেকসময় দৌড়ানোর জন্য বুট কিনতে পারেন নি, তবু হার মানেন নি, খালি পায়েই দৌড়ে গিয়েছেন।"
শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো বলেন, "রঞ্জিতবাবু এ জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার সবসময় তাঁর পাশে থাকবে।"