বাংলায় লকডাউনে বেসরকারি বাসের ভাড়ার তালিকা তৈরি করেছিলেন বাস মালিকরাই। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁরা এই তালিকা তৈরি করেছিলেন। এই ভাড়া নিয়ে তাঁরা বৈঠকও করেছেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। ১৫-২০ জন যাত্রী হলে বাসের কী ভাড়া হতে পারে তার তালিকাও তুলে দিয়েছিলেন মন্ত্রীর হাতে। সেই তালিকা অনুযায়ী, কলকাতায় সর্বনিম্ন বাস ভাড়া ২৫-৩০ টাকা। কোনও সংগঠনের তালিকায় সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ২০ টাকা। কিন্তু শনিবার ওই প্রস্তবিত বাসভাড়া বাতিল করলেন খোদ পরিবহণমন্ত্রীই। তাঁর এই ঘোষণায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন বাস মালিকদের সংগঠনগুলি। তাঁদের দাবি, "৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেল রাজ্য সরকার।"
রাজ্যে বেসরকারি বাস, মিনিবাসের ভাড়া বাড়ছে না। বাসের ভাড়া বৃদ্ধি সরকার অনুমোদন করছে না। শনিবার এমনটাই ঘোষণা করেন পরিবহণমন্ত্রী। নন্দীগ্রামের বিধায়ক আরও বলেন, "বেসরকারি বাস পথে না নামলে সরকারি বাস সমস্ত রুট কভার করবে। গঙ্গাসাগর, ফিফা যুব বিশ্বকাপ, বইমেলার মতো বড় চ্যালেঞ্জিং ইভেন্টগুলিতে ভালো পারফর্ম করেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর।" যদিও এই ঘোষণায় হকচকিয়ে গিয়েছেন বাস মালিক সংগঠনগুলির কর্তারা। এক্ষেত্রে বাসের ভাড়া নিয়ে সরকার ‘ভোলবদল’ করল বলেই মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, ভাড়ার তালিকা নিয়ে কোনও যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত না নিয়ে এই ঘোষণা ‘দুর্ভাগ্যজনক’। কোনও ভাবেই ২০ জন যাত্রী নিয়ে পুরনো ভাড়ায় রাস্তায় বাস নামানো সম্ভব নয় বলে তাঁরা জানিয়েছেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে।
শনিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "অনেকে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধিতে বাসের ভাড়া বৃদ্ধির অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কিন্তু ভাড়া বৃদ্ধি সরকার অনুমোদন করছে না। ভাড়া না বাড়িয়ে রাস্তায় বেসরকারি বাস, মিনিবাস নামালে ভাল। আমরা চাই না মানুষের উপর কোনও আর্থিক বোঝা চাপুক। বেসরকারি বাস, মিনিবাস সংগঠনগুলিও মানবিক, তাই মানুষের কথা ভেবে তাঁদের রাস্তায় বাস নামাতে বলা হচ্ছে। তবে ভাড়া বাড়ানো সমর্থন না করলেও তাঁদের সমস্ত সহায়তা প্রদান করবে সরকার। বেসরকারি বাস না নামালে সরকারি বাস দিয়ে কনটেনমেন্ট জোন ছাড়া সব রুট কভার করা হবে। তিনদিন ধরে কলকাতায় ১৫টি রুটে বাস চলছে এক ঘণ্টা অন্তর। প্রথম দিন ৫টি করে ও পরে ৮টি করে বাস দেওয়া হয় প্রতি রুটে। সোমবার থেকে বাস চলবে আধ ঘণ্টা অন্তর। প্রতি রুটে ১৬টি করে বাস দেওয়া হবে।" রাজ্যে বাসভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে কেউ কেউ কাল্পনিক প্রচার শুরু করায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়ে দেন শুভেন্দু।
গণপরিবহণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতেও একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেছে মন্ত্রী। পরিবহণমন্ত্রীর বক্তব্য, ওলা ও উবেরের ১০০টি করে মোট ২০০টি গাড়ি চলছে। আগামী সপ্তাহে এক হাজারটি অ্যাপ নির্ভর ক্যাব রাস্তায় নামবে। নীল-সাদা ও হলুদ ট্যাক্সি মিটারে চলে, তারাও পরিবহণ দফতরের সঙ্গে বৈঠকে ট্যাক্সি চালাতে রাজি হয়েছেন। এছাড়া ট্রাম ও জলপথ পরিবহণ চালুর পরিকল্পনা হচ্ছে। কলকাতার পাশাপাশি এসবিএসটিসি ও এনবিএসটিসির বাসও চলবে।
তবে এদিন পরিবহণমন্ত্রীর বাস ভাড়া না বাড়ানোর ঘোষণায় হতবাক বাস সংগঠনগুলি। জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এটা দুর্ভাগ্যজনক। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার সময় বলেছিলাম ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। আমার জীবনে দেখিনি কোনও দিন মুখ্যমন্ত্রী এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহণমন্ত্রী ১৩ তারিখ বৈঠক করলেন। তিনি বললেন, ভাড়ার তালিকা তৈরি করতে। আমি ভাড়ার তালিকা দিলাম। আমি বললাম, নোটিফিকেশন দেবেন। আজ বিকেল ৫টায় জানতে পারলাম ভাড়া বাড়ানো হবে না। তাহলে আগে ভাড়ার তালিকা কেন চাইলেন? ১৫ মে অর্থাৎ শুক্রবার নয়া ভাড়ার তালিকা জমা দিয়েছি। ভাড়া কত হবে তা বলতে পারতেন। কোনও ভাবেই এই যাত্রী নিয়ে বাস নামানো অসম্ভব।" তপনবাবুর আরও বক্তব্য, "একদিন পরে কী কারণে, কিসের পরিপ্রেক্ষিতে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল ঘুরে গেলেন? রাজ্যে ৪৫ হাজার বেসরকারি বাস চলে। বরং করোনার পরিপ্রেক্ষিতে ডিজেলের সেস সাময়িক তুলে নিতে পারত রাজ্য। কেন্দ্রীয় সরকারকে বলতে পারত ডিজেলের দাম কমাতে।"
ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস ও মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বসু বলেন, "এদিন পরিবহণমন্ত্রীর ঘোষণায় আমরাও বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলাম। পুরনো ভাড়াতে ২০ জন যাত্রী উঠলে জ্বালানীর খরচও উঠবে না। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারকে আমাদের জ্বালানীর খরচ তুলে দিতে হবে। তাহলে রাস্তায় গাড়ি নামবে। তা নাহলে বাস নামবে না।" প্রদীপবাবুর হিসেব, "এখন যে সংখ্যক যাত্রী উঠবে তাতে ১৫০০ টাকা আয় হবে। প্রতিদিন জ্বালানী, চালক ও কনডাক্টরের জন্য খরচ হবে প্রায় চার হাজার টাকা।" এমতাবস্থায় রবিবার জরুরি বৈঠকে বসছে এই সংগঠন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন