Madhyamik 2024 Rank Fifth Arghyadeep Basak: পাঠ্যপুস্তক পড়ার ফাঁকে স্বামী বিবেকানন্দের জীবন ও বাণী সম্মিলিত বই পড়ে বেড়ে যায় মনোবল। আর মনোবল জাগ্রত হতেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য পড়াশোনাকেই ধ্যান জ্ঞান করে ফেলে অর্ঘ্যদীপ বসাক। আর তাতেই মেলে সাফল্য। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর পারুলডাঙ্গা নসরতপুর হাই স্কুলের মেধাবী ছাত্র অর্ঘ্যদীপ এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় পঞ্চম স্থান লাভ করেছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৯১। অর্ঘ্যদীপের এই সাফল্যে বিদ্যালয় শিক্ষকদের পাশাপাশি খুশি তার বাবা-মা। ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার নয়, অর্ঘ্যদীপের লক্ষ্য পদার্থ বিজ্ঞানী হওয়া।
অর্ঘ্যদীপ বসাকের বাড়ি পূর্বস্থলীর নসরতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত হাটশিমলা গ্রামে। তার বাবা হিমাংশু বসাক পেশায় ব্যবসায়ী। হাটশিমলা মোড় এলাকায় তাঁর একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। মা গীতা বসাক জালুইরাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। মায়ের হাত ধরে জালুইডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অর্ঘ্যদীপের পড়াশুনা জীবনের সূচনা হয়। প্রাথমিক স্তরেই অর্ঘ্যদীপের মেধার প্রকাশ ঘটে। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত জালুইডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার পর অর্ঘ্যদীপ পারুলডাঙ্গা নরসরতপুর হাই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসের দ্বিতীয় স্থানাধীকারী হিসেবেই পরিচিত ছিল অর্ঘ্যদীপ। কিন্তু নবম শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষায় সে তাক লাগিয়ে দেয়। নবম শ্রেণীর পরীক্ষায় প্রথম হয়ে সে দশম শ্রেণীতে ওঠে। তারপর থেকেই অর্ঘ্যদীপ মাধ্যমিক পরীক্ষায় তাক লাগানো ফল করার সংকল্প নিয়ে নেয়।
মা গিতাদেবী জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে সব সময় যে বই মুখো হয়ে থাকতো এমনটা নয়। যখন মন চাইতো তখনই পড়তো। কখনও পড়তে বসার কথা বলতে হতো না ছেলেকে। তবে এটাও ঠিক, ছেলে যতক্ষণ পড়তো একেবারে গভীর মনোযোগ দিয়েই পড়তো। মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর অর্ঘ্যদীপ পড়ার সময়টা অনেকটা বাড়ায়। গীতা দেবীর কথায়, 'নবম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীতে ওঠার পর আমার ছেলে স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি পাঁচজন প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়তো। তবে মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রাইভেট টিউটরদের কাছেই পড়তো। আমিও স্কুল সামলে যতটা পারতাম দেখিয়ে দিতাম।'
মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় পঞ্চম স্থানে জায়গা করে নেওয়ার চাবিকাঠি কি? উত্তরে অর্ঘ্যদীপ বলেছে, 'ছোট থেকেই লেখাপড়া শেখার ব্যাপারে আমার বাবা মা আমাকে প্রেরণা জুগিয়ে গেছেন। স্কুলের শিক্ষকদের কাছেও ভীষণভাবে সহায়তা পেয়েছি। পাঠ্যপুস্তকগুলি খুব ভালোভাবে পড়তাম। তবে আমি দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় আমার স্কুলের একজন স্যার আমায় অমৃত বাণী নামে একটি বই পড়তে দেন। তাতে ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেব, সারদা মা এবং স্বামী বিবেকানন্দের জীবন, দর্শন এবং অনেক বাণীর উল্লেখ থাকে। স্কুলের পাঠ্যপুস্তক পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ওই বইটা আমি খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। তাতে আমার মনোবল খুবই বেড়ে যায়। সেই মনোবল কে আঁকড়ে থেকেই আমি মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য পড়াশোনাকেই ধ্যান ধ্যান করে ফেলি। গভীর মনোযোগ দিয়ে প্রত্যেকদিন পড়াশোনাটা চালিয়ে যাই।'
বেশিরভাগ কৃতি ছাত্র-ছাত্রী ভবিষ্যতে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও অর্ঘ্যদীপের লক্ষ্য অনেকের আলাদা। অর্ঘ্যদীপ জানিয়েছে, সে আগামী দিনে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করবে। পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করাই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় সে। পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার ইচ্ছার কথাও শুনিয়েছে অর্ঘ্যদীপ। সবুজায়নের প্রতি আলাদা একটা টান রয়েছে অর্ঘ্যদীপের। তাই গাছ লাগানো ও বাগান তৈরির প্রতি ভাল লাগার কথা জানিয়েছে অর্ঘ্যদীপ।