Advertisment

অবৈধ সম্পর্ক লুকোতে শিশুকন্যাকে গলা টিপে হত্যায় অভিযুক্ত মা, দিদিমা

দ্রুত তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তানিয়ার মা ও দিদিমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মা ফিরোজার বিরুদ্ধে নিজের মেয়েকে খুনের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ২০১, ও ১২০বি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

গ্রেফতারির ঠিক আগে ফিরোজা

মাত্র বছরখানেক আগেই বাংলার এক গণ্ডগ্রাম, পুরুলিয়ার নাদিয়াপাড়ার ঘটনা চমকে দিয়েছিল রাজ্যবাসীকে। নিজের অবৈধ সম্পর্কের পথের কাঁটা মনে করে সাড়ে তিন বছরের মেয়েকে চিরতরে ঘুমের দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল তার নিজের মা। সেক্ষেত্রে মা মঙ্গলা গোস্বামী তার পুরুষ সঙ্গী সনাতন ঠাকুরকে সঙ্গে নিয়েই মেয়ের সারা শরীরে একাধিক ছুঁচ বিদ্ধ করে তাকে তিলে তিলে খুন করেছিল। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ওইটুকু ছোট্ট দেহ থেকে মিলেছিল সাত সাতটি ছুঁচ। শেষ পর্যন্ত বাঁচেনি সেই শিশু। তার সেই পরিণতিতে মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছিল আপামর বাঙালির। সকলেই ভেবেছিলেন, এই বুঝি রে রে করে জাগ্রত হয়ে উঠল সমাজের বিবেক।

Advertisment

বিবেক জাগে নি। শুধু বদলেছে জায়গার নাম, মায়ের নাম। এবার মুর্শিদাবাদের ডোমকলে এক মা আবার ভুল প্রমাণ করল সেই প্রবাদ - "কুসন্তান যদি বা হয়, কুমাতা কদাপি নয়"৷ সন্তান খারাপ হয়, মা কখনও খারাপ হন না।

আরও পড়ুন: ঘরেই সবচেয়ে বেশি বিপদ মেয়েদের: রাষ্ট্রপুঞ্জের সমীক্ষা

মায়ের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর 'অপরাধে' শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হল বছর ছয়েকের আরেক শিশুকন্যার, নাম তানিয়া খাতুন। ঘটনাটি ঘটে ডোমকল থানার অন্তর্গত বর্তনাবাদ বড় মসজিদপাড়া এলাকায়। খবর চাউর হতেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার রাতে শিশুটির দাদু জাহাঙ্গীর শেখ ডোমকল থানায় তাঁর পুত্রবধূ ফিরোজা বিবি ও তার মা মারিয়াম বিবির বিরুদ্ধে তানিয়াকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।

publive-image নিহত শিশু

সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তানিয়ার মা ও দিদিমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মা ফিরোজার বিরুদ্ধে নিজের মেয়েকে খুনের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন), ২০১ (প্রমাণ লোপাট), ও ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। ধৃতদের বুধবার পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজত চেয়ে বহরমপুর আদালতে তোলা হয় বলে পুলিশ জানায়।

ডোমকল থানার আইসি নীহার রঞ্জন রায় এদিন বলেন, "প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, মায়ের সাথে তার পরিচিত কেউ মিলে এই চক্রান্ত করেছে। সেক্ষেত্রে সবদিক খতিয়ে দেখেই পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।" অন্যদিকে মৃতার দাদু জাহাঙ্গীর শেখ বলেন, "ঘটনার কথা মনে করলেই আমার গলা বুজে আসছে। আমরা চাই এই জঘন্য কাণ্ডে যারা জড়িত তাদের চরম শাস্তি হোক। কোনভাবেই যেন তারা ছাড়া না পায়।"

আরও পড়ুন: ২০ মাসের শিশুকন্যার চোখে পেলেট, দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছর সাতেক আগে ডোমকল থানার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত হিতানপুরের পরিযায়ী শ্রমিক রবিউল ইসলামের সঙ্গে সামাজিকভাবেই বিয়ে হয় বর্তনাবাদ মসজিদপাড়ার ফিরোজা বিবির। বিয়ের শুরুতে সব ঠিক থাকলেও বছর দুয়েক ধরে স্বামী কাজের সূত্রে বাইরে যাতায়াত করায় অভিযোগ, ফিরোজার সাথে এলাকারই এক যুবকের বিবাহ বহির্ভূত প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তা জানতে পারেন রবিউল।আর তার পর থেকেই মাস কয়েক ধরে ফিরোজা মেয়ে তানিয়াকে নিয়ে বর্তনাবাদে মায়ের বাড়িতে থাকতে শুরু করে। সেখানেই ওই যুবকের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়।

publive-image শিশুটির মৃতদেহ দেখতে পান এক গ্রামবাসী

এরই মধ্যে সোমবার থেকে তানিয়া নিখোঁজ হয়ে যায়। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। অবশেষে মঙ্গলবার ফিরোজার বাবার বাড়ী থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে ঝোপের মধ্যে গলায় একাধিক কালসিটে পড়া অবস্থায় তানিয়ার মৃতদেহ দেখতে পান এক গ্রামবাসী। পুলিশ খবর পেয়ে দেহ উদ্ধার করে। ময়না তদন্তের জন্য দেহ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

একমাত্র মেয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়া বাবা রবিউল এদিন একটা কথাই বারবার বলতে থাকেন, "একজন মা যে এত জঘন্য কাজ করতে পারে তা কোনওদিন কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না। ওই মা সমাজের কলঙ্ক। সব শেষ হয়ে গেল আমার।"

সামাজিক অবক্ষয়, নাকি অন্য কিছু? এর উত্তর হয়তো কোনও সমাজবিদের জানা। তবে ঘটনাক্রম এখনও অব্যাহত। তাই ক্ষতও সারছে না।

Bengali News
Advertisment