করোনার গ্রাসে মুরগি শিল্প। দোলযাত্রার দিন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ৮০টাকা প্রতি কিলো খুচরো দরে বিকোল ব্রয়লার মুরগি। যদিও আবার অনেক খুচরো বিক্রেতাই কেজি প্রতি একশ টাকা বা তার বেশি দামও নিয়েছেন সুযোগ বুঝে। সব মিলিয়ে করোনা আতঙ্কে ডুবতে বসেছে রাজ্যের পোলট্রি শিল্প। গত তিন সপ্তাহে কমপক্ষে সাড়ে চারশো কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে এই রাজ্যে। জাতীয় স্তরেও ছবিটি একই রকম।
ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই করোনা আতঙ্ক গ্রাস করতে থাকে পোল্ট্রি শিল্পকে। আতঙ্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে ক্রমশ নিম্নগামী হতে থাকে ব্রয়লার মুরগির দাম। কমতে কমতে সোমবার খুচরো মূল্য নেমে গিয়েছে ৮০টাকায়। ওয়েস্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদন মোহন মাইতি বলেন, "যেখানে কিলোপ্রতি পাইকারি দাম থাকে ৮০-৮৫টাকা। সেই দামে খুচরো বিক্রি হচ্ছে! পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩২-৩৫টাকা প্রতি কেজি। ক্ষতির পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সারা ভারতে ব্যবসা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।"
আরও পড়ুন: মুরগী, মটন, সামুদ্রিক মাছে করোনা! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
১০ বছর আগে সারা দেশে এই শিল্পে বার্ষিক লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। এখন তা এসে দাঁড়িয়েছে বছরে ১ কোটি ৪০ লক্ষ কোটি টাকায়। রাজ্যে লেনদেন ছিল বছরে ১৬-১৭হাজার কোটি টাকা। মদন মোহনবাবু বলেন, "সপ্তাহে উৎপাদন মূল্যের ৬০ শতাংশ ক্ষতিতে মুরগি বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসাবে সপ্তাহে গড় ক্ষতির পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা। তিন সপ্তাহে ৬০০ কোটি টাকা। আমাদের হিসাবে কমপক্ষে এই তিন সপ্তাহে সাড়ে চারশো কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে থেকেই বুঝি করোনা আতঙ্কে ক্ষতি শুরু হয়েছে।"
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস সঙ্কট: বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান কি বাতিল করা উচিত?
সারা দেশে প্রায় ৫০ লক্ষ পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে। এ রাজ্যে রয়েছে ৫ লক্ষ। ফেডারেশন মনে করছে, এরপর আর মুরগি চাষ করার সাহস থাকবে না। থাকবে না অর্থও। বাড়তি অর্থ সাহায্য না করলে তিন লক্ষ কৃষক মুরগি পালন করা ছেড়ে দেবে। জানি না এই ক্ষতির পরিমাণ কতটা বাড়বে।
এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের মতে, চিকিৎসক থেকে বিশেষজ্ঞ কেউই দাবি করছেন না যে ব্রয়লার মুরগির মাংস খেলে করোনা আক্রমণের সম্ভবনা আছে। তবু সোশাল মিডিয়ায় এমনভাবে প্রচার করা হয়েছে যে মুরগির মাংসের প্রতি আতঙ্ক জন্মেছে সাধারণ মানুষের। হুহু করে নেমে গিয়েছে মুরগির মাংসের দাম। কেন এভাবে প্রচার করা হল তা নিয়ে সরকারের তদন্ত করা প্রয়োজন। এর পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন