জনস্রোত আছড়ে পড়ল সাগরে, ২৫ লক্ষের ভিড়, মৃত ১

ইতিমধ্যে নামখানা থেকে ফেরিঘাটে আসার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।

ইতিমধ্যে নামখানা থেকে ফেরিঘাটে আসার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ভিড়ের পুরনো রেকর্ড ভেঙে দিয়ে এবার নতুন রেকর্ড গড়তে চলছে গঙ্গাসাগর মেলা। মকর সংক্রান্তির প্রথম দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলায় প্রায় ২৫ লক্ষ পুণ্যার্থী সাগরস্নান সেরেছেন বলে দাবি পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জির। এদিন বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে সুব্রতবাবু বলেন, "সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলায় ২৫ লক্ষের মতো পুণ্যার্থী এসেছেন। মঙ্গলবার সকালে মাহেন্দ্রযোগ, রাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢুকবেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যোগ আছে। মেলা চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।" সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পূর্ত ও যুব কল্যাণ তথা ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চ্যাটার্জি, জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও প্রমুখ।

Advertisment

সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত কচুবেড়িয়া, বেণুবন থেকে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী মেলায় ঢোকেন। অনেকেই আবার একদিন আগে পৌঁছে গিয়েছিলেন সাগরে। মকর সংক্রান্তির মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় পুণ্যার্থীরা। সাগরমেলা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে তৈরি প্রশাসন।

publive-image ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে স্নান। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

পুরো মেলা তদারকির জন্য উপস্থিত আছেন রাজ্যের আটজন মন্ত্রী। এঁদের মধ্যে সাগরে মেলা পরিচালনার জন্য উপস্থিত আছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস এবং শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কাকদ্বীপ লট নং ৮ এ তদারকি করছেন অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ মন্ত্রী রাজিব ব্যানার্জি এবং সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা। কচুবেড়িয়াতে আছেন সংখ্যালঘু দপ্তরের মন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা। নামখানায় উপস্থিত আছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের মন্ত্রী জাভেদ খান। সোমবার সকালে কাকদ্বীপ পৌঁছে যাত্রী পারাপারের তদারকি শুরু করে দেন কলকাতার মেয়র তথা পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

Advertisment

মঙ্গলবার মকর সংক্রান্তির পরে লাখো লাখো পুণ্যার্থী আবার মুড়িগঙ্গা পেরিয়ে কাকদ্বীপ-নামখানা হয়ে কলকাতা ফিরে যাবেন। এই যাত্রাপথে কোনো সমস্যা যাতে না হয়, তার জন্য ফিরহাদ হাকিম এদিন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন। এর পর তিনি বিকালে স্পিডবোটে করে মুড়িগঙ্গা নদী ঘুরে পুণ্যার্থীদের পারাপারের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখেন। ইতিমধ্যে গঙ্গাসাগর মেলাকে কেন্দ্র করে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নামখানা থেকে ফেরিঘাটে আসার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের দাবি।

আরও পড়ুন: ১০০ কোটির বাজেট নিয়ে আকাশপথে নজরদারি সাগরে

সোমবারের সংবাদিক বৈঠকে সুব্রতবাবু বলেন, "সুষ্ঠুভাবে মেলা চলছে। ভারতের কোনোও মেলাতে এত ভালো ব্যবস্থা থাকে না।" এদিন সাগরে কপিল মুনির মন্দিরে পূজা দেন অরূপবাবু। স্নান সারেন শোভনদেব।

কুম্ভ মেলাতে আগুন লাগার ঘটনার পর থেকে সাগর মেলার অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ওয়াই রত্নাকর রাও ও অরূপবাবু খতিয়ে দেখেছেন অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা।

রবিবার বিকেল থেকেই জমছিল ভিড়। অস্থায়ী শেডগুলি থেকে ভিড় উপচে চলে এসেছে খোলা আকাশের নিচে। উত্তুরে হাওয়া আর প্রবল ঠান্ডা উপেক্ষা করে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর মুখে একটাই আওয়াজ, "কপিলমুনি কি জয়। গঙ্গা মাই কি জয়।"

publive-image প্রশাসন আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলন। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

পুণ্যস্নানের মাহেন্দ্রক্ষণ কখন, তা নিয়ে অন্যান্য বছরের মত এবছরও নানা মুনির নানা মত। এবারের ১৪ জানুয়ারি ভোর থেকে স্নান শুরু হয়। এবং তা চলবে ১৫ তারিখ রাত ১১.৩০ পর্যন্ত। এবং ১৫ তারিখে সকাল ৮.২২ মিনিট হল মাহেন্দ্রক্ষণ। সবচেয়ে পুণ্য সময় এটি। পুণ্যের অবগাহনে ডুব দিতে তাই ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন মানুষ। শুধু ভারতবর্ষ নয়, ভারতের বাইরে থেকেও বহু পুণ্যার্থী এসে ভীড় করেছেন গঙ্গাসাগরে। সাগরসঙ্গমে স্নান সেরে কপিল মুনি মন্দিরে পূজা দিয়ে ফিরছেন পুণ্যার্থীরা।

রাতের অন্ধকার বা ভোরের কুয়াশা, কোনোকিছুই বাধ সাধতে পারছে না। ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে কেউ দিয়েছেন গঙ্গায় ডুব, আবার কেউ বা অপেক্ষা করছেন ডুব দেওয়ার জন্য। করবেন নাই বা কেন? তাঁদের কাছে গঙ্গার মতোই গঙ্গাসাগরের মাহাত্ম্য অপরিসীম। কথিত আছে, দেবর্ষি নারদ মহারাজ যুধিষ্ঠিরের কাছে গঙ্গাসাগর তীর্থের মাহাত্ম্য কীর্ত্তন করেছিলেন, বলেছিলেন, দশটি অশ্বমেধ যজ্ঞের পুণ্য এক গঙ্গাসাগর স্নানে অর্জন হয়। আরও বলা হয়, হরিদ্বার, প্রয়াগ ও গঙ্গাসাগর সঙ্গমে গঙ্গা অধিক পুণ্যময়ী। তাই 'সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার'।