Advertisment

বধূ নির্যাতনে এগিয়ে বাংলা, NCRB রিপোর্ট পেশ, কেন বাড়ছে গার্হস্থ্য হিংসা? জানুন

কোভিড কালের বেকারত্ব নাকি অশিক্ষা কী কারণে বাড়ছে সমাজে গার্হস্থ্য হিংসা জানুন কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
ncrb data,ncrb 2021 report,west bengal tops domestic violenc,Domestic violence against women,west bengal domestic violence,national crime records bureau,anti dowry law,violence against women,violence by huusbands and in laws,ncrb west bengal"

বধূ নির্যাতনে এগিয়ে বাংলা, NCRB রিপোর্ট পেশ, কেন বাড়ছে গার্হস্থ্য হিংসা? জানুন

বধূ নির্যাতন, অ্যাসিড হানা, পণ না পেয়ে হত্যায় এগিয়ে বাংলা তথা কলকাতা। সম্প্রতি সামনে এসেছে গার্হস্থ্য হিংসার রিপোর্ট আর তাতে দেখা যাচ্ছে বাংলার পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (National Crime Record Bureau) ২০২১ সালের বধূ নির্যাতন, অর্থাৎ বিবাহিত মহিলার উপর গার্হস্থ্য হিংসার রিপোর্টে বাংলার পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে ধরা পড়েছে। ২০২১ সালে বধূ নির্যাতনে এগিয়ে রয়েছে বাংলা। IPC এর 498A ধারার অধীনে মোট ১৯, ৯৫২টি মামলা, রুজু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পরেই রয়েছে উত্তর প্রদেশ। সেখানে ১৮,৩৭৫ টি মামলা রেকর্ড করা হয় এবং তারপর রয়েছে রাজস্থান যেখানে ১৬,৯৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে একই বছর। 

Advertisment

পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন “তথ্যগুলি দেখায় যে রাজ্যের মহিলারা তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ পুলিশের কাছে জানাতে পারছে। তবে সমাজে গার্হস্থ্য হিংসা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এটা কোন ভাবেই অস্বীকার করা যায় না। তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি এই পরিসংখ্যানের একটা ইতিবাচক দিক রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মহিলারা আগের তুলনায় অনেক বেশি প্রতিবাদের পথে হাঁটতে শিখেছেন”।

পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, যিনি পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের বিশেষ পরামর্শদাতা হিসাবেও কাজ করেন, তিনি বলেছেন যে “প্রতিবেদনটি রাজ্যের মহিলাদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতাকে প্রতিফলিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা, পশ্চিমবঙ্গের মহিলারা, উচ্চস্বরে কথা বলতে ভয় পাই না। আমরা পুরুষদের বিরুদ্ধে, সমাজের বিরুদ্ধে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ভয় পাই না... যা অন্য রাজ্যে হয় না”।

তবে কেন বাড়ছে এই ধরণের গার্হস্থ্য হিংসা? তা নিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ তনিমা বন্দোপাধ্যায় বলেন, “গার্হস্থ্য হিংসা’র পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম কোভিড কালের বেকারত্ব। পাশাপাশি এটাও লক্ষ্যনীয় অল্প বয়সে বিয়ে, হতাশা, আর্থিক সংকট, বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্কও গার্হস্থ্য হিংসা’র জন্য দায়ি।

আরও পড়ুন: < ফেলে দেওয়া সামগ্রী দিয়েই গড়লেন দুর্গাপ্রতিমা, বিক্রির টাকায় অসহায় মানুষের পাশে ‘ভাগাড়ের মা’ পাপিয়া! >

দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজ্যেও বাড়ছে বেকারত্ব। আর সেই কারণে অনেক ক্ষেত্রেই মহিলারা পুরুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করতে পারছেন না। একই সঙ্গে তাদের হাত পাততে হচ্ছে পুরুষদের কাছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে এটাও দেখা যায় স্বামীর তুলনায় স্ত্রী মোটা মাইনের চাকরি করেন সেক্ষেত্রে সম্পর্কে আত্মসম্মান ও সন্দেহ প্রবণতাও গার্হস্থ্য হিংসা’র জন্য দায়ি”।

তাঁর কথায়, “মহিলারা আর্থিকভাবে স্বাধীন একথা আমরা এখনও বলতে পারি না। অনেক পরিবারেই দেখা যায়, স্বামী তার শ্বশুর বাড়ি থেকে স্ত্রীকে টাকা আনার জন্য চাপ দিচ্ছে তা না পেলেই স্ত্রীর প্রতি তার ক্ষোভ জন্মায় যা থেকে গার্হস্থ্য হিংসা দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলারাই গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হন”।

অপরদিকে দীর্ঘদিন মানসিক স্বাস্থ্য কাজ করা অপর এক চিকিৎসক শরমা পণ্ডিত জানাচ্ছেন গার্হস্থ্য হিংসা’র বেশ কিছু কারণ রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে মানসিক সমস্যা। উদ্বেগ, বিষণ্নতা, মদ্যপান এবং মাদক নির্ভরতা।  তিনি বলেন, “আমরা অনেক সময় দেখে থাকে সম্পর্কে অনেকেই তার স্বামী অথবা স্ত্রীকে অহেতুক সন্দেহ করেন। এটা তার কাছে একটা মানসিক সমস্যা। অন্যজনের কাছে সেটাই বিরক্তির কারণ। দারিদ্র্য ও বেকারত্ব গার্হস্থ্য হিংসা’র একটি অন্যতম প্রধাণ কারণ”।

একই সঙ্গে তিনি বলেন “শিক্ষার মান গার্হস্থ্য হিংসাকে প্রভাবিত করে। নারীদের প্রতি সম্মান, এবং তাদের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করার কাজ স্বামীদেরও। শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ হয় যা গার্হস্থ্য হিংসা’রুখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আগ্রাসন, রাগ, হতাশা, এবং বিষণ্ণতার পাশাপাশি অল্প বয়সেই মা-বাবা হয়ে যাওয়াও  গার্হস্থ্য হিংসা’র একটি কারণ বলে বিবেচনা করা হয়। এর পাশাপাশি কিছু ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ফ্যাক্টরও কাজ করে। এরাজ্যের প্রতি এক লক্ষ মহিলার মধ্যে ৪১.৫০ জন গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হচ্ছেন। দেশে গার্হস্থ্য হিংসার গড় ২০.৫০ সেখানে রাজ্যে এধরনের ঘটনার গড় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি-৪১.৫০”।

kolkata news Domestic Violence West Bengal NCRB Report
Advertisment