ছুটির 'বাহুল্যে'র প্রতিবাদে এবার পথে নামার সিদ্ধান্ত নিলেন রাজ্যের সরকারি ও সরকার অনুমোদিত স্কুলগুলির শিক্ষকদের একাংশ। যদিও নির্বাচন চলাকালীন এমন উদ্যোগের পিছনে সরকার বিরোধী রাজনীতির ছায়া দেখছেন তৃণমূল ঘনিষ্ঠ শিক্ষক সংগঠনের নেতারা।
আগামী ১৪ মে দুপুরে বিকাশ ভবনের সামনে জমায়েত হবেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলার শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, অভিভাবকদের একাংশ। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, ওই কর্মসূচিতে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক সংগঠনের ব্যানার থাকবে না। তাঁদের অভিযোগ, ৪০ দিন অতিরিক্ত ছুটি দেওয়ার মাধ্যমে রাজ্য সরকার কার্যত চলতি শিক্ষাবর্ষের পঠনপাঠনকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিমত, নির্বাচন চলাকালীন রাজ্যের শিক্ষককুলের এহেন অবস্থান তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়াবে।
প্রসঙ্গত, কেবলমাত্র বিকাশ ভবনে জমায়েতই নয়, ছুটি সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকার ব্যাখ্যা চেয়ে রাজ্যের প্রতিটি জেলার স্কুল পরিদর্শকের কাছে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই শিক্ষকেরা। ইতিমধ্যেই রাজ্যের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরব হয়েছে দুই প্রধান বিরোধী শিক্ষক সংগঠন - সিপিএম প্রভাবিত নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতি (এবিটিএ) এবং এসইউসি প্রভাবিত মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি (এসটিইএ)।
উত্তর ২৪ পরগণার হিঙ্গলগঞ্জের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরি বলেন, "সরকারের এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছি আমরা, শিক্ষকেরা। প্রথমত, সিলেবাস শেষ করা নিয়ে প্রবল সংশয় তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার চেয়েও বড় সমস্যা হলো, রাজ্যের এমন নির্দেশের ফলে কার্যত শিক্ষার অধিকার আইনে যে নিরবচ্ছিন্ন ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে ব্যহত হবে। কারণ, এই মূল্যায়ন শ্রেণিকক্ষ নির্ভর। এছাড়া, মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের পর প্রতি বছর গরমের ছুটিতেই একাদশ শ্রেণির ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়। এবার তা নিয়েও প্রবল সংশয় তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের প্রশ্নগুলির উত্তর পেতেই বিকাশ ভবনে যাচ্ছি। এর সঙ্গে নির্বাচন বা অন্য কোনও রাজনৈতিক বিষয়ের বিন্দুমাত্র সংযোগ নেই।"
স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, এই শিক্ষাবর্ষে গরমের ছুটি দেওয়ার কথা ছিল ১৭ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত। মোট ২৩ দিন। কিন্তু রাজ্য সরকার প্রথমে ঘূর্ণিঝড় ফণী সংক্রান্ত সতর্কতার কথা বলে ছুটি বাড়িয়ে ২ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। পরে জানানো হয়, সম্ভাব্য দাবদাহের কারণেই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে ছুটি বেড়ে হয় মোট ৫৯ দিন।
শিক্ষকদের একাংশের প্রতিবাদের পিছনে অবশ্য রাজনীতির রংই দেখছেন শাসকদল ঘনিষ্ঠ শিক্ষক সংগঠনের নেতারা। তৃণমূল প্রভাবিত মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, "এই শিক্ষকেরা সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে মানবিক বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছেন। রাজ্যে এখন দাবদাহ চলছে। এই অবস্থায় বাচ্চারা স্কুলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। আসলে নির্বাচনের সময় যে কোনওভাবে ইস্যু তৈরি করে সরকারকে বিপাকে ফেলতেই এমন আন্দোলনের উদ্যোগ।" পুলকবাবুর পাল্টা উত্তর, "দাবদাহের জন্য প্রতি বছরই সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের ছুটি দেওয়া হয়। এই বছরও তাই করা যেত। দুমাস ছুটি দিয়ে পঠনপাঠনের ক্ষতি করার প্রয়োজন ছিল না।"
আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিশিষ্টজনদের একাংশ। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, "একজন শিক্ষক হিসেবে আমি সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করছি। জনমোহিনী নীতিতে ভর করে ভোট বাড়ানোর রাজনীতির জাঁতাকলে এই সরকার শিক্ষার সর্বনাশ করছে।"