তৃণমূল বিধায়ক খুনে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। শনিবারের ভর সন্ধ্যাবেলা অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক থেকে ছোড়া গুলিতে নিহত হয়েছেন নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। এই খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন সুজিত মন্ডল এবং কার্তিক মণ্ডল নামের দুই ব্যক্তি। কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে সাসপেন্ড করা হয়েছে হাঁসখালি থানার ওসি অনিন্দ্য বসু এবং সত্যজিৎ বিশ্বাসের দেহরক্ষীকে। এই খুনের ঘটনায় মুকুল রায়-সহ চারজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে সেখানে পৌঁছেছে ফরেনসিক দল। উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রটি পাঠানো হচ্ছে বালিস্টিক পরীক্ষার জন্য। খুনের দিন দেহরক্ষী ছুটিতে ছিলেন। তাঁর ছুটি মঞ্জুর করার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওসি এবং দেহরক্ষী উভয়ের বিরুদ্ধেই বিভাগীয় তদন্ত চলছে।
রবিবার সকালেই নিহত সত্যিজিৎ বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং দলের তরফে নদিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত অনুব্রত মণ্ডল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এদিন জানান, সত্যজিতের খুনের খবরে ভেঙে পড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, বিজেপি যতই বিভেদ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে এ কাজ করে থাকুক, তা কিছুতেই সফল হবে না বলে দাবি পার্থর। অনুব্রত মণ্ডল এদিন দাবি করেন, খুনিদের ফাঁসি দেওয়া হবে। ''তৃণমূলকে এভাবে আটকানো সম্ভব না" বলে মন্তব্য বীরভূমের 'কেষ্ট দা'র।
#UPDATE FIR has been lodged by police in connection with assassination of TMC MLA Satyajit Biswas in Nadia yesterday. Two accused have been arrested and Officer-In-Charge (OC) of Hanskhali Police Station has been suspended. #WestBengal
— ANI (@ANI) February 10, 2019
অন্যদিকে, রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই মৃত্যু হয়েছে সত্যজিৎ বিশ্বাসের। তিনি এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তও দাবি করেছেন। সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রতিক্রিয়া, তৃণমূল শাসনে একজন বিধায়কেরই যদি এই হাল হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?
উল্লেখ্য, শনিবার ভর সন্ধেবেলা দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন নদীয়ার তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। বিধায়ক খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় গোটা এলাকায়। রাতভর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত চলেছে। এরপর নিহত বিধায়কের দেহ জেলা হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে স্থানীয় এলাকায়।
আরও পড়ুন, কলকাতায় গ্রেফতার জেএমবি জঙ্গি মণিরুল ইসলাম
শনিবার সন্ধ্যায় একটি সরস্বতী পূজার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সত্যজিৎবাবু। সেখানেই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। জনবহুল এলাকায় এই বেপরোয়া আক্রমণে হতভম্ব এলাকাবাসী। স্বভাবতই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সারা রাজ্যে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান উতোর। বিধায়ক হিসেবে একজন নিরাপত্তারক্ষী পেতেন সত্যজিৎ বিশ্বাস। গতকাল তিনি ছুটিতে ছিলেন। নিরাপত্তারক্ষীর ছুটির সুযোগ নিয়েই বিধায়ককে গুলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে শনিবার সন্ধে ৭টা থেকে ৮ টার মধ্যে ঘনঘন লোডশেডিং হয়েছে ওই এলাকায়। স্বভাবতই এই খুন পরিকল্পনা মাফিক কি না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে।
সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, মাজদিয়ার ফুলবাড়ি এলাকায় এদিন সত্যজিৎবাবুকে লক্ষ্য করে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি চালায় আততায়ীরা। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে বিধায়ককে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
Satyajit Biswas, Trinamool Congress (TMC) MLA from Krishnaganj, Nadia was shot dead. More details awaited. #WestBengal pic.twitter.com/juppcNvRIm
— ANI (@ANI) February 9, 2019
খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। কী কারণে ওই তৃণমূল বিধায়ককে খুন করা হল, তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কে বা কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, "দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক। গোটা ঘটনার তদন্ত চালানো হচ্ছে।"
এদিন ওই এলাকায় একটি সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন সত্যজিৎ। সেখানেই তাঁকে লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে কয়েকজন দুষ্কৃতী গুলি চালায় বলে খবর।
আরও পড়ুন, শিলংয়ে রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ, সিজিওতে কী করছে সিবিআই?
লোকসভা ভোটের আগে এ রাজ্যে শাসকদলের বিধায়ককে এত দুঃসাহসিকভাবে খুন করার ঘটনায় স্বভাবতই চড়তে শুরু করেছে রাজনৈতিক পারদ। তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই ঘটনার দায় চাপিয়েছেন বিজেপির ওপর। জেলা তৃণমূল নেতা গৌরীশঙ্কর দত্তও দাবি করেছেন, বিধায়ক খুনের ঘটনায় বিজেপি যুক্ত। এদিকে বিজেপি রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু এই খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানান। তাঁর মতে, "তৃণমূলের কোন গোষ্ঠী এই খুনের ঘটনায় জড়িত, সঠিক তদন্ত হলেই তা জানা যাবে।"
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে নদিয়া জেলার কার্যভার সামলানোর যুগ্ম দায়িত্ব দেওয়া হয় দলের বিশ্বস্ত সেনাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। এতদিন এই জেলার দায়িত্ব এককভাবে সামলাচ্ছিলেন তৃণমূল যুবর সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
Read the full story in English