লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও খুব দরকার ছাড়া মানুষ বাইরে বের হননি। রাস্তা-ঘাট শুনশান। বৃহস্পতিবারের মতো এদিনও ছিল বনধের চেহারা। এদিকে শনিবারের লকডাউনে ইএম বাইপাসে বেপরোয়া গাড়ি ধাক্কা মারল দুজন পুলিশ কর্মীকে। করোনা আক্রান্ত হয়ে ফের মৃত্যু কলকাতা পুলিশের এক কর্মীর। অন্যদিকে স্বাস্থ্য় পরীক্ষার জন্য় বন্ধ রাখা হয়েছে ঢাকুরিয়া সেতু।
লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও রাস্তা শুনশান
সাপ্তাহিক লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও বেশ কড়া হাতে রাশ ধরেছে পুলিশ। রাস্তার মোড়ে মোড়ে নাকা চেকিং তো ছিলই, তাছাড়া বেপরোয়া হলেই আইনি ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করেনি। লকডাউন ভঙ্গকারীদের কান ধরে ওঠ-বোস করানোর দৃশ্যও এদিন নজরে পড়েছে। কোথাও আবার লাঠিপেটা করতে হয়েছে পুলিশকে। তবে এদিন হয়রানির শিকার হয়েছেন দমদম বিমান বন্দরের যাত্রীরা। অনেক যাত্রী দমদমে নেতাজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে জানতে পারেন উড়ান ওঠা-নামা বন্ধ রয়েছে। কানেক্টিং ফ্লাইটে যাঁদের যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁরা কলকাতায় নেমেই জানতে পারেন লকডাউনে বিমান বন্ধ।
ইতিমধ্যে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন আক্রান্তের গড়ও ২হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। রাজ্য প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সপ্তাহে দুদিন রাজ্য ব্যাপী লকডাউন হবে। এই সপ্তাহে বৃহস্পতি ও শনিবার লকডাউন ধার্য ছিল। সামনের সপ্তাহে বুধবার লকডাউনের প্রথম দিন ঘোষণা হলেও সোমবার বলা হবে অন্য দিনের কথা। এছাড়া দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের অনেক শহর এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন টানা ৫-৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে। একদিকে কড়া পুলিশি ব্যবস্থাপনা অন্যদিকে সাধারণ মানুষের বড় অংশের করোনা ভীতিতে লকডাউনে অংশগ্রহণে রাজ্যজুড়ে সর্বাত্মক বনধের চেহারা নিয়েছে। তবে কিছু এলাকায় লকডাউন না মেনে আড্ডা চলেছে। টহল দেওয়া পুলিশ কর্মীদের তাদের ধাওয়া করতে দেখা গিয়েছে। শনিবারও বাজার-হাট, দোকান-পাট, অফিস-কাছারী বন্ধ ছিল। খোলা ছিল ওযুধের দোকান। রাস্তা-ঘাট ছিল শুনশান। কলকাতা ও রাজ্যের সর্বত্র রাস্তায় চেকিং চলেছে। এদিনও কলকাতা ও রাজ্যের অন্যত্র ড্রোনের ব্যবহার করেছে পুলিশ। গলির রাস্তায় লকডাউন মানা হচ্ছে কীনা সেদিকে নজর রাখা হচ্ছিল ড্রোনের মাধ্যমে।
আজ রাজ্যের অন্যান্য খবরগুলি পড়ুন নীচে
বেপরোয়া গাড়ি ধাক্কা দিল পুলিশকেই
পঞ্চান্ন গ্রাম ইএম বাইপাসে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় দুজন পুলিশ কর্মী জখম হয়েছে। অভিযোগ, শনিবার পুলিশের গার্ডরেল ভাঙার চেষ্টা করেন ওই গাড়ির চালক। ওই গাড়ি আটাকাতে গেলে পুলিশ কর্মীদের ধাক্কা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। স্থানীয়দের চেষ্টায় তারা ধরা পড়ে যায়। চালক ও দুই আরোহীকে আটক করেছে তিলজলা থানার পুলিশ। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের অভিযোগ, তিনজনই নেশাগ্রস্ত ছিলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেপরোয়া গতিতে গাড়িটি সায়েন্স সিটির দিক থেকে রুবির দিকে যাচ্ছিল। পরমা আইল্যান্ডের কাছে দাঁড়াতে বলা হলে গাড়িটি গতি বাড়িয়ে দেয়। পরমার ট্রাফিক গার্ডে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা এক-দেড় কিলোমিটার দূরের পঞ্চান্ন গ্রাম ট্রাফিককে ওই বেপরোয়া চালানো গাড়িটিকে আটকাতে বলে। এই সময় রাস্তায় গার্ডরেল দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ। গাড়িটি সামনে এগিয়ে তপন দাস নামে এক ট্রাফিক পুলিশকে ধাক্কা দেয়। সেখানে বাধা পেয়ে পিছন দিকে বেপরোয়া গতিতে চালানো শুরু করে। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় পুলিশ কর্মী বাবাই মল্লিককে। গাড়িটিকে আটক করে তিনজনকে তিলজলা থানায় নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, লকডাউনে ফাকা কলকাতার মজা নিতে বেরিয়েছিল দুই যুবক ও এক যুবতী। তাঁরা চরম নেশাগ্রস্ত ছিল বলেও মনে করছে পুলিশ।
আজ রাজ্যের অন্যান্য খবরগুলি পড়ুন নীচে
করোনা আক্রান্ত কনস্টেবলের মৃত্যু
হেস্টিংস থানায় কর্মরত কনস্টেবল কৃষ্ণকান্ত বর্মণের করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল। কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, করোনা-যুদ্ধে একেবারে সামনের সারিতে থেকে লড়ছিলেন কৃষ্ণকান্ত। সম্প্রতি তিনি কোভিড -১৯-এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এই প্রয়াত সহযোদ্ধার পরিবারের হাতে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিমা অনুযায়ী দশ লক্ষ টাকা তুলে দেওয়া হবে শীঘ্রই। শুক্রবারই কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের ইকুইপমেন্ট সেলের অফিসার-ইন-চার্জ ইনস্পেক্টর অভিজ্ঞান মুখার্জির করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়। পুলিশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে।
আজ রাজ্যের অন্যান্য খবরগুলি পড়ুন নীচে
বন্ধ ঢাকুরিয়া ব্রিজ, চলছে স্বাস্থ্য় পরীক্ষা
স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য ৫৬ ঘণ্টা বন্ধ রয়েছে ঢাকুরিয়া ব্রিজ। কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ১০ টা থেকে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ২৭ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে এরই মধ্যে আজ, শনিবার সাপ্তাহিক লকডাউন হওয়ার ফলে অনেকটাই স্বস্তিতে ট্রাফিক পুলিশ। ট্রাফিক জ্যামের কোনও সম্ভাবনা নেই। মাঝে শুধু রবিবার। এই সময় ব্রিজের ওপর সবরকম গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। জানা গিয়েছে, প্রাচীন এই সেতুটির ভারবহণ ক্ষমতা পরীক্ষা করবে কেএমডিএ। তারপর এই ব্রিজটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে রাজ্যের পূর্ত দফতর। বিকল্প রাস্তায় বাস চলাচলের কথা জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। এস১০৬, এস১০১, এস১১০, ৪৫, ২১৮, কেবি ১৭, এস১০৪, এস ৯এ, ১৭বি, ২৪০, ২৩৪, ২৩৩-সহ বিভিন্ন রুটের বাস গড়িয়াহাট, রাসবিহারী অ্যাভেনিউ, এসপি মুখার্জি রোড, প্রিন্স আনোয়ার শাহ, যাদবপুর হয়ে যাতায়াত করবে। এছাড়া যাতায়াত চলবে গড়িয়াহাট, বিজন সেতু, রুবি এবং ইএম বাইপাস হয়ে। ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, গড়িয়া থেকে গোলপার্ক রুটের অটোগুলি চলবে সার্দান অ্যাভেনিউ হয়ে যোধপুর পার্ক দিয়ে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন