করোনায় মৃত্যু হল এক তৃণমূল কাউন্সিলরের। একই দিনে আক্রান্ত হলেন তিনজন তৃণমূল বিধায়ক। এদিন রাজভবনে প্রদীপ প্রজ্বলন করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। এদিনও লকডাউনে কড়া ভূমিকায় দেখা গিয়েছে পুলিশকে। এদিন ভোরে রামপুজো সারলেন হাওড়ার বিজেপি নেতৃত্ব। বিশেষ রামপুজো কুস্তির আখড়ায়।
কাউন্সিলরের মৃত্যু করোনায়, আক্রান্ত তিন
বিধায়ক
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল বিধাননগরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুভাষ বুসর। তিনি মেডিকায় ভর্তি ছিলেন প্রায় দু সপ্তাহ। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়। বুধবার সকালে মৃত্যু হয় এই কাউন্সিলরের। এদিন তিনজন বিধায়ক নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলার বিধায়াক দুলাল দাস, হাওড়ার শিবপুরের বিধায়ক জটু লাহিড়ী ও গাজোলের বিধায়ক দিপালী বিশ্বাসের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। কয়েক দিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন তৃণমূল বিধায়ক দুলাল দাস। এদিন তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এর আগে এই জেলার ফলতার বিধায়ক তমোনাশ ঘোষের করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়। জটু লাহিড়ীকে ভর্তি করা হয়েছে কলকাতার বাইপাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কয়েকদিন আগে প্রয়াত সোমেন মিত্রকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন জটু লাহিড়ী। বিধানসভায় থাকাকালীনই অসুস্থ হয়ে পড়েন জটুবাবু। সেই সময়ে যাঁরা এই প্রবীণ বিধায়কের সংস্পর্শে এসেছিলেন ইতিমধ্যেই তাঁরা হোম আইসোলেশন বা কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নিয়েছেন।
রাজভবনে ভূমি পুজো পালন
এদিন রাজভবনে ভূমিপুজো পালিত হয়। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর সন্ধ্যায় সস্ত্রীক প্রদীপ প্রজ্বলন করেন। ভূমি পুজো গর্বের সঙ্গে উদযাপন করুন, বললেন রাজ্যপাল। রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছেন। টুইটে তিনি বলেছেন, "আজকের এই দিনটির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে এমন ঐতিহাসিক রায়ের জন্য ধন্যবাদ। তোষণের পাকে-চক্করে পরে মমতা সরকার রামমন্দির নিয়ে নীরব হয়ে রয়েছেন। রাজ্যবাসীকে নিজের অবস্থান জানান।" এদিন রাজ্যজুড়ে বিজেপি এই দিনটি পালন করে। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে খন্ডযুদ্ধও বেধে গিয়েছে উৎসব পালনকারীদের সঙ্গে। এদিকে তাবড় বিজেপি নেতৃত্ব শঙ্খ বাজিয়েছে। বাড়িতে প্রদীপ প্রজ্বলন করেছেন। মন্দিরে মন্দিরে পুজো চলেছে।
লকডাউনে রামপুজো নিয়ে উত্তেজনা
রাজ্যে ক্রমশ বেড়ে চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হারও। সাপ্তাহিক লকডাউনে এদিনও কড়া নজরদারি চালায় পুলিশ। রামপুজোকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা যায় রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। এই লকডাউনে এটাই নতুন দৃশ্য। এদিনও সেই পুরনো চিত্র ধরা পড়েছে রাস্তায়। কানধরে ওঠ-বসের ছবিও বাদ যায়নি। লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করার চিরাচরিত দৃশ্যও চোখে পড়ে। কলকাতা ও রাজ্যের অন্যত্র রাস্তা ছিল অনেকটাই শুনশান। তবে অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজোর জন্য বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি বারে বারে আবেদন জানিয়েছিল এদিনের ঘোষিত লকডাউন পরিবর্তন করে অন্যদিন করার জন্য। কিন্তু রাজ্য সরকার কর্ণপাত করেনি তাদের কথায়। যার ফলে রামপুজো ও মিছিলকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু জায়গায় চরম উত্তেজনা দেখা যায়। পুলিশ ও উৎসব পালনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। খড়্গপুরে রামপুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ চলে। ঘটনায় ডিএসপি সুকমল দাস সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন।
লকডাউন এড়িয়ে উৎসব পালন হাওড়ায়
লকডাউন এড়িয়ে রামের পুজো করলেন হাওড়ার বিজেপি নেতৃত্ব। ঘোষণা অনুযায়ী এদিন সকাল ৬টা থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। কিন্তু এদিন ভোরে জেলার বিজেপি নেতৃত্ব হাওড়ার রামরাজাতলার রাম মন্দিরে পূজো-পার্বণ সেরে ফেলেন। পুজো সেরে সকাল ছটার আগেই তাঁরা নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে যান। এমনকী আতসবাজীও ফাটিয়েছেন তাঁরা। জেলা বিজেপি সভাপতি(সদর), সুরজিৎ সাহা বলেন, "ভোর সোয়া চারটে নাগাদ আতসবাজি জ্বালিয়ে হাওড়ার শ্যামাশ্রী সিনেমা হলের সামনে থেকে আমরা দশজন রামরাজাতলা দিকে হাঁটতে শুরু করি। সোয়া ৫ টায় মন্দিরে পৌঁছাই। সেখানে পুজো দিয়ে মন্দিরের বাইরে আসি ৫টা ৩৫ মিনটে। সেখান থেকে বাড়ি পৌঁছাই ৫টা ৫৫ মিনিটে"।
কুস্তির আখড়ায় রামপুজো
একশো বছরের পুরনো আখড়া। গঙ্গার পাড়ে বাবা ছোটেলাল ঘাটের কুস্তির আখড়া। একটা সময়ে দারা সিং এসে কুস্তি লড়ে গিয়েছে। এদিন এখানে রামজির বিশেষ পুজো হয়। তাছাড়া নিত্য রামজি ও হনুমানজির পুজো হয়। প্রায় ৪০-৫০ জন কুস্তিগির প্র্যাকটিস করেন। লকডাউনের সময় আশপাশের কুস্তিগিরর হাজির হয়। এদিন রামপুজো করে নতুন করে আখড়ার কুস্তি শুরু করে।