গিয়েছিলেন সম্ভবত লুকিয়ে গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা করতে। ফিরলেন লাশ হিসেবে, চোর অপবাদ মাথায় নিয়ে গণপ্রহারের শিকার হয়ে। মুর্শিদাবাদ জেলায় নওদা থানার অন্তর্গত রাজপুর গ্রামের ঘটনা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোনাকুঠি গ্রামের বাসিন্দা ২৬ বছর বয়সী রাইহান মন্ডলের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী রাজপুর গ্রামের তোফাজ হোসেনের বাড়ীর মেয়ের বেশ কিছুদিন ধরে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। মেয়েটির পরিবার এই সম্পর্কের বিরুদ্ধে ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাইহান তোফাজ হোসেনের বাড়ীতে প্রবেশ করেন। বাড়ীর লোকেদের অবশ্য অভিযোগ, চুরি করতেই রাইহান এবং তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন বাড়ীতে প্রবেশ করেন। আচমকা বাড়ীর এক গৃহবধূ "চোর" বলে চিৎকার জুড়ে দিলে লোকজন জড়ো হন। শুরু হয়ে যায় জনতার শাসন। বাকিরা কোনওক্রমে প্রাণ নিয়ে পালাতে পারলেও মারের চোটে অচৈতন্য হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রাইহান। তার পরেও রক্তাক্ত অবস্থায় চলতে থাকে গণপিটুনি।
আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদে নাবালিকাকে গণধর্ষণের পর খুনের চেষ্টা
পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা সেখানে কিছুক্ষন পরেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ব্যাপারে অভিযুক্ত তোফাজ হোসেনের বাড়ীর এক সদস্য ওয়াজেল শেখ বলেন, "আমার দাদার বাড়ীতে রাইহান ও তার দলবল চুরির উদ্দশ্যে ঢোকার চেষ্টা করে, বাড়ীর মহিলাদের নজরে এলে তাঁরা আতঙ্কে চিৎকার করেন, গ্রামের মানুষ গভীর রাতেই ছুটে আসেন। এর পর ওদের তাড়া করলে ওরাও মাঠের মধ্যে দিয়ে পালিয়ে যাবার সময় বোমা ছুড়তে থাকে, এমন কী গুলিও ছোড়ে। এর ফলে গ্রামের উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তারপরই এই ঘটনা ঘটে। তবে এর সাথে আমরা কেউ যুক্ত নই।"
পৈশাচিক এই ঘটনার পর থেকে মৃতের গ্রাম সোনাকুঠিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মুর্শিদাবাদে কখনও 'ডাইনি', কখনও 'ছেলেধরা', কখনও নিছক 'পায়রা চোর' সন্দেহে জনতার শাসনে এবং গণপ্রহারে প্রাণ হারাতে হয়েছে মহিলা থেকে শুরু করে যুবককে। নিস্তার মেলেনি কারোর। প্রতিবার কাজ করেছে সেই অজানা সন্দেহই। এবারও ব্যতিক্রম হল না তার।
এই ঘটনায় মৃতের পরিবারের তরফে শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ প্রাথমিকভাবে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে বলে জানা গিয়েছে। এই ব্যাপারে নওদা থানার ওসি শুভাশিষ ঘোষাল বলেন, "পুলিশ অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।" তবে মৃতের পরিবারের দাবি, প্রণয় ঘটিত কারণেই রাইহানকে চুরির "মিথ্যে অভিযোগ" দিয়ে "খুন" করা হয়েছে। এই বিষয়ে মৃতের বাবা মোনায়ব মণ্ডল বলেন, "আমার ছেলের সঙ্গে ওদের মেয়ের ভালোবাসার সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি তোফাজ হোসেনের পরিবার। তাই আগের সেই রাগ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলার জন্যই চোর অপবাদ দিয়ে গণপিটুনি খাইয়েছে।"