ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবিতে উত্তাল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। একটানা ঘেরাও থেকেছেন অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে অধ্যাপকরা। এমনকী, কলকাতা হাইকোর্টে মেডিক্যাল কলেজের অচলাবস্থা নিয়ে দায়ের হয়েছে জনস্বার্থ মামলাও। তবে চিকিৎসক মহলের বড় অংশই চাইছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক। শুধু মেডিক্যাল কলেজ নয়, সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চাইছেন তাঁরা। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশও রাজ্যের সমস্ত কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক, এমনটাই চান।
এই পরিস্থিতিতে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবি থেকে সরে আসতে নারাজ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়ারা। এই কলেজেই পড়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. পুণ্যব্রত গুণ। ১৯৮০-৮১ তে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন তিনি। ১৯৮২-৮৩ তে তিনি ছিলেন সোশ্যাল সেক্রেটারি। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরসের পক্ষে ডা. পুণ্যব্রত গুণ বলেন, 'ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন হওয়া উচিত।'
একসময়ের এই কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সহকারি সাধারণ সম্পাদক তিনি। ডা. পুণ্যব্রত গুণ বলেন, 'অনেক আন্দোলন করে ছাত্র ইউনিয়ন চালু হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা ছিল ইউনিয়নের। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর নির্বাচন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। নির্বাচন চালু করার জন্য আন্দোলন করেছে সেখানকার পড়ুয়ারা। গত ৩০ নভেম্বর অর্ডার বের হয় যে ২২ ডিসেম্বর নির্বাচন হবে। তিন দিনের মধ্যে তার প্রস্তুতি শুরু হবে। তারপরই বিশেষ বৈঠকের পর নির্বাচন হবে না-বলে গত সোমবার জানিয়ে দেওয়া হয়। তারপরই আন্দোলন শুরু হয়।'
ডা. গুণের দাবি, 'নির্বাচন হলে বিরোধীরা ক্ষমতায় আসবে। তার জন্যই নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে।' স্বাস্থ্য পরিষেবা বন্ধ হওয়ার ঘটনাকে একাংশের গটআপ বলেও মনে করছেন ডাক্তার গুণ। এর সঙ্গে ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনকারীরা যুক্ত নয় বলেই তাঁর মত।
আরও পড়ুন- মাছে-ভাতে বাঙালিকে চরম অপমান! পরেশ রাওয়ালকে পারসে-পাবদা-শুঁটকি ‘উপহার’ বাংলা পক্ষর
অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরসের নেতৃত্বও চাইছেন ছাত্র সংসদের নির্বাচন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মানস গুমটা বলেন, 'নির্বাচন অবশ্যই হওয়া উচিত। এই নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। বছরের পর বছর, দিনের পর দিন কোনও কলেজে নির্বাচন হবে না? নির্বাচিত ছাত্র ইউনিয়ন থাকবে না? তাহলে ছাত্রদের ভাল-মন্দ, তাঁদের খেলা-ধূলা, সংস্কৃতি কে দেখবে?'
ডা. গুমটার পরিষ্কার কথা, 'এই ইউনিয়ন তো একটা সাংবিধানিক বডি। কোনও একটা বিশেষ গোষ্ঠী সেই সাংবিধানিক বডি দখল করে বসে থাকবে, এটা তো চলতে পারে না। আমরা সবসময়ই চাই, সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে নির্বাচন হোক।' নির্বাচন না-করার পিছনে মূল কারণ, সরকারপক্ষ হেরে যাবে। আর, নির্বাচন হলে কলেজগুলোয় গন্ডগোল হবে, এটা স্রেফ অজুহাত। এসব অবান্তর কথা।'
মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় নির্বাচন বন্ধ রয়েছে প্রায় পাঁচ বছর। তার মধ্যে দু'বছর কোভিড ইস্যু ছিল। চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশ যেমন নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন। পাশাপাশি, তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ সমস্ত কলেজেই ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করছেন।