ইডি দফতরে হাজিরা এড়ালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন তাঁর এই পদক্ষেপ? মঙ্গলবারই ইডির দফতরে ১৫ পাতার চিঠি দিয়ে তা স্পষ্ট করেছেন তৃণমূলের 'সেকেন্ড-ইন-কমান্ড'।
ইডি-কে চিঠিতে কী লিখেছেন অভিষেক?
দলীয় কর্মসূচি 'নবজোয়ার যাত্রা'য় বিগত দেড় মাস কলকাতার বাইরে রয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তারও প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তিনি মূলত এই দুই বিষয়কেই এদিন তাঁর হাজিরা এড়ানোর কারণ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে ওই চিঠিতে। সেখানে লেখা রয়েছে, 'পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে নিয়ে বর্তমানে রাজ্যব্যাপী যাত্রায় রয়েছি, কলকাতায় নেই আমি। আগামী ৮ জুলাই বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটের ঘোষণা হয়েছে। ফলে আমি সেই ভোটের কাজেও ব্যস্ত রয়েছি। গত কয়েক বছরের নথি আমার থেকে চাওয়া হয়েছে ইডি-র পক্ষ থেকে। সেই তথ্য সংগ্রহে সময় লাগবে।'
চিঠিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁর কাছে যে সব নথি চাওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে গত ২৯ মার্চ একটি সভায় তাঁর বক্তব্যের কোনও সম্পর্ক নেই। এই সংক্রান্ত সব নথি ইতিমধ্যেই সরকারি দফতরে রয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তৃণমূল সাংসদ।তবে, আইন মোতাবেক ইডি-র তদন্তে তিনি সবধরণের সহায়তা করবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত ২৯ মার্চ ধর্মতলায় শহিদ মিনারে দলের ছাত্র-যুবদের সভা থেকে অভিষেক দাবি করেছিলেন যে, হেফাজতে থাকার সময় মদন মিত্র, কুণাল ঘোষকে তাঁর নাম নিতে বলেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এর পর পরেই শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষ দাবি করেন যে, অভিষেকের নাম বলার জন্য তাঁকে 'চাপ' দিচ্ছে ইডি, সিবিআই। এই সংক্রান্ত অভিযোগ জানিয়ে নিম্ন আদালতে চিঠি দেন কুন্তল। পুলিশের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠান কলকাতার হেস্টিংস থানাতেও। তার পর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, প্রয়োজনে সিবিআই বা ইডি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। এই মামলার এজলাস বদলালেও সেই একই নির্দেশ বহাল রাখেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিন্হা। তার পরেই অভিষেককে গত ২০ মে ডেকেছিল সিবিআই। সে দিন সাড়ে ৯ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে। সেই মামলার তদন্তেই এবার অভিষেককে তলব করেছিল ইডি।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই আগেই সংবাদমাধ্যমে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত এই হাজিরা তিনি দেবেন না। তবে ইডিকে ইমেল বা চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাননি। মঙ্গলবার ইডিকে সেই চিঠিও পাঠালেন তিনি।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত ৮ই জুন ইডি-র তরফে অভিষেকের কাছে সমন পৌঁছয়। ১৩ জুন তাঁকে ইডি দফতরে তলব করা হয়েছিল। সকাল ১১টার মধ্যে তাঁর হাজিরা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সেদিনই অভিষেক-জায়া রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিজিও-তে জিজ্ঞাসাবাদ করে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। সেদিনই নদিয়ায় সংবাদমাধ্যমে অভিষেক জানিয়েছিলেন যে, পঞ্চায়েত ভোট না মেটা পর্যন্ত তিনি ইডি দফতরে হাজিরা দিতে পারবেন না।
নদিয়ার 'নবজোয়ার যাত্রা' থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'নবজোয়ার নষ্ট করতে চাইছে বিজেপি। আমার স্ত্রীকে হেনস্থা করা হচ্ছে। নবজোয়ারের যাত্রা থামিয়ে হাজিরা দিতে যাব না। চাকর-বাকর নই যে যতবার ডাকবে ততবার যেতে হবে। আগেই অনুরোধ করেছিলাম যাত্রার মাঝে না ডাকতে। ইডিরও বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। ওদের বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ নেই।'
এবার কী পদক্ষেপ করবে ইডি? সূত্রের খবর, আগামী কেয়েদিনের মধ্যেই পরবর্তী নোটিস পাঠানো হবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছে ফের হাজিরার জন্য।