বিজয়া দশমীর রেশ কাটেনি। রেড রোডে পুজোর কার্নিভালও বাকি। কিন্তু তার আগেই নিজের কালীঘাটের বাড়ি লাগোয়া দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে ইডি তল্লাশি নিয়ে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের টার্গেট করা হচ্ছে বলে দাবি করলেন।
কী বললেন মমতা?
রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে হানা দিয়েছে ইডি। এখনও তল্লাশি জারি রয়েছে। এই প্রসঙ্গেই বৃহস্পতিবার দুপুরে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী। সোচ্চার হলেন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে।
বনমন্ত্রীর বাড়িতে ইডির অভিযানকে ডার্টি গেম' বলে মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, 'আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি। এবার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পুজো সবে শেষ হয়েছে। জেলায় জেলায় আজ কার্নিভাল রয়েছে। সবাই বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। তার মধ্যেই মন্ত্রীদের বাড়িতে হানা দিতে নেমে পড়েছে। প্রত্যেকদিন আমাদের সব মন্ত্রীদের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি করছে। তাহলে সরকারটা বাকি থাকে কেন? এটা ডার্টি গেম। এ ভাবে মুখ বন্ধ করা যাবে না।সুপ্রিম কোর্ট বলেছে উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া কোনও তদন্ত ও তল্লাশি হতে পারে না। তাও গায়ের জোরে কেন্দ্র এটা করাচ্ছে। তল্লাশির নামে শাড়ি, সাজগোজের জিনিসের ছবি তুলছে। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পরিচয়।' তাঁর প্রশ্ন কেন, 'একটাও বিজেপির ডাকাতের বাড়িতে তল্লাশি হচ্ছে না?'
এর আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহব তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের সিবিআই বা ইডি দিয়ে হেনস্থার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী তাঁর পরিবারকেও নিশানা করা হচ্ছে বলেও সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। এবার মমতা বললেন, 'আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে বলছি বলে এক একটা মন্ত্রীর বাড়িতে প্রত্যেকদিন তল্লাশি শুরু করেছে। তাঁদের স্ত্রী, বাচ্চা, বাড়ির লোকদেরও রেহাই দেওয়া হচ্ছে না। এটা কি প্রতিহিংসা নয়? আমি মনে করি এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।'
এরপরই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের শারীরিক অবস্থার প্রসঙ্গ তুলে কড়া হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'বালুর হাই ব্লাড সুগার রয়েছে। তল্লাশির সময় ও যদি মারা যায়, তাহলে আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে এফআইআর করব।'
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের প্রয়াত সাংসদ সুলতান আহমেদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'সুলতান আহমেদের ঠিক এভাবেই মৃত্যু হয়েছিল। এজেন্সির নোটিস পাওয়ার পরই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সুলতান দা। একই কারণে আমাদের সাংসদ ও প্রাক্তন ফুটবলার প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীরও মৃত্যু হয়েছে। ওরা বাইরে এটা বলতে পারেননি।'
মমতার নিশানায় কেন্দ্র
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, 'ওরা তো ইতিহাস বদলে দিচ্ছে। প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। সবকা বিকাশ সবকা সর্বনাশ হচ্ছে। হঠাৎ করে সার্কুলার জারি করা হচ্ছে সব জায়গা থেকে ইন্ডিয়া নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এত ভয় কেন?'
বৃহস্পতিবার সকালে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের অশোক গেহলটের ছেলে বৈভবকে নোটিস পাঠিয়ে তলব করেছে ইডি। তাঁকে শুক্রবার জয়পুর বা দিল্লিতে ইডি অফিসে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি রাজস্থানের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গোবিন্দ সিংয়ের বাড়িতে এ দিন সকাল থেকে তল্লাশি শুরু করেছে ইডি। যা নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'বেছে বেছে সব বিরোধীদের ঘরে এজেন্সি পাঠিয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক ভাবে লড়াই করতে পারছে না, সরকারি অফিসার, এজেন্সিকে লেলিয়ে দিচ্ছে। কত লোককে জেলে ঢোকাবে? ভাবছে কি ভোটের সময় কাউকে বাইরে রাখবে না?'
আরও পড়ুন- জ্যোতিপ্রিয়র বাড়ির সামনে মহানাটক! মিষ্টি হাতে বাড়িতে হাজির সব্যসাচী-সহ দলে দলে কাউন্সিলর