বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যালঘুরা যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তা পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে হারে হারে টের পাচ্ছে বঙ্গ বিজেপি। সংখ্যালঘুদের সমর্থন পেতে এবার ময়দানে নেমে পড়েছে পদ্মশিবির। রাজনৈতিক মহলের মতে, সংখ্যালঘুরাই এরাজ্যে নির্বাচনের অন্যতম ফ্যাক্ট। শুধু দলিত বা আদিবাসী ভোট ব্যাংকের ওপর ভরসা করে যে বঙ্গ জয় সম্ভব নয়, তা বোধগম্য হয়েছে পদ্মশিবিরের। তাই এবারে নেতাদের মুখে সরাসরি সংখ্যালঘুদের আহ্বান শোনা যাচ্ছে বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
বিগত ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোটারদের বৃহদংশ পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল পদ্মশিবির থেকে। পরিসংখ্যানবিদদের একাংশের মতে, সংখ্যালঘুদের ৯৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। অন্য দিকে হিন্দু ভোটের ৫৫ শতাংশ পেয়েছিল বিজেপি। এরাজ্যে কমবেশি ৩৫ শতাংশ রয়েছে সংখ্যালঘু ভোট। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি না হলে এরাজ্যে সার্বিকভাবে নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের জয় দুরূহ ব্যাপার। তাহলে কী এই সারমর্ম বুঝেই সুকান্ত মজুমদার, মিঠুন চক্রবর্তীরা সংখ্যালঘুদের নির্ভয় দিচ্ছেন? আলোচনায় মশগুল বঙ্গ রাজনীতি।
আরও পড়ুন- প্রশাসনিক বৈঠকে মঞ্চে বসলেন না অভিষেক! সরকার-দল পৃথক, প্রমাণে মরিয়া মমতা
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুষ্ঠান, হাওড়া রেল স্টেশনে বন্দে ভারতের সূচনা অনুষ্ঠান। প্রথম অনুষ্ঠানে শশীরের হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, আর হাওড়ার ক্ষেত্রে ডিজিট্যালি হাজির ছিলেন তিনি। দুই অনুষ্ঠানেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে জয় শ্রীরাম স্লোগান উঠেছে। বঙ্গ বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি চার্লস নন্দী বলেছিলেন, ২০২১-এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে জয় শ্রীরাম স্লেগানের ফল ভাল হয়নি। এবারের স্লোগানের বিরোধিতা করেছেন বিজেপির এই সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি। যদিও বিজেপি নেতাদের মুখে তা নিয়ে টু শব্দটি শোনা যায়নি। এবার মোম্বাইয়ের সুপারস্টার তথা বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তী প্রকাশ্যে জানিয়ে দিলেন, সংখ্যালঘুদের ভয়ের কোনও কারণ নেই। তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। অভিজ্ঞ মহলের মতে, মিঠুন চক্রবর্তী মুখে যাই বলুক পেশাদার রাজনীতিক নন। সম্প্রতি মিঠুন অভিনিত বাংলা সিনেমা প্রজাপতি বাজার মাত করে দিয়েছে। সুপারস্টারের সংখ্যালঘুদের প্রতি আবেদন বাড়তি গুরুত্ব পেতে পারে অন্যদের তুলনায়।
এরাজ্যে একমাত্র সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি হলেই বিজেপি নির্বাচনে ভাল ফল করতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ২০২১ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভোট বিজেপির ভাড়ারে গেলেও সংখ্যালঘু ভোট একত্রিত হয়েছিল তৃণমূলের ভোট বাক্সে। বিজেপি সংখ্যালঘু ভোট তো পায়নি পাশাপাশি কংগ্রেস বা সিপিএমও সংখ্যালঘুদের বড় অংশ থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। সেক্ষেত্রে ফায়দা পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। অভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য, বঙ্গে জয় করতে গেলে হয় সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকে ভাগ বসাতে হবে নতুবা তা বিরোধীদের মধ্যে ভাগাভাগি জরুরি। এই সার বুঝে তাই এবার বিজেপি নেতৃত্বই সরাসরি সংখ্যালঘুদের অভয় দিতে ময়দানে নেমে পড়েছেন।